জনসংখ্যা, জনঘনত্ব দুই–ই বেশি, তার পরও এশিয়ায় এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। ফুসফুসকে রক্ষাকারী একটি প্রোটিনের ঘাটতি থাকার কারণেই এশিয়ার থেকে ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকায় করোনাভাইরাস বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়। ভারতীয় ওই গবেষকরা এও জানিয়েছেন কিভাবে ভাইরাসটির মিউট্যান্ট ফর্ম মানুষকে আক্রান্ত করার নতুন নতুন পথ খুঁজে নিচ্ছে।
কল্যানীর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সের গবেষকদের পর্যবেক্ষণ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে করোনার গতি সমান না হওয়ার পিছনে সামাজিক বা শারীরিক কারণের বদলে জৈবিক কারণ রয়েছে। মানবদেহে নিউট্রোফিল ইলাসটেস নামে একটি প্রোটিনই করোনার একটি প্রজাতি (ডি৬১৪জি)-র সংক্রমণ দ্রুত গতিতে ছড়াতে সহায়ক হয়। মানবদেহে নিউট্রোফিল ইলাসটেস-এর উৎপাদন কম হতে থাকলে আলফা-১ অ্যান্টিট্রাইপসিন (এএটি) নামে অন্য একটি প্রোটিন উৎপন্ন হয়। এটির ঘাটতি হলেই মানবকোষে নিউট্রোফিল ইলাসটেস নামে প্রোটিনটির মাত্রা বেড়ে যায়। যা করোনাকে দেহে প্রবেশে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে এই ভাইরাসের প্রজাতি (ডি৬১৪জি)-কে বহুগুণে বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
গবেষকরা বলেছেন, এই ধরণটি তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেশি সময় নিচ্ছে এশিয়াতে। সেখানে ৫০ শতাংশ সংক্রমণ হতে সময় লেগেছে ৫.৫ মাস। ইউরোপে যেখানে লেগেছে ২.১৫ মাস আর নর্থ আমেরিকায় ২.৮৩ মাস। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় প্রতি ১ হাজার ব্যক্তির মধ্যে ৮ জনের এএটি প্রোটিনের ঘাটতি দেখা যায়। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি হাজারে ৫.৪ জনের মধ্যে তা লক্ষ করা গিয়েছে। সিঙ্গাপুরে এই সংখ্যাই হল ২.৫। কিন্তু, স্পেনের মতো ইউরোপীয় দেশে প্রতি হাজারে ৬৭.৩ জনের মধ্যে এটি প্রোটিনের ঘাটতি দেখা গিয়েছে। ব্রিটেনে হাজার প্রতি ৩৪.৬ জনের মধ্যে এই ঘাটতি রয়েছে। ফ্রান্স এবং আমেরিকায় তা হল যথাক্রমে ৫১.৯ ও ২৯ জন।
গবেষকদের মতে, ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকাজুড়ে প্রোটিন আলফা-অ্যান্টি-ট্রিপসিনের(এএটি) ঘাটতিই এর মূল কারণ। তার ফলেই সেখানে এই ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত বিস্তার হয়েছে আর এশিয়ায় একটু কম হয়েছে। ইউরোপীয় ও নর্থ আমেরিকার জনগণের মধ্যে এই প্রোটিনের ঘাটতি বেশি। তবে ঘাটতি কম পূর্ব এশিয়ার জনগণের মধ্যেও। বিশেষ করে প্রবল ঘাটতি দেখা গেছে ইটালি ও স্পেন এর বাসিন্দাদের মধ্যে। এই প্রোটিনের অভাব নিউট্রোফিল ইলাস্টেজ অণুর পক্ষে ভাইরাসের বিস্তারের ক্ষেত্রগুলিতে কাজ করা আরও সহজ করে তোলে যার ফলস্বরূপ এই মিউট্যান্টের দ্রুততম বিস্তার ঘটে।
তবে এসব উপসংহার নিশ্চিত করতে আরো কিছু ল্যাবে তৈরি সেলের উপর গবেষণা দরকার আছে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে এএটি সরবরাহের বিষয়ে ভাবতে পারলেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ সহজ হবে।
এদিকে নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা পৃথিবীতে আরো প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ মারা গেছেন। একই সময়ে নতুন করে পৌনে ৪ লাখ মানুষের শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার’র তথ্য মতে, আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে করোনায় আক্রান্ত বেড়ে ১০ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার ৯০৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ২৪ লাখ ৫ হাজার ৩৮৮ জন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ৮ কোটি ১২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৮ জন করোনারোগী। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ২ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ৫০ জন আক্রান্ত, যাদের মধ্যে ৯৮ হাজার ৬৮৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১৫০
আপনার মতামত জানানঃ