পরশুরামের বিলোনিয়া সীমান্ত থেকে মো ইয়াছিন (১৯) নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। বুধবার ভোরে বিলোনিয়া সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের দাবি, সীমান্তে কৃষি কাজের জন্য গেলে তাকে ভারতীয়রা আটক করে নিয়ে যায়।
জানা গেছে, উপজেলার পৌর এলাকার বাউরপাথর গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে মো. ইয়াছিন সকালে কৃষি কাজ করতে বিলোনিয়ার পাশে জমিতে গেলে তাকে বিএসএফ ধরে নিয়ে যায়।
তাকে মারধর করে মারাত্মক আহত করে ভারতীয় পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে। এ সংক্রান্ত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরশুরামের মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
মো ইয়াছিনের স্ত্রী লিজা আক্তার জানান, বিলোনিয়া স্থলবন্দরের পূর্ব পাশে কৃষি কাজ করতে যান ইয়াছিন। তাকে সেখান থেকে ভারতীয়দের সহযোগিতায় বিএসএফ আটক করে নিয়ে যায়।
বিজিবির মজুমদারহাট বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সৈয়দ কামরুল আলম মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানি না। অভিযোগ জানালে আমাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ফেনী জেলা সাইফুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, বিলোনিয়া সীমান্ত থেকে ভারতীয় নাগরিকরা কর্তৃক বাংলাদেশের একজন নাগরিককে আটক করে ভারতের পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে। তিনি বর্তমানে ভারতীয় পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন আছেন।
সীমান্তে গ্রেফতার বা বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের মৃত্যু নতুন ঘটনা নয়। কারণে-অকারণে সীমান্তে অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় সীমানায় কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু হলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয় মরদেহ।
দুই দেশের মধ্যে কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রীয় পর্যায় এবং সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু হত্যা বন্ধ হচ্ছেই না। উল্টো গুলিতে মৃত্যুর পর সীমান্ত থেকে মরদেহই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেক সময় ফেরত চাইলেও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে টালবাহানা।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব বলছে, ২০১৫ সাল থেকে শুরু করে গত সাত বছরে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ২২১ বাংলাদেশি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় আড়াই শ। এদের মধ্যে এক বছরেই বিভিন্ন সীমান্তে গুলিতে মারা যাওয়ার পর মরদেহ ফেরত পাওয়া যায়নি ছয়জনের। এর মধ্যে দেশের উত্তর- পশ্চিম সীমান্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জেরই তিনজন। বাকিগুলো চুয়াডাঙ্গা আর কুড়িগ্রামে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সাধারণ সম্পাদক নূর খান বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে অথবা নির্যাতনে কেউ মৃত্যুবরণ করলে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগের (পতাকা বৈঠক) পর লাশ ফিরিয়ে আনা হয়৷ কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমরা জেনেছি যে দীর্ঘদিন ধরে লাশ ভারতে পড়ে থাকলেও সেগুলো আনার ব্যাপারে আমাদের দিক থেকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না৷
নূর খান মনে করেন, ‘‘সংখ্যা যাই হোক না কেন আমি মনে করি বাংলাদেশের একজন নাগরিক সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের শিকার হোক বা পৃথিবীর যে-কোনো জায়গায় হত্যা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটুক, তাদের পরিবার সবসময় চায় যে তারা লাশ পাবে৷’’
তার অভিযোগ, মৃতের প্রতিবার জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট জমা দেয়ার পরও লাশ আনার উদ্যোগ বিজিবির পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিজিবি তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷
নূর খানের মতে, ‘‘জাতীয় পরিচয়পত্র নাগরিকত্ব প্রমাণের সবচেয়ে বড় উপায়৷ তবে নাগরিকত্ব প্রমাণের আরও উপায় আছে৷ কাগজপত্র আমলে না নিয়ে আমাদের নাগরিক না, এটা বলার কোনো সুযোগ বিজিবির দেখি না৷ যদি বলে থাকে, সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং তা তাদের দায়িত্বের সাথে যায় না৷’’
এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যারা মারা যায় তাদের পরিবার জানে যে লাশ সেখানে আছে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের বাবা-ভাই বা সন্তানের লাশ পেতে চায়, চায় ভারতের সাথে দেন-দরবার করে যেন লাশ আনা হয়, যেন ধর্মীয় বিধান মতে পরিবারগুলো লাশ দাফন করে৷
এদিকে, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় আনার জন্য দুই দেশ অনেকবার আলোচনা করেছে৷ ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বন্ধ হচ্ছে না৷ তারা সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বলার পরই আবার সীমান্ত হত্যা শুরু হয়৷
আপনার মতামত জানানঃ