সিকদার গ্রুপের মালিক জয়নুল হক সিকদারের ছেলে এবং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সিরাজুল ইসলাম। মামলার আসামি হওয়ার পর থেকে এতোদিন পলাতক ছিলেন রন হক সিকদার। বাবার মৃত্যু সংবাদে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। ঢাকায় বিমানবন্দরে নেমেই গ্রেপ্তার হন রন হক শিকদার। আজ শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ডিবির গুলশান বিভাগের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।
ডিবির অতিরিক্ত উপ কমিশনার গোলাম সাকলায়েন বলেন, ‘এক্সিম ব্যাংকের করা একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এই মামলার অপর আসামি রন হক সিকদারের ভাই দিপু হক সিকদার দেশে ফেরেননি। এ কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘তিনি দুবাই থেকে আজ সকালে বাংলাদেশে পৌঁছান। তার বাবার মারা যাওয়ার খবর শুনে তিনি ঢাকায় এসেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পরই তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মুশফিক বলেন, ‘আজ সকালে বিমানবন্দরে নামার পরই পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল রন হক সিকদারকে গ্রেপ্তার করে।’
এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সিকদার গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গত ১৯ মে মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, গত ৭ মে রন ও দিপু এক্সিম ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসনেকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বন্দি করে রাখেন। তাদেরকে গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়।
এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নির্যাতন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, পরে সাদা কাগজে সই নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সিকদার গ্রুপ ব্যাংকটির কাছে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব দিলে এর বিপরীতে গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি পরিদর্শনে যান ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। সেসময় এ ঘটনা ঘটে।
মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্রুপের এমডির দাবি তুলনায় বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য কম ছিল। এরপর ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটি অ্যাপার্টমেন্টে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তাদের গুলি করে হত্যাচেষ্টা করা হয় ও সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়।
করোনার কারণে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই গত ২৫ মে ব্যক্তিগত জেট বিমানে ঢাকা ছেড়ে ব্যাংকক চলে যান দুই ভাই। এরপর সেখান থেকে তারা আগাম জামিনের আবেদন করেন।
এরপর জুলাই মাসে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে জামিন আবেদন’ করার কারণে সিকদার গ্রুপের মালিক দুই ভাইকে ১০ হাজার পিপিই জরিমানা করে হাইকোর্টের একটি ভার্চুয়াল বেঞ্চ। পিপিইগুলো প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
দেশের অন্যতম শিল্প গোষ্ঠী সিকদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার বুধবার দুপুরে দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বাদ জুম্মা তার জানাযা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
জয়নুল হক সিকদারের ছেলেদের মধ্যে রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার এ গ্রুপের পরিচালক। আর মেয়ে পারভীন হক সিকদার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য।
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের গড়া সিকদার গ্রুপের ব্যবসা ছড়িয়ে আছে ব্যাংক ও বীমা, বিদ্যুৎ, ইকনোমিক জোন, এভিয়েশন, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মত নানা খাতে।
এর সহযোগী কোম্পানির মধ্যে রয়েছে পাওয়ার প্যাক পোর্টস, পাওয়ার প্যাক ইকনোমিক জোন, সিকদার ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস, সিকদার রিয়েল এস্টেট ও মাল্টিপ্লেক্স হোল্ডিংস।
কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠান করেছেন জয়নুল হক সিকদার। ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ পোস্ট সিকদার গ্রুপেরই একটি প্রকাশনা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৩
আপনার মতামত জানানঃ