
সাভারের একসময় কোলাহলময় একটি গার্মেন্টস এলাকার এখন চিত্র পাল্টে গেছে। বড় ফটকের বাইরে ঝুলছে মরিচা ধরা তালা, ভেতরে অন্ধকার সিঁড়ি আর ফাঁকা তলা। কয়েক মাস আগেও যেখানে লাঞ্চব্রেকে গমগম করত শ্রমিকদের হাসি–কথা, এখন সেখানে শুধু বাতাসের শব্দ আর ইটের গায়ে লাগানো পুরোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছেঁড়া কাগজ। দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে একের পর এক কারখানা বন্ধ হওয়ার এই দৃশ্য শুধু কোনো শিল্প এলাকার গল্প নয়—এটি বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের প্রধান উৎস, তৈরি পোশাকশিল্পের এক অনিশ্চিত সীমানায় পৌঁছে যাওয়ার ছবি।
গত ১৪ মাসে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৩৫৩টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে—এর মধ্যে কিছু স্থায়ী, কিছু অস্থায়ী। এর সঙ্গে জুড়ে আছে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ জন মানুষের নাম, যাদের আরেক নাম আজ “বেকার শ্রমিক”। সংখ্যা হিসেবে এই পরিসংখ্যান হয়তো কাগজে–কলমে একটি তথ্য, কিন্তু প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে এক একটি সংসার, অর্ধেক ভাঙা শিক্ষাজীবন, থমকে যাওয়া চিকিৎসা, বন্ধ হয়ে যাওয়া বাড়িভাড়া আর গ্রামে ফিরে যাওয়ার অনিচ্ছাকৃত স্বীকারোক্তি। বিশেষ করে সাভারে ২১৪টি কারখানা বন্ধ হওয়া—যার মধ্যে ১২২টি স্থায়ীভাবে—এই এলাকার চেহারাই বদলে দিয়েছে। ছেইন অ্যাপারেলস, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, সাফওয়ান আউটারওয়্যারের মতো বড় কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার অর্থ শুধু হাজার হাজার শ্রমিকের কাজ হারানো নয়; এর মানে আশপাশের দোকান, স্টল, বাসা–বাড়ি, পরিবহন—সব মিলিয়ে এক পুরো স্থানীয় অর্থনীতির কাঁপন ধরা।
বিপরীত চিত্রও আছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সার্বিক রপ্তানিতে এখনো সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধি রয়েছে। বছরের শুরুতে জুলাই মাসে আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। তারপর টানা তিন মাস সেই প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমেছে, সবশেষ অক্টোবরে রপ্তানি কমেছে সাত শতাংশেরও বেশি। ডলারের হিসাবে ৫১ কোটি ডলার কম রপ্তানি মানে টাকার হিসাবে ৬ হাজার কোটির বেশি ঘাটতি। এই বৈপরীত্য অনেক প্রশ্নই সামনে আনে—একদিকে কারখানা বন্ধ, শ্রমিক বেকার; অন্যদিকে আবার বছর–ওভার–ইয়ার হিসাব করলে সামগ্রিক রপ্তানিতে এখনও সামান্য হলেও প্রবৃদ্ধি। তাহলে সংকটটা কোথায়?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমেই ধরা পড়ে গার্মেন্টসশিল্পের ভেতরের অসম বাস্তবতা—বড় আর ছোট কারখানার মধ্যে ব্যবধান। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান বাবু নিজেও স্বীকার করছেন, “আমরা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি,” যদিও তাঁর ভাষায় “একেবারে খুব খারাপ অবস্থায় চলে গেছি, বিষয়টি এমন না।” তাঁর কথায় বোঝা যায়, সামগ্রিকভাবে খাতটি টিকে আছে বড় এবং তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী কারখানাগুলোর ওপর ভর করে। বড় কারখানাগুলো ক্রেতা–বৈচিত্র্য, কমপ্লায়েন্স, ব্যাংক–সাহায্য, প্রযুক্তি ব্যবহার—সবদিক থেকেই এগিয়ে থাকার কারণে অর্ডার ধরে রাখতে পারছে। বিপরীতে, ছোট এবং মাঝারি কারখানাগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত—তাদের একটা অংশ হয়তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আর রপ্তানি অঙ্কের বড় অংশ ধরে রাখছে শক্তিশালী কয়েকশ প্রতিষ্ঠান।
এই বাস্তবতার পেছনে শুধু বৈশ্বিক বাজার নয়, দেশীয় রাজনীতিও বড় ভূমিকা রাখছে। বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি এ বি এম শামসুদ্দিন খোলাসা করেই বলছেন, বায়াররা এখন “নির্বাচিত সরকারের দিকে চেয়ে বসে আছে”। অর্থাৎ, বর্তমান অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার স্থায়িত্ব, নীতির ধারাবাহিকতা আর রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে ক্রেতাদের সংশয় আছে। বড় ক্রেতারা দীর্ঘমেয়াদি অর্ডারের আগে দেখতে চাইছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। ছোট কারখানাগুলোর জন্য এটি ডাবল ধাক্কা—একদিকে আগের মতো অর্ডার নেই, অন্যদিকে ব্যাংকঋণ, গ্যাস–বিদ্যুৎ, শ্রমখরচ—সব দায়িত্বই একই রকম বা তার চেয়ে বেশি।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ নিয়ে মালিক পক্ষের উদ্বেগ। সরকার এটিকে শ্রমিক–মালিক উভয়ের অধিকার রক্ষার, আধুনিক শ্রমবাজার তৈরির একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখাচ্ছে; কিন্তু বিজিএমইএ বলছে, আইনটি নাকি “ভারসাম্যহীন” ও “অযৌক্তিক”। বিশেষ করে ২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিধানকে মালিকেরা দেখছেন নতুন ধরনের অস্থিরতার ঝুঁকি হিসেবে। তাঁদের যুক্তি—মাত্র ২০ জন দিয়ে ইউনিয়ন করলে এদের অনেকেই কারখানাভিত্তিক পেশাদার কর্মী না হয়ে বাইরের রাজনীতি–নির্ভর নেতৃত্ব হতে পারে, যা ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি করবে, ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ওপর চাপ বাড়াবে। এই যুক্তির ভেতরে অবশ্যই মালিক পক্ষের স্বার্থবোধ আছে, তবে একে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, অপ্রস্তুত কোনো কারখানায় বারবার অনিয়ন্ত্রিত ধর্মঘট, রাস্তায় সংঘর্ষ বা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে যে ক্ষতি হয়, তা শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের ওপরই গিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা একই আইন ও বাস্তবতাকে দেখছেন ঠিক উল্টো চোখে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদারের ভাষ্য, বর্তমান সরকারের আমলে দুই থেকে তিন লাখ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন, চারজন শ্রমিক গুলিতে নিহত হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ—সরকার শ্রমিকদের বেতন–ভাতা ও অধিকার নিশ্চিত না করে উল্টো ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমকেই সীমিত বা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। বেতন বাড়ানোর আন্দোলনে গুলি, মামলা, হয়রানি—এসব মিলিয়ে শ্রমিকদের কাছে এই মুহূর্তে “আইন” মানে প্রাকটিক্যাল লাইফে খুব একটা নিরাপত্তা নয়, বরং ‘রিস্ক’। তাঁরা বলছেন, গার্মেন্টসশিল্পে শ্রমিকের ভাগ্য অতীতের মতোই আটকে আছে—অভ্যুত্থানের সময় শ্রমিকেরা রাজপথে নেমেও বৈষম্য–নিরসনের যে স্বপ্ন দেখেছিল, তার বাস্তব প্রতিফলন এখনো চোখে পড়ছে না।
এখানেই এসে প্রকটভাবে ধরা পড়ে মালিক–শ্রমিক–রাষ্ট্রের ত্রিভুজ সম্পর্কের দুর্বলতা। মালিকেরা মনে করছেন, একতরফা শ্রম আইন সংশোধন শিল্পকে অস্থির করবে, বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করবে। শ্রমিকেরা অভিযোগ করছেন, আইন পরিবর্তন মানে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিকের কোনো বাস্তব পরিবর্তন হলো না, বরং বেকারত্বই বাড়ছে। আর সরকার কখনো বলছে, নন–কমপ্লায়েন্স কারখানা বন্ধ হওয়া খারাপ কিছু নয়—এটা নাকি টেকসই শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ‘ফিল্টার’; আবার কখনো বলছে, ট্রেড ইউনিয়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার আরও প্রতিষ্ঠিত হবে। তিন পক্ষের তিন ভিন্ন বয়ানের মাঝে কোথাও গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃত সংলাপ, যেখানে বসে টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার কথা ছিল।
বিজিএমইএর সভাপতির বক্তব্যেও সেই মিশ্র বাস্তবতার প্রতিফলন আছে। তিনি একদিকে স্বীকার করছেন, “অধিক ভালো করার সুযোগ ছিল”—বিশেষ করে চীন–ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে। সেই শুল্ক–যুদ্ধে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প বেশি অর্ডার টানতে পারত, কিছুটা করেছে হয়তো, কিন্তু সম্ভাবনার পুরোটা কাজে লাগাতে পারেনি। অন্যদিকে তিনি এটাও দেখাতে চাইছেন, এখনো খাতটি দাঁড়িয়ে আছে; সব বন্ধ হয়ে যায়নি, কিছু বন্ধ হওয়া স্বাভাবিক ‘শনিং প্রক্রিয়া’। অর্থাৎ, যে কারখানা টিকে থাকার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি—কমপ্লায়েন্স, প্রোডাক্টিভিটি, ফিন্যান্স—তাদের বিদায় নিয়ে নেওয়াকেই শিল্প–পরিস্কার হিসেবে দেখতে তার আপত্তি নেই।
কিন্তু মাঠের চিত্রে এই ‘শোধন প্রক্রিয়া’র মানবিক মূল্য অনেক বেশি। কল্পনা আখতার বা জলি তালুকদারের মতো শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য থেকে যে চিত্র উঠে আসে, তা হলো—বেকার হওয়া শ্রমিকদের বড় অংশই কোনো ধরনের সামাজিক সুরক্ষা বা বিকল্প কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা ছাড়াই হঠাৎ এক ধরনের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ গ্রামে ফিরে গিয়ে দিনমজুরি করছেন, কেউ অনিয়মিত ছোটখাটো কাজে ঢুকেছেন, কেউ আবার মাসের পর মাস কাজ না পেয়ে পরিবারসহ ধারের বোঝা বহন করছেন। নতুন কারখানা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে পুরোনো সব শ্রমিকের পুনর্বাসন হচ্ছে না; অনেক সময় নতুন কারখানায় নতুন করে ‘তরুণ, কম মজুরির’ শ্রমিক নেওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়, ফলে মাঝবয়সী অভিজ্ঞ শ্রমিক ছিটকে পড়ছেন প্রতিযোগিতা থেকে।
অর্থনীতির বৃহত্তর ছবিতে এই সংকটকে অনেকে দেখছেন এক ধরনের ‘রিশেপিং’ হিসেবে। সিপিডির ড. গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মালিকরা যতটা খারাপ পরিস্থিতির কথা বলছেন, রপ্তানি সূচক ততটা খারাপ না—দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি থেকে এখন এক অঙ্কে নামলেও এখনও মোট রপ্তানি আগের তুলনায় বেশি। তাঁর ধারণা, বড় কারখানাগুলো অর্ডার কনসোলিডেট করে নিতে পারছে, ফলে ছোট–মাঝারি কারখানাগুলো বেশি সমস্যায় পড়ছে। অর্থাৎ সংকট পুরো খাতজুড়ে সমান নয়, বরং ‘ধনী কারখানা–দরিদ্র কারখানা’র বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এই বৈষম্য দীর্ঘমেয়াদে শিল্পের কাঠামো, প্রতিযোগিতা এবং শ্রমবাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে—কারণ, যত বেশি অর্ডার কেবল বড়দের হাতে কেন্দ্রীভূত হবে, তত বেশি ছোট উদ্যোক্তাদের বেরিয়ে যাওয়ার চাপ বাড়বে।
এই সব আলোচনার মাঝখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অদৃশ্য প্রশ্নটি থেকে যাচ্ছে—বাংলাদেশ কি তার ‘গার্মেন্টস–নির্ভর’ অর্থনীতিকে নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে? তৈরি পোশাক এখনো দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ, কয়েক কোটি মানুষের জীবিকার উৎস, এবং আন্তর্জাতিকভাবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডের মূল ভরসা। কিন্তু একই সঙ্গে এই খাতটি মূল্য সংযোজনের দিক থেকে অনেকটাই সীমিত; কাঁচামাল থেকে ডিজাইন, ব্র্যান্ডিং—বেশির ভাগ জায়গাতেই সিদ্ধান্ত থাকে বিদেশি ক্রেতার হাতে। ফলে যখনই বৈশ্বিক মন্দা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কিংবা শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনায় টান পড়ে, তখন গার্মেন্টসখাতই আগে কেঁপে ওঠে, আর তার সঙ্গে কেঁপে ওঠে শ্রমিকের জীবন।
এ অবস্থায় প্রয়োজন ছিল তিন পক্ষের—সরকার, মালিক ও শ্রমিক—একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক রোডম্যাপের দিকে এগিয়ে আসার। যেটি একদিকে বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনবে, অন্যদিকে শ্রমিকের মৌলিক নিরাপত্তা, বেতন ও সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করবে। নন–কমপ্লায়েন্স কারখানা বন্ধ করা যদি হয় লক্ষ্য, তাহলে শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান বা পুনঃপ্রশিক্ষণের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, সেই প্রশ্নেরও উত্তর দরকার। নতুন শ্রম আইন যদি সত্যিই আধুনিক হয়, তাহলে কেন তা নিয়ে মালিক এবং শ্রমিক—দুই পক্ষই এতটা অস্বস্তি বোধ করছেন—সেটাও খোলামেলা আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত।
এখনকার বাস্তবতায় যা দেখা যাচ্ছে, তা হলো—একদিকে বন্ধ কারখানার ফটকে ঝুলছে তালা, অন্যদিকে এক্সেল শিটে এখনো রপ্তানি প্রবৃদ্ধির সবুজ ঘর। মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিকের হাতে নেই কোনো সিকিউরিটি নেট, নেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার নিশ্চয়তা। ব্যবসায়ী–অর্থনীতিবিদ–নীতিনির্ধারকেরা নানা ভাষায় ব্যাখ্যা দিচ্ছেন—কেউ বলছেন, নির্বাচিত সরকার এলে সব ঠিক হয়ে যাবে; কেউ বলছেন, শিল্পের এখন ‘স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট’ চলছে; কেউ বা বলছেন, পরিস্থিতি এতটা খারাপ নয়। কিন্তু সেই আলোচনা থেকে বহু দূরে, শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাওয়া এক গার্মেন্টসকর্মীর জন্য বাস্তবতা খুব সরল—মাসের শেষে হাতে টাকা আসছে কি না, সন্তানের স্কুলের ফি দেওয়া যাচ্ছে কি না, ঘরে রান্নার চুলা জ্বলছে কি না।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই একাধিকবার প্রমাণ করেছে, সংকটের মধ্যেও গার্মেন্টস–খাতকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব—মন্দা, দুর্ঘটনা, আন্দোলন–সবকিছুর মধ্যেও এই খাত পুনরুদ্ধার করেছে নিজেকে। কিন্তু এবারকার সংকট শুধুই অর্থনৈতিক নয়; এটি একই সঙ্গে রাজনৈতিক, নীতিগত এবং সামাজিক আস্থার সংকট। তাই ৩৫৩টি কারখানা, সোয়া লাখ বেকার শ্রমিক আর বিতর্কিত শ্রম আইনের এই মুহূর্তটা একটি সতর্কবার্তারও সমান—এখানে যদি ভুল সিদ্ধান্ত, একতরফা পদক্ষেপ এবং পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়, তাহলে পোশাকশিল্প শুধু অর্ডার হারাবে না, হারাবে তার মানবিক মুখও। আর তখন হয়তো রপ্তানির গ্রাফের সবুজ দাগও ঢেকে দিতে পারবে না এই খাতের ভেতরে জমে থাকা দুঃখের প্রকৃত রং।
আপনার মতামত জানানঃ