মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তান ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলাকে ভারত ‘পহেলগাম, মুম্বাই হামলার জবাব’ বলে বর্ণনা করছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলছে, ভারতের হামলায় এ পর্যন্ত ২৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের গোলায় ভারত শাসিত কাশ্মীরে ১০ জন নিহত হয়েছে।
ভারত গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি বিমান ভূপাতিত করেছে—এই উত্তেজনা দুই দেশকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।
দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতের ইতিহাস আছে। এই ঘটনা একটি বিপজ্জনক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে। ইসলামাবাদ ভারতের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে এবং আন্তর্জাতিক মহল উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে আহ্বান জানিয়েছে।
নয়াদিল্লি বলেছে, এই হামলা এপ্রিল মাসে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্রে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় চালানো হয়েছে। ওই হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ছিলেন ভারতীয় পর্যটক। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। তবে ইসলামাবাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গতকাল মধ্যরাতের পর ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক অভিযান চালায় পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৯টি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে, তবে কোনো পাকিস্তানি বেসামরিক, অর্থনৈতিক বা সামরিক স্থাপনায় আঘাত করা হয়নি। তাঁরা বলেন, ২৫ মিনিটের এই অভিযান দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর লস্কর-ই-তাইয়েবা এবং জইশ-ই-মুহাম্মদ ‘সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে চালানো হয়।
‘সিঁদুর’ নামটি সম্ভবত সেই লাল গুঁড়ার প্রতি ইঙ্গিত করে, যা অনেক হিন্দু বিবাহিত নারী কপালে পরেন। এপ্রিল মাসের পর্যটক হত্যাকাণ্ডে পুরুষদের নিশানা করা হয়েছিল, যাতে অনেক ভারতীয় নারী বিধবা হন।
তবে পাকিস্তান এক ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে। তারা বলছে, বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং মসজিদে আঘাত লেগেছে। সিএনএন এখনো এসব দাবি যাচাই করতে পারেনি।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, ছয়টি স্থানে ২৪টি হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে কিছু হামলা পাকিস্তানের ঘনবসতিপূর্ণ পাঞ্জাব প্রদেশে হয়েছে। আর পাকিস্তান বলছে, ১৯৭১ সালের পর এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের সবচেয়ে বড় হামলা।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্র দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি বিমান এবং একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
ঠিক কোথায় বা কীভাবে বিমানগুলো ভূপাতিত হয়েছে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ অবশ্য তা বলেননি। তবে তাঁরা জানান যে এর মধ্যে তিনটি রাফাল জেট রয়েছে। রাফাল যুদ্ধবিমান ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্পদ। সেগুলো কয়েক বছর আগে ফ্রান্স থেকে কেনা হয়।
ভারত এখনো কোনো বিমান হারানোর কথা স্বীকার করেনি। সিএনএন এই দাবি যাচাই করতে পারেনি এবং ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর কাছে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও ভারতশাসিত কাশ্মীরের একজন স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, একটি অজ্ঞাত বিমান উইয়ান গ্রামে ভূপাতিত হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, একটি লাল ইটের বাড়ির পাশে একটি মাঠে বিমান ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। ছবি থেকে বিমানটি কার, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আজ বুধবার বলেছেন, দেশটির ‘প্রতিশোধ নেওয়ার পূর্ণ অধিকার’ রয়েছে এবং ভারতের পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধের শামিল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ভারতের হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন বলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কিশোর ও শিশুও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সীটি ছিল তিন বছর।
রয়টার্স ভারতশাসিত কাশ্মীরের পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে সাতজন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছেন।
ভারত ও পাকিস্তান—দুই পক্ষই কাশ্মীরকে বিভক্তকারী নিয়ন্ত্রণরেখা গোলাবর্ষণ ও গুলিবিনিময় করেছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের কর্তৃপক্ষ জনগণকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে বলেছে। তারা জানিয়েছে, খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
এই হামলার কারণে বিমান চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে, পাকিস্তান তার আকাশসীমার কিছু অংশ বন্ধ করে দিয়েছে। একাধিক আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনস পাকিস্তানের ওপর দিয়ে না উড়ে বিকল্প পথ নিচ্ছে, আর ভারতের কয়েকটি এয়ারলাইনস তাদের উত্তরাঞ্চলের বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ