সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্পে ইতোমধ্যে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে সমালোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। বরাদ্দে অনিয়ম, ইট বালু সিমেন্ট পরিমাণে কম ও নিম্নমানের দেওয়ায় ধ্বসে পড়া, প্রকল্পের অর্থে লুটপাট ইত্যাদিসহ বহু অভিযোগই নিয়মিত আসছে। স্বাভাবিকভাবেই আশা করা গিয়েছিল, যারা প্রকৃতই এমন গৃহ পাওয়ার যোগ্য, তারাই এই সুবিধা ভোগ করবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশেই এসব ঘর নির্মাণ নিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। হতদরিদ্রদের ঘর কোনো কোনো স্থানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, তাদের আত্মীয়স্বজন ও এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনেকে বরাদ্দ নিয়েছেন। ফলে দেশের গৃহহীন দরিদ্র মানুষের মাথা গোঁজার যে সুযোগ তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে চলেছে। এরই মধ্যে শোনা গেলো চাঁদপুরে গৃহহীনদের জন্য নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্পে লুট চলছে। চলছে প্রকল্পের টিন চুরির একেরপর এক ঘটনা। অথচ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসন কেউ টের পাচ্ছে না!
এর মধ্যে চুরি যাওয়া বেশকিছু টিন এলাকার একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে পুকুরে আরো টিন আছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে আজ বৃহস্পতিবার(০৪ ফেব্রু) বিকেল থেকে সেচ পাম্প বসিয়ে অভিযান শুরু করবে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নে গৃহহীনদের জন্য নতুন গৃহনির্মাণ করা হচ্ছে।
এর মধ্যে সেসব গৃহের চালা দেওয়ার জন্য টিন মজুত করা হয়। কিন্তু গত কয়েক দিন আগে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা কয়েকশ টিন চুরি করে নিয়ে যায়। আর চুরি হওয়া সেই টিনের ২৯টি গতকাল বুধবার বিকেলে ওই ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের গাজী বাড়ির পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খানজাহান আলী কালু পাটোয়ারী ঘটনা স্বীকার করে জানান, চুরি হওয়া টিন উদ্ধারে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তবে কীভাবে টিনগুলো চুরি হয়েছে তা জানাতে পারেননি চেয়ারম্যান।
অন্যদিকে, চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. নাসিম উদ্দিন জানান, কী পরিমাণ টিন চুরি হয়েছে তা জানার জন্য পুলিশ তদন্ত ও অভিযানে নেমেছে। একই সঙ্গে চুরির ঘটনায় কারা জড়িত তাও খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ জানিয়েছে, আজ বিকেল থেকে অভিযান শুরু করবে পুলিশ। এসময় বাখরপুর গ্রামের যে বাড়ির পুকুরে টিন পাওয়া গেছে, সেখানে সেচ পাম্প বসানো হবে এবং পুকুরের পানি কমিয়ে চুরি যাওয়া অবশিষ্ট আরো টিন উদ্ধার করা হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘিরে যে অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ আসে তা অত্যন্তই নিন্দনীয়। তবে গরিবের হক মেরে খাওয়ার ব্যাপারের স্থানীয় প্রভাবশালীদের তেমন কোনো গ্লানি কাজ করে না। প্রশাসনও তেমন ভূমিকা রাখতে পারে না। প্রকল্পের ইট সিমেন্ট বালু নিম্মমানের ও কম দেওয়া, টিন চুরি হয়ে যাওয়া, এভাবেই আশ্রয়ণ প্রকল্প জরাজীর্ণ হয়ে আছে। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা আরো জোরদার করার আহ্বান জানান।
এসডব্লিউ/কেকে/কেএইচ/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ