কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সিস্টেমকে একা ছেড়ে দিলে এরা নিজেদের মতো করে সমাজ তৈরি করতে শুরু করবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিভিন্ন এআই সিস্টেম যখন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন এরা নিজেরাই নিজেদের সংগঠিত করে ও নতুন ধরনের ভাষার নিয়ম তৈরি করে– ঠিক যেভাবে মানুষের সমাজে অতীতে ঘটেছে।
এ গবেষণায় চ্যাটজিপিটি বা এআই টুলের মতো বিভিন্ন ‘লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’ বা এলএলএম কীভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বা মেশে তা বোঝার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণার লক্ষ্য হচ্ছে, ভবিষ্যতে যখন ইন্টারনেটে অনেক এআই একসঙ্গে থাকবে তখন এরা একে অপরের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ ও কথোপকথন করবে সেটাই বিজ্ঞানীরা বুঝতে চেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
‘সিটি সেন্ট জর্জ’স’-এর পিএইচডি গবেষক ও এ গবেষণার প্রধান গবেষক অ্যারিয়েল ফ্লিন্ট অ্যাশেরি বলেছেন, “এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ গবেষণায় বিভিন্ন এলএলএম’কে আলাদা করে দেখা হয়েছে। তবে বাস্তব দুনিয়ায় বিভিন্ন এআই সিস্টেমে অনেকগুলো এজেন্ট বা বুদ্ধিমত্তা একসঙ্গে কাজ করবে ও একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগও করবে।”
“আমরা জানতে চেয়েছি এসব এআই মডেল কি একসঙ্গে কাজ করার জন্য নিজেদের নিয়ম বানাতে পারে, যেটা সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি বা যা দিয়ে সমাজ তৈরি হয়? উত্তর হলো হ্যাঁ। যা এদের পক্ষে একা করা সম্ভব নয় তা এরা একসঙ্গে মিলে করতে পারে।”
এআইদের এমন সমাজ কীভাবে গঠিত হতে পারে তা বুঝতে একটি মডেল ব্যবহার করেছেন গবেষকরা, যা সাধারণত মানুষের ওপরও প্রয়োগ হয়। যার নাম ‘নেইমিং গেইম’। এ গেইমে গবেষকরা বিভিন্ন এআই সিস্টেমকে একসঙ্গে রাখেন এবং কিছু অপশনের মধ্যে থেকে একটি ‘নাম’ এদের বেছে নিতে বলেন তারা। এক্ষেত্রে সবাই যদি এক নাম বেছে নেয় তাহলে এরা পুরস্কার পায়।
গবেষকরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন এআই এজেন্ট একসঙ্গে মিলে নিজেরাই কিছু সাধারণ নাম ঠিক করতে শুরু করেছে। এমনটি যেন হঠাৎ করেই এদের মধ্যে এসেছে। আগে থেকে কোনো পরিকল্পনা করে বা একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে এমনটি করেনি এরা। তবে এরপরও নিয়ম তৈরি হয়েছে– মানুষের সমাজে ধীরে ধীরে যেভাবে নিয়ম-কানুন তৈরি হয় তেমন।”
এআইয়ের দলটি কিছু বিশেষ ধরনের নিজস্ব পছন্দ বা ঝোঁক গড়ে তোলে, যা একা নয়, বরং এআইয়ের পুরো দল থেকেই তৈরি হয়েছে বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের।
‘সিটি সেন্ট জর্জ’স’-এর অধ্যাপক আন্দ্রেয়া ব্যারনচেলি বলেছেন, “পক্ষপাতিত্ব সবসময় একেকটি মডেল থেকেই আসে না। আমরা অবাক হয়েছিলাম যে, এটা এআইদের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ থেকেই তৈরি হতে পারে। বর্তমানে বেশিরভাগ এআই নিরাপত্তা গবেষণায় শুধু একক মডেলের ওপরই বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়, এ কারণে এ বিষয়টি নজরে আসেনি।”
গবেষকরা আরও বলেছেন, ছোট একদল এআই বড় দলের মধ্যে কোনো একটি নিয়ম তৈরিতে প্রভাব ফেলতে পারে। এ ঘটনাও মানুষের সমাজের মধ্যে দেখা যায়।
“এআই নিরাপত্তা গবেষণার জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে এ গবেষণা। এতে উঠে এসেছে, নতুন ধরনের এআই এজেন্টরা আমাদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া শুরু করেছে এবং আমাদের ভবিষ্যত একসঙ্গে গড়ে তুলবে এরা, এর প্রভাব অনেক গভীর হতে পারে,” বলেছেন অধ্যাপক ব্যারনচেলি।
“এআই কীভাবে কাজ করে তা বোঝা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যাতে এআইয়ের নিয়ন্ত্রণে না থেকে আমরা এর সঙ্গে মিলে বসবাস করতে পারি। এমন এক পৃথিবীতে আমরা প্রবেশ করছি, যেখানে এআই কেবল কথাই বলবে না, বরং এটি আলোচনা করে, সমন্বয় করে ও কখনো কখনো একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করা আচরণ নিয়ে দ্বিমতও পোষণ করে, ঠিক যেমনটি মানুষের বেলায় ঘটে।”
‘ইমার্জেন্ট সোশ্যাল কনভেনশনস অ্যান্ড কালেকটিভ বায়াস ইন এলএলএম পপুলেশনস’ শিরোনামে গবেষণাপত্রটির ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ।
আপনার মতামত জানানঃ