সকল অনিশ্চয়তা কাটিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। আগামী ১৮ মার্চ থেকে অমর একুশে বইমেলা শুরু হয়ে চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বলে জানিয়েছেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ।
বাঙালি লেখক-পাঠক-প্রকাশকের প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন একুশে বইমেলা শুরু হলেও এবার করোনা মহামারীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বইমেলার আয়োজন স্থগিত রাখার জন্য ডিসেম্বরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। পরে ভার্চুয়ালি বইমেলা করার প্রস্তাব এলেও বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি তাতে আপত্তি জানায়। পরে মেলা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গত ১৭ জানুয়ারি জানান, বিলম্বিত হলেও বইমেলা সরাসরিই হবে। সেজন্য সম্ভাব্য তিনটি তারিখ হিসেবে ২০ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ অথবা ১৭ মার্চ থেকে বইমেলা শুরু করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ১৮ মার্চ মেলা শুরুর সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
জানা গেছে, বইমেলায় স্টল পেতে আগ্রহী প্রকাশকরা ইতিমধ্যে আবেদন জমা দিয়েছেন বাংলা একাডেমিতে। স্টল বরাদ্দের জন্য টাকা জমাদানের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এরপরই জানা যাবে এবার বইমেলায় কতজন প্রকাশক অংশ নেবেন। বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী গণমাধ্যমকে বলেন, প্রায় মাসব্যাপী মেলা আয়োজনের জন্য আমরা কাজ করছি। মেলার স্টল বিন্যাস থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়েই কাজ চলছে। এখনই মন্তব্য করা যাবে না। কারণ এবার ভিন্ন পরিস্থিতিতে মেলা আয়োজিত হচ্ছে। মেলা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আমরা ভালোভাবে বইমেলা আয়োজনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
একুশে বইমেলার স্টল ভাড়া আগেরবারের চেয়ে এবার অর্ধেক করে দেয়া হয়েছে। শনিবার (৩০ জানুয়ারি) জালাল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগেরবার ইউনিটপ্রতি ভাড়া ১৩ হাজার ২০০ টাকা রাখা হলেও এবার রাখা হবে ছয় হাজার ৬০০ টাকা। তবে ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ মোট ভাড়া দিতে হবে সাত হাজার ৫৯০ টাকা। এভাবেই দুই ইউনিট, তিন ইউনিট, চার ইউনিট এবং ২০X২০ ও ২৪X২৪ প্যাভিলিয়নের ভাড়া অর্ধেক কমিয়ে (১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ) রাখা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ভাড়া ৩১ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, বাংলা একাডেমি শাখার ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে গ্রন্থমেলা সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ০২০০০১৪০৪৯২৩১’-এ জমা দিতে হবে। টাকা জমার রশিদে প্রতিষ্ঠানের নাম লিখতে হবে। ব্যাংকে টাকা জমার রশিদের ফটোকপি একাডেমিতে জমা দিতে অনুরোধ করা হলো।
ড. জালাল আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতির কারণে বইমেলার স্টল ভাড়া অর্ধেক করে দেয়া হয়েছে। বাকি অর্ধেক টাকা সরকার বাংলা একাডেমিকে পরিশোধ করে দেবে।
ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকেই বাংলা একাডেমি চত্বরে বইমেলা শুরু হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী এ বইমেলার উদ্বোধন করে থাকেন। ১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্যোগ নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।
গবেষক ফয়সাল আহমেদ বলেন, অবশেষে বইমেলা হচ্ছে, লেখক হিসেবে এ সংবাদ আমার জন্য আনন্দের। একইসাথে শঙ্কারও। কারণ যথাযথ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে বিষয়টি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। অনেকেই বলছেন, চারদিকে সবই খোলা। তাহলে কোভিডের ভয়ে বইমেলা বন্ধ থাকবে কেন? আমিও তাই বলি, বইমেলা হোক। তবে লেখক, পাঠক, প্রকাশক সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হোক। অবশ্যই সবার মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। মেলার পরিসর আরও বাড়িয়ে দূরত্ব বজায় রেখে স্টল স্থাপন করা হোক। একটি বিষয় অবশ্যই আয়োজকরা মাথায় রাখবেন, তা হলো- মেলা যেহেতু মার্চ-এপ্রিলে গড়াচ্ছে, সেসময় বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি। তাই বিরূপ আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে স্টল নির্মাণ করতে হবে। যাতে প্রকাশকরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
এসডব্লিউ/এফএ/১০১৮
আপনার মতামত জানানঃ