বাংলাদেশে ‘মাফিয়া অর্থনীতি’ কথাটা এখন আর কৌতুকের বিষয় নয়; এটি এমন এক বাস্তবতা, যার ছায়া সাধারণ মানুষের বাজারের থলে থেকে শুরু করে ব্যাংকের পাসবই, এমনকি ভোটের লাইনে দাঁড়ানো নাগরিকের মনের উপরেও পড়েছে। গত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর দৃশ্যপটে যে পরিবর্তনগুলো চোখে পড়েছে, তার বড় অংশই অর্থনীতিতে—ডলারবাজার খানিকটা শৃঙ্খলায় এসেছে, ব্যাংকিংখাতে অডিট ও তদারকির কথা বেশি শোনা যাচ্ছে, অর্থপাচার রোধে নানা টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা দাঁড়ায় অন্যত্র: এই দৃশ্যমান উন্নতি কতটা টেকসই? ‘মাফিয়া অর্থনীতি’—যাকে কেউ বলেন ক্রনি ক্যাপিটালিজম, কেউ বলেন ক্লেপটোক্রেসি—তার শেকড় যদি প্রশাসন, রাজনীতি ও ব্যবসার মাঝখানে জটলা পাকিয়ে থাকে, তাহলে শুধু অভিযান দিয়ে কি এই জট খোলা যায়? না কি দরকার দীর্ঘমেয়াদি নকশা, যেখানে আইন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, বাজারপ্রতিযোগিতা ও সামাজিক ন্যায্যতা—সব একসাথে তাল মিলিয়ে হাঁটে?
আলোচনার শুরুতে একটা কথা পরিষ্কার করা জরুরি: ‘মাফিয়া’ শব্দটা কেবল বন্দুক, চাঁদাবাজি আর কালো টাকার সিনেম্যাটিক চিত্র নয়। আধুনিক অর্থনীতিতে মাফিয়া মানে এমন এক চক্র, যেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা, আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ব ও বড় ব্যবসার স্বার্থ অভিন্ন হয়ে যায়। রাষ্ট্র নীতিনির্ধারণ করে, তবে নীতির লাভ কুড়োয় নির্বাচিত কজন; বাজারে বড় কোম্পানিরা সুবিধা পায়, ছোট উদ্যোক্তার জন্য দরজা আধখোলা থাকে; নিয়ম আছে, প্রয়োগ বাছাবাছিভাবে; ভর্তুকি আছে, কিন্তু শর্ত এমন যে ‘কাগজে’ যোগ্য—আসলে ‘চেনাজানা’ ছাড়া পাওয়া যায় না। ফলে প্রতিযোগিতা কমে, বিনিয়োগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন ঢুকতে সংকোচ বোধ করে, আর কর্মসংস্থান—যেটা যে কোনো সমৃদ্ধির চাবিকাঠি—তা হয় অল্পসংখ্যক, স্বল্পস্থায়ী ও নিম্নমানের।
এই ঢেউ যখন আর্থিক খাতে লাগে, তখন তার অভিঘাত সবচেয়ে বেশি হয় ব্যাংক ও নন–ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। একটি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অধীনে বহু ব্যাংক বা এনবিএফআইয়ের নিয়ন্ত্রণ—যেটা একসময় অসম্ভব ভাবা হতো—ক্রমে নিয়মে ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবে ঢুকে পড়ে। বোর্ডে ‘নিয়ন্ত্রিত’ পরিচালক, ঋণ বিতরণে ‘নির্দেশিত’ গন্তব্য, জামানতের কাগজে ‘উচ্চমূল্যায়ন’—সব মিলিয়ে যে পকেটগুলো ভরতে থাকে, সেগুলো দেশের নয়। টাকা নাম-বেনামে ঘোরে, লেয়ারিং হয়ে সীমানা টপকে যায়; দেশের রেমিট্যান্স ঢোকে যে হুন্ডি চ্যানেল দিয়ে, সেখান দিয়েই আবার পাচারিত অর্থ বেরিয়ে যায়—এই দ্বিমুখী স্রোত বিনিময়বাজারকে চাপে রাখে, মুদ্রাস্ফীতি ঠেলে দেয় ওপরের দিকে, আর সাধারণ মানুষ কেবল দেখে যে চাল-তেল-ডাল প্রতিদিনের মতো আর প্রতিদিন থাকে না।
রাজনীতির সঙ্গে এই অর্থনীতির নৈকট্য অবধারিত। নির্বাচনের আগে-পরে ‘অর্থায়ন’ দরকার হয়, ক্ষমতায় গিয়ে ‘রিটার্ন’ চাওয়া হয়। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো—কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন সংস্থা, প্রতিযোগিতা কমিশন—সবাই থাকে, কিন্তু তাদের দাঁতভাঙা থাকে। ফাইল ঘোরে, কমিটি বসে, রিপোর্ট হয়, ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশিত হয়, তারপর নীরবতা। এই নীরবতা ভাঙতে গেলে শুধু অভিযান নয়—ন্যায়বিচারের পূর্বশর্তগুলোও দরকার: স্বাধীন তদন্ত, সুরক্ষিত সাক্ষ্য, দ্রুত বিচারের সক্ষমতা আর ‘কাদের বিরুদ্ধে’ প্রশ্নে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা। অন্যথায় অভিযান হয় ‘চেহারা বদলের’ অনুশীলন—চোরতন্ত্র থাকে, কেবল চোর বদলায়।
বলা হয়, আর্থিক অপরাধে ‘হাত’ দিলে অর্থনীতি থমকে যায়। দেখানো হয় উদাহরণ: কঠোর মাদকবিরোধী অভিযানের পর কোনো অঞ্চলের জিডিপি টেম্পারারি স্লোডাউন। এখানে দুইটি বিষয় গুলিয়ে ফেলা হয়। প্রথমত, অপরাধচক্র ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ‘সহজ টাকা’ অবশ্যই সরে যায়; যারা কৃত্রিম মুনাফার ওপর দাঁড়িয়ে ছিল, তারা ধাক্কা খায়। দ্বিতীয়ত, এই ধাক্কাকে ‘নতুন নিয়ম’ দিয়ে শোষণ করা না গেলে, সামগ্রিক অর্থনীতি ধীর হতে পারে। কিন্তু অপরাধচক্র ভাঙার মধ্যমেয়াদি সুফল—বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়া, সৎ উদ্যোক্তার ঋণপ্রবাহ উন্নত হওয়া, উৎপাদনশীলতা বাড়া—এসব প্রমাণিত বাস্তবতা। ইতালির অভিজ্ঞতা দেখায়, মাফিয়া–সংযুক্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনায় সামাজিক-উৎপাদনশীল কাজে দিলে স্থানীয় অর্থনীতি সময়ের সঙ্গে পুনরুজ্জীবিত হয়; বৈধ ব্যবসায় ঋণপ্রবাহ বাড়ে, কর্মসংস্থান তৈরি হয়, ‘সুরক্ষা খরচ’ কমে যাওয়ায় পণ্যের দাম স্থিতিশীল হয়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সামনে তাই দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ। একদিকে, পলিসি সিগন্যাল স্পষ্ট করতে হবে: ব্যাংকিং ও পুঁজিবাজারে বেনেফিশিয়াল ওনারশিপ আড়াল করে কোনো নিয়ন্ত্রণসুবিধা চলবে না; বড় ঋণ এক্সপোজার ও পার্টি লেনদেন কঠোরভাবে ঘোষণাযোগ্য; স্ট্রেস টেস্ট ব্যর্থ হলে নতুন টাকা ঢোকার আগে পুরোনো ব্যবস্থাপক–পরিচালকের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। অন্যদিকে, ‘শাস্তি মানেই তালা’—এই সহজ রুটিন দিয়ে চললে শ্রমবাজারে ধাক্কা আসে। তাই প্রয়োগে চাই স্টেজড এনফোর্সমেন্ট: অডিট–ফরেনসিক–রেসোলিউশন—এই তিন ধাপে। যেখানে প্রতিষ্ঠান বাঁচানো সম্ভব, সেখানে ‘ফিট অ্যান্ড প্রপার’ নতুন ম্যানেজমেন্ট, আংশিক শেয়ার ডাইলিউশন, এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে খারাপ ঋণ আলাদা করা; আর যেখানে বাঁচানো অসম্ভব, সেখানে দ্রুত লিকুইডেশন, তবে শ্রমিকের পেন্ডিং পাওনা সবার আগে পরিশোধের নিয়ম কার্যকর করা। ইতালির মতো বাজেয়াপ্ত সম্পদের সামাজিক ব্যবহার—কোঅপারেটিভ, ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার, এসএমই পার্ক—বাংলাদেশেও আঞ্চলিক অর্থনীতিকে নতুন জীবনীশক্তি দিতে পারে।
আইনের ভাষায় বড় ফাঁক রয়ে গেছে বেনেফিশিয়াল ওনারশিপ প্রকাশ, সংশ্লিষ্ট-পক্ষ লেনদেন, রিলেটেড পার্টি ফাইন্যান্সিং এবং ‘এভারগ্রিনিং’–এর মতো চর্চায়। কোম্পানি আইন, ব্যাংকিং কোম্পানি আইন ও সিকিউরিটিজ আইন—তিন পক্ষের জুরিসডিকশন যখন ওভারল্যাপ করে, তখন ‘গ্রে জোন’ তৈরি হয়; এই গ্রে জোনেই ক্রনিদের জাদু কাজ করে। তাই ইন্টার-রেগুলেটরি টাস্কফোর্সকে কেবল সমন্বয় সভার বাইরে এনে বাধ্যতামূলক তথ্য–শেয়ারিং প্রটোকল, টাইম–বাউন্ড এনফোর্সমেন্ট কেসলিস্ট এবং ‘কমন সাসপেক্ট’–এর জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন ম্যান্ডেট দিতে হবে। আদালতে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দরকার, কিন্তু সে আদালতের স্বাধীনতা মানতে হবে; প্লিয়া-বার্গেনের মতো ব্যবস্থা—যেখানে অপরাধী স্বীকারোক্তির বিনিময়ে সম্পদ ফেরত ও হালকা শাস্তি পায়—তা চালু করলে সম্পদ উদ্ধারের গতি বাড়ে।
বাজারপ্রতিযোগিতার কথা না বললেই নয়। দুই দশকে আমরা দেখেছি, কোনো কোনো খাতে তিন-চারটি বড় খেলোয়াড় মূল্য নিয়ন্ত্রণে ‘ইনফরমাল’ সমঝোতা করে। মুরগির দুধ থেকে শুরু করে সিমেন্ট–ইস্পাত—দামের তাল মিলিয়ে ওঠা–নামা হয়, অথচ কারও নামে কনভিকশন হয় না। এখানে প্রতিযোগিতা কমিশনের টুলকিট আধুনিক করতে হবে: লেনিয়েন্সি রেজিম, ডন–রেইড, ইফিশিয়েন্সি ডিফেন্স—এসব কেবল বইয়ের শব্দ না থেকে বাস্তবের অস্ত্র হোক। গার্হস্থ্য প্রতিযোগিতা বাড়লে আমদানি–নির্ভরতার ধাক্কা কমে, ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কিছুটা হলেও বাঁচে, আর সৎ উদ্যোক্তার ‘মার্জিন’ টেকসই থাকে।
অর্থপাচার রোধে ক্যাপিটাল ফ্লো মনিটরিংয়ে কেবল কাস্টমস–বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর নির্ভর করলে চলবে না; ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ, এনবিআর, বিএফআইইউ, রেজিস্ট্রি সাব–সিস্টেম—সবখানে ‘ডেটা ব্রিজ’ তৈরি করতে হবে। রিয়েল এস্টেট, সোনা–গয়না, হুন্ডা–কারেন্সি এক্সচেঞ্জ—এগুলো ‘ডিজাইনেটেড নন–ফিন্যান্সিয়াল বিজনেস’ হিসেবে কঠোর কেওয়াইসি/সিটিএফের আওতায় আনা চাই। ভূমি রেকর্ড–দলিল ও ব্যাংক লেনদেনের মধ্যে ইন্টার–অপারেবল ম্যাপিং থাকলে, কাগুজে কোম্পানির নামে অস্বাভাবিক প্রোপার্টি কেনা ধরা পড়বে সহজে। একইভাবে, সরকারি ক্রয়ে ই–জিপির ডেটা পাবলিক এপিআই করলে সিভিল সোসাইটি ও গবেষকেরা ‘রেড ফ্ল্যাগ’ টেন্ডার পর্যবেক্ষণ করতে পারবে; স্বচ্ছতা বাড়লেই ‘কমিশন’–নির্ভরতা কমে, প্রকল্প খরচে সাশ্রয় হয়, ঋণচাপও সামলে ওঠে।
তবে অর্থনীতি কেবল সংখ্যা নয়; এটি মানুষের। বড় বড় নামের মামলা–মোকদ্দমার ভেতর দিয়ে যখন কারখানা বন্ধ হয়, প্রথম আঘাতটা লাগে শ্রমিকের ওপর। তাই প্রয়োগ–পর্যায়েই ‘সোশ্যাল শক অ্যাবজরবার’ বসাতে হবে: দ্রুত ত্রাণ নয়, দ্রুত ‘ট্রানজিশন’। বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের জন্য অস্থায়ী মজুরি–সুরক্ষা তহবিল, দক্ষতা উন্নয়নের স্বল্পমেয়াদি কোর্স, স্থানান্তরিত নিয়োগে ট্যাক্স–ইনসেনটিভ—এসব সরকার একা নয়, বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন ও ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের সঙ্গে মিলেই করতে পারে। এতে আইন–প্রয়োগের রাজনৈতিক মূল্য কমে, জনসমর্থন টিকে থাকে, আর ‘চাকরি যাবে’ ভয় দেখিয়ে অপরাধীরা জনমত টানতে পারে না।
গণমাধ্যম ও নাগরিক–সমাজের ভূমিকা এই যাত্রায় ক্রিটিক্যাল। ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং–এ নিরাপত্তা, হুইসেলব্লোয়ার–প্রটেকশন, তথ্যের স্বাধীনতা—এসব কাগজে নয়, কাজে চাই। আদালতে সাব–জুডিস অজুহাতে তথ্য চেপে গেলে ‘পাবলিক ইন্টারেস্ট’ টেস্ট প্রয়োগ করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি–ব্যবসা–আইন বিভাগগুলোকে ‘কেস রিপোজিটরি’ বানানো যায়, যেখানে শিক্ষার্থীরা বাস্তব কোম্পানির আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করতে শিখবে; ভবিষ্যৎ ম্যানেজারদের নৈতিকতা–ঝুঁকি–কমপ্লায়েন্স পাঠ্যসূচি বাধ্যতামূলক করা হোক। দীর্ঘমেয়াদে সংস্কৃতি পাল্টাবার একমাত্র উপায় শিক্ষা; ‘চালাকি করলেই জয়’ এই ছোট্ট বীজটাই আমাদের বড় বন দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিয়েছে।
প্রবাসী আয়ে আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্সে পুরোনো ‘ক্যাশ ইনসেনটিভ’ দিয়ে লাভ কম; প্রয়োজন বাজার–সম্মত হার নিশ্চিত করা, এক্সচেঞ্জ হাউস–ব্যাংকের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করা এবং প্রবাসীদের জন্য ‘ডায়াসপোরা বন্ড’কে বিশ্বাসযোগ্য করা—স্বচ্ছ প্রকল্প–ব্যবহার, নিয়মিত রিটার্ন, ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন প্ল্যাটফর্ম। একই সঙ্গে, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’–এর জন্য যে জানালা খুললে তাকে বৈধ করা যাবে—এই ধারনাকে স্থায়ী নীতি নয়, এককালীন, কড়া শর্তযুক্ত, নাম–ঘোষণাসহ, কঠোর অডিট–ফলোআপে বেঁধে রাখতে হবে; বারবার ‘হোয়াইটওয়াশ’ করলে নৈতিক ঝুঁকি বাড়ে, সৎ করদাতা নিরুৎসাহিত হয়।
রাজনৈতিক অর্থনীতির কঠিন কথাটা শেষদিকে বলতেই হয়: মাফিয়া অর্থনীতি কখনো একা দাঁড়ায় না, তাকে কেউ না কেউ দাঁড়াতে দেয়। তাই টেকসই দমন মানে ‘শুধু তারা’ নয়, ‘যারা দেয়’—দুইপক্ষই আইনের মুখোমুখি হবে। পাবলিক প্রোকিউরমেন্টে বেনামী মালিকানা নিষিদ্ধ, দাতা–গ্রহীতা উভয়ের জন্য অপরাধ, পার্টি–ফাইন্যান্সিংয়ে স্বচ্ছতা—এসব না এলে অভিযান ‘বাছাই–সফলতা’তে সীমাবদ্ধ থাকবে। গণ–অভ্যুত্থানের নৈতিক ম্যান্ডেট এখানেই: নিয়ম সবার জন্য, সুবিধা কারও জন্য নয়।
শেষ পর্যন্ত, বাংলাদেশের অর্থনীতি এক দীর্ঘ দৌড়ে নেমেছে। দৌড়ের পথে প্রথম কিলোমিটারে ধুলো উড়বে, কেউ কেউ হাঁফিয়ে উঠবে, গতি কখনো কমবে। কিন্তু যদি ট্র্যাকটা সোজা করা যায়—আইন স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতা সুরক্ষিত, ব্যাংকিং শাসন মজবুত, বাজেয়াপ্ত সম্পদের সামাজিক–উৎপাদনশীল ব্যবহার নিশ্চিত, শ্রমিকের সেতুবন্ধন—তাহলে দ্বিতীয়–তৃতীয় কিলোমিটারে গতি ফিরে আসবে। তখন দেখা যাবে, ক্রনি পুঁজিবাদের ‘সহজ মুনাফা’ থেকে বেরিয়ে এসেও উদ্যোক্তার লাভ করা সম্ভব—দীর্ঘমেয়াদে আরও বেশি সম্ভব। আর তখন ‘মাফিয়া অর্থনীতি’ শব্দটা কেবল অতীতের দিকে তাকিয়ে বলা এক সতর্ক–দ্রষ্টব্য হবে; বর্তমানের ভয় নয়, ভবিষ্যতের শিক্ষা।
আপনার মতামত জানানঃ