মাকড়াসার জাল এতটাই সূক্ষ্ম যে, খালি চোখে দেখতে বেশ ভালোই বেগ পেতে হয়। অথচ এত পাতলা, সূক্ম জালে কিনা বড় বড় মাছি, ফড়িং, তেলাপোকার মতো প্রাণীরা আটকে যায়। এদের বেশিরভাগই জালের মালিক যে মাকড়াশা, তারচেয়ে আকারে বেশ বড়।
এই মাকড়াসার জাল দিয়ে যদি আপনি দড়ি তৈরি করতে পারেন, তাহলে এরচেয়ে শক্ত দড়ি আর কোথায় পাবেন না। এমনকী বিদ্যুতের মোটা মোটা তারগুলোও এর কাছে নস্যি হয়ে যাবে।
মাকড়শার জাল আসলে বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন তৈরি। সেই প্রোটিনের উৎস মাকড়শার শরীর। অর্থাৎ মাড়সার শরীরের ভেতরেই আছে জাল তৈরির কারখানা।
মাকড়সার জাল তৈরির সেই সূতাকে বলে স্পাইডার সিল্ক। মাকড়শা পেটের দিকে বিশেষ এক গ্রন্থি থাকে। সেখান থেকেই স্পাইডার সিল্ক নিঃসরণ করে।
মাকড়সার এই সূতা খুবই সূক্ষ্ম, সে কথা আগেই বলেছি। কিন্তু সেই সূক্ষ্মতার মাপ শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠে যাবে। মাকড়াসার তৈরি যেকোনো সুতাই মানুষের চুলের চেয়ে ১০০ গুণ পাতলা। আর এই পাতলা সুতার ভেতরে লুকিয়ে থাকে অসাধারণ শক্তি।
মাকড়শার সিল্কের টানা সহ্য করা ক্ষমতা এবং স্থিতিস্থাপকতা অনেক বেশি। স্টিল বা ইস্পাতের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি শক্তিশালী এই সুতা! এই তুলনাটা কীভাবে করা হলো?
একই ওজনের স্টিলের সুতা ও মাকড়সার সিল্কের তুলনা করে এই ব্যবধাটাই পাওয়া গিয়েছে।
বিজ্ঞিানীরা হিসাব কষে দেখেছেন, মাকড়শার একটি সুতাকে যদি যথেষ্ট পরিমাণে মোটা করা হয়, তাহলে এটি একটি বিমানের ওজনও ধরে রাখতে সক্ষম হবে!
কীভাবে মাকড়শার জাল এত শক্তিশালী হয়? মাকড়শার জালের শক্তির রহস্য লুকিয়ে আছে এর প্রোটিন কাঠামোয়। এর সিল্ক প্রোটিনগুলো দীর্ঘ চেইনের মতো বিন্যস্ত থাকে। সেগুলো পরস্পরের সঙ্গে খুব শক্তভাবে বাঁধা। এই সুতা টেনে অনেক বেশি প্রসারিত করেও এই প্রোটিন চেইনগুলো আলাদা করা যায় না। বরং আরও শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে এরা। এর ফলে সুতাটি ভাঙার বদলে প্রসারিত হয় এবং শক্তি ধরে রাখে।
এছাড়াও, মাকড়শার তৈরি জাল খুবই হালকা এবং এর বিশেষ জটিল গঠন এটিকে আরও মজবুত করে তোলে। এক ধরনের ডিজাইন এবং প্রকৃতির কৌশলের মাধ্যমে মাকড়শা এই শক্তিশালী জাল তৈরি করে। এই জাল খুব দ্রুত তৈরি হয় এবং কোথাও ছিঁড়ে গেলে মাকড়শা দ্রুত তা মেরামত করে ফেলতে পারে।
মাকড়শার জালের এই অদ্ভুত শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতা দেখে বিজ্ঞানীরা একে বিভিন্ন কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। চলছে রীতিমতো গবেষণা। মাকড়শার সিল্কের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা শরীরের বর্ম তৈরির চেষ্টা করছেন। এ ধরনের বর্ম যদি তৈরি সম্ভব হয়, সেটা হবে অত্যন্ত হালকা কিন্তু খুব শক্তিশালী।
মাকড়শার সিল্কের উপাদান ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম ত্বক, টিস্যু এবং শল্যচিকিৎসার সুতা তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন। কারণ এটি জীবাণু প্রতিরোধী এবং শরীরে সহজে মিশে যেতে পারে।
ভবিষ্যতে মাকড়শার সিল্ক ব্যবহার করে হালকা কিন্তু মজবুত নির্মাণ সামগ্রী তৈরির কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। যেমন এয়ারক্রাফট কিংবা সেতু। অর্থাৎ মাকড়সার জালের শক্তিমত্তা বিজ্ঞানীদের আশা দেখাচ্ছে।
আপনার মতামত জানানঃ