পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ বাদেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে উদ্দেশ্যমূলক গ্রেপ্তারের অভিযোগও রয়েছে। কোনো মামলা নেই, এমন সাদাসিধা লোকজনকেও গ্রেপ্তার করার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে মজনু মিয়া নামে এক ইট-বালু ব্যবসায়ীকে হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। রাস্তা থেকে তুলে নেয়ার তিন দিন পর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার(০৪ ফেব্রু) বেলা ১১টায় সিরাজগঞ্জ শহরের এসএস রোডের নিউজ হোম হল রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী ভানু খাতুন।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মারফতে জানা যায়, সংবাদ সম্মেলনে ভানু খাতুন জানান, আমার স্বামী মজনু মিয়া একজন ইট-বালু ব্যবসায়ী। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সমেসপুর হাট বাসস্ট্যান্ড ওয়াপদা বাঁধের ওপর থেকে বেলকুচি থানার এসআই জয়দেব ও নুর আলম আমার স্বামীকে জোরপূর্বক ধরে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে অনেক লোক সমাগম হয়। এ সময় বেলকুচি থানা থেকে পুলিশের একটি গাড়ি আসে এবং সবার উপস্থিতিতে থানায় নিয়ে যায়। এর তিনদিন পর মিথ্যা অস্ত্র ও হত্যা মামলায় জড়িয়ে আমার স্বামীকে কোর্টে পাঠানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভানু খাতুন বলেন, আমি, আমার মামা শ্বশুর নুরুল ইসলাম এবং রাজাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বর আশরাফুল আলম আটকের দিন বিকালে বেলকুচি থানায় উপস্থিত হয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে দেখা করি। এসময় এসআই নুর আলম জানান, আমার স্বামীকে একটি মামলায় কোর্টে চালান দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এরপর ৩১ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে আমি, আমার বড় মেয়ে শিমু খাতুন ও আমার মামা শ্বশুর নুরুল ইসলাম খাবার নিয়ে থানায় উপস্থিত হই। তখন এসআই নুর আলম বলেন, একটু পরে কোর্টে চালান দেয়া হবে। পরে আমরা কোর্টে গিয়ে জানতে পারি, আমার স্বামীকে কোর্টে চালান দেয়া হয়নি। কোর্ট থেকে ফিরে সন্ধ্যায় থানায় গিয়ে আমার স্বামীকে খাবার দিয়ে আসি।
ভানু খাতুন বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে থানায় গিয়ে এসআই নুর আলমকে আমরা বলি আমার স্বামীকে চালান দিয়ে দেন। এতে এসআই বলেন, আজই কোর্টে চালান করা হবে। পরে কোর্টে গিয়ে দেখি আমার স্বামীকে এবারও চালান করা হয়নি। ২ ফেব্রুয়ারি আমরা জানতে পারি, আমার স্বামীকে ১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে সমেসপুর উত্তরপাড়া গ্রামের কালভার্টের ওপরে ঘটনা দেখিয়ে একটি অস্ত্র ও হত্যা মামলায় তাকে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। অথচ আমার স্বামীর বিরুদ্ধে পূর্বের কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই।
এসময় ভানু খাতুন মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা, এস আই জয়দেব, এসআই নুর আলম, এসআই এনামুল হক, এসআই হাসানুর রহমান, এএসআই (নি.) বদরুল হাসান ও গাড়িচালক উত্তমের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে বেলকুচি থানার ওসি গোলাম মোস্তফার সঙ্গে ওই দৈনিক যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি থানার বাহিরে রয়েছি। মজনু মিয়াকে কত তারিখে আটক করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে জানান, কাগজপত্র না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে নিরপরাধীকে গ্রেপ্তার করার নজির প্রায় থানাতেই ঘটে থাকে। এর কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারও ইশারাতে এমনটি হয়ে থাকে অথবা অর্থের বিনিময়ে হয়রানি করার জন্য এমনটি করে থাকে পুলিশ। স্থানীয় কারও সাথে পূর্ব শত্রুতার জের থেকে পুলিশকে টাকা দিয়ে তার/তাদের প্রতিপক্ষকে গ্রেপ্তার করে থাকে। অথবা পুলিশকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেও পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুরে নেওয়ার মত ঘটনাও ঘটে থাকে। নিরপরাধীকে পুলিশ সাধারণত হয়রানি করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র মামলা, মাদক মামলা, ধর্ষণ মামলা ইত্যাদি মামলা সুবিধামতো সাজিয়ে দিয়ে থাকে বলে মনে করেন তারা। তবে উক্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের ব্যাপারে যে পুলিশ সোচ্চার থাকে, এমনটি নয়। বরং তাদের সাথে পুলিশের এক গোপন সম্পর্ক থাকে বলে মনে করেন তারা। এজন্য রাষ্ট্রে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি বই কমার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা। একইসাথে গ্রেপ্তারকৃত যদি আসলেই অপরাধী হয়ে থাকে তবে শীঘ্রই আদালতে পেশ করার ব্যবস্থা করার দাবিও জানান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯০২
আপনার মতামত জানানঃ