বাবার মৃত্যু সংবাদ শুনে দেশে ফিরতে না ফিরতেই বিমান থেকে নামার সাথে সাথে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন পলাতক আসামি সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার। গ্রেপ্তারের পরপরই তাকে আদালতে দেওয়া হয়। পরে আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেন। আজ শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালত জামিনের আদেশ দেন।
শুক্রবার দুপুরে গুলশান থানায় ওই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। তবে রন হক সিকদারকে আদালতে হাজির করা হয়নি। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী কে এম ফুরকান ও শ্রী প্রাণনাথ জামিনের আবেদন করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিনের এ আদেশ দেন।
আসামির পক্ষের আইনজীবী ড. সাইফুল ইসলাম এবং একেএম ফোরকান আলী বলেন, সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান রন হকের বাবা জয়নুল হক সিকদার। তিনি দীর্ঘদিন যাবত বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মরদেহ আজ বেলা ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে উড়োজাহাজ যোগে ঢাকায় পৌঁছবে। পিতার জানাজায় অংশগ্রহণ করার জন্য তিনি অনুকম্পা চান। আসামির পিতা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন ছিলেন এবং একজন সম্মুখসারির বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আসামি আদালতের অনুকম্পা পেতে পারেন।
তারা বলেন, মামলাটি পূর্ব পরিকল্পিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক। এজাহারে নাম থাকলেও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। তার জামিন প্রার্থনা করছি। জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষে হেমায়েত উদ্দিন খান (হিরণ) বলেন, তার (আসামির) বাবা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। তিনি মারা গেছেন। সেক্ষেত্রে তার ছেলের জামিনের বিষয়টি আপনার (বিচারকের) বিবেচনা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দীন খান হিরণ জানান, “পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় আগামী ১০ই মার্চ পর্যন্ত রন হক সিকদারের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।”
বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প গোষ্ঠী সিকদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার গত বুধবার দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান৷ বাবার মৃত্যুর কারণে রন হক সিকদার ঢাকায় আসেন। একটি হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি হওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক রন ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া এবং অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে অপহরণ করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গত বছর ১৯ মে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়৷ গত ২৫ মে সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দুই ভাইয়ের ব্যাংককে পাড়ি জমানোর খবর প্রকাশ হয়৷ সে খবরে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রন হক সিকদারের একটি গাড়ি জব্দ করে৷
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, গত ৭ মে রন ও দিপু এক্সিম ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসনেকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বন্দী করে রাখেন। তাদের গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়।
এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নির্যাতন করা হয়েছে, উল্লেখ করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, পরে সাদা কাগজে সই নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সিকদার গ্রুপ ব্যাংকটির কাছে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব দিলে এর বিপরীতে গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি পরিদর্শনে যান ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। সে সময় এ ঘটনা ঘটে।
মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্রুপের এমডির দাবির তুলনায় বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য কম ছিল। এরপর ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটি অ্যাপার্টমেন্টে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তাদের গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয় ও সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়।
করোনার কারণে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই গত ২৫ মে ব্যক্তিগত জেট বিমানে ঢাকা ছেড়ে ব্যাংকক চলে যান দুই ভাই। এরপর সেখান থেকে তারা আগাম জামিনের আবেদন করেন।
এরপর জুলাই মাসে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে জামিন আবেদন’ করার কারণে সিকদার গ্রুপের মালিক দুই ভাইকে ১০ হাজার পিপিই জরিমানা করে হাইকোর্টের একটি ভার্চুয়াল বেঞ্চ। পিপিইগুলো প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২২০৩
আপনার মতামত জানানঃ