কানাডা সরকার সম্প্রতি ১৩টি চরমপন্থী গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে তালিকা প্রস্তুত করেছে। তালিকায় ইসলামিক স্টেট বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, এই গোষ্ঠীটি আইএস’র বাংলাদেশি শাখা সংগঠন। তবে বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- বাংলাদেশে এই নামে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নেই।
বিবিসি সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের কয়েকটি দেশের মতো কানাডাতেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি অন্যতম উপায় হলো ক্রিমিনাল কোড বা চরমপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠীর নাম তালিকাবদ্ধ করা।
দেশটির সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কানাডার নাগরিকদের প্রত্যাশা যে তাদের সরকার দেশটির মূল্যবোধ, অধিকার এবং স্বাধীনচেতা বৈশিষ্ট্যকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এর অংশ হিসেবেই এবার ১৩টি চরমপন্থী গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করে এই তালিকা প্রস্তুত করেছে কানাডার সরকার। এ নিয়ে তাদের ক্রিমিনাল কোডে মোট ৭৩টি নাম সংযুক্ত হল।
কানাডার ওই তালিকায় আইএস সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গ্রুপগুলো হলো – ইসলামিক স্টেট ইস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স, ইসলামিক স্টেট ইন গ্রেটার সাহারা, ইসলামিক স্টেট ইন লিবিয়া, ইসলামিক স্টেট ইন ইস্ট এশিয়া।
নতুন তালিকায় আইএস এর পাঁচটি সহযোগী গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি হল – ইসলামিক স্টেট বাংলাদেশ।
ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বিবিসিকে জানান, ইসলামিক স্টেট বাংলাদেশ নামে বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নেই। এজন্য কানাডার ওই তালিকার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ওই বিবৃতিতে ইসলামিক স্টেট বাংলাদেশকে আইএসের শাখা সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হলেও সাইফুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে আইএস বা এর কোন সহযোগী সংগঠন নেই। তবে, আইএস এর আদর্শে অনুপ্রাণিত একটি অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী সংগঠন আছে, যেটাকে নব্য জেএমবি বলা হয়। কিন্তু ইসলামিক স্টেট বাংলাদেশ বিষয়ে বা আইএস-এর সাথে এমন কোন গোষ্ঠীর যোগাযোগ আছে কিনা, সেটা আমাদের জানা নেই।
এই গোষ্ঠীগুলোর সাম্প্রতিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আইনগত উপায়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, যারা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের পক্ষে জেনেশুনে কাজ করেছে, সহযোগিতা বা মদদ যুগিয়েছে, নির্দেশনা দিয়েছে তাদেরকেই এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কানাডায় কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই তালিকার কারও সাথে জেনেশুনে অর্থ-সম্পদ লেনদেন করলে সেটা গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
কানাডার এই সন্ত্রাসী তালিকা প্রস্তুত করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এতে নতুন নাম শুধুমাত্র তখনই যুক্ত হয় যখন এর বিরুদ্ধে আইনগত প্রমাণ মেলে। প্রতি পাঁচ বছর পর পর এই তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা হয় যে এই তালিকায় কারও নাম থাকা উচিত কি না।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন জঙ্গি হামলা ও হত্যার দায় স্বীকার করে আইএস-এর পক্ষ থেকে বার্তা পাঠানো হলেও সরকার ও পুলিশ সবসময়ই সে দাবি নাকচ করে আসছে৷ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ভিন্ন মতাবলম্বীরা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন৷ সে বছরের ২৮শে সেপ্টেম্বর গুলশানে এক ইটালীয় এনজিওকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ এর পাঁচ দিনের মাথায় রংপুরের এক গ্রামে একই কায়দায় খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও৷ দু’টি ঘটনার পরই আইএস (ইসলামিক স্টেট) হত্যার দায় স্বীকার করে বলে খবর দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’৷
এরপর ২০১৬ সালের ১ জুলাই শুলশানের হোলি আর্টিজান ক্যাফেতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ অন্তত ২২ জন নিহত হন৷
এই ঘটনার তদন্তে গিয়ে পুলিশ সন্দেহভাজন হামলার হোতাদের চিহ্নিত করার পর বলেছিল, তারা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ-জেএমবির নতুন সংস্করণ ‘নব্য জেএমবি’৷
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৬৩০
আপনার মতামত জানানঃ