ঢাকা থেকে শুরু হওয়া লংমার্চে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার সকালে ফেনী শহরের কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ডে লাঠিসোটা ও ইট নিয়ে একদল যুবক এ হামলা চালায়। এতে অর্ধশতাধিক লংমার্চকারী আহত হয়েছেন। ফেনীর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ-ছাত্রলীগ এবং পুলিশ যৌথভাবে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন লংমার্চকারীরা। এছাড়া এদিন ফেনীর দাগনভূঞায় লংমার্চ বাধার মুখে পড়ে।
ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবিতে শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে নোয়াখালী রওনা হয় লংমার্চ। বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও নারী সংগঠন এতে যোগ দেয়। তারা শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা পৌঁছায়। কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে উন্মুক্ত মঞ্চে সমাবেশ শেষে তারা রাতে ফেনীতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থান করেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা ফেনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ করেন।
লংমার্চে যোগ দেওয়া ফারহানা হক মুনা, শুভ দে অভিযোগ করেন, সমাবেশ চলাকালীন পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা লংমার্চকারীদের হুমকি দেয়। পরে তারা সমাবেশ সংক্ষেপ করে মিছিল বের করলে পুলিশ ও সরকারদলীয় লোকজন তাদের ওপর হামলা করে। তারা বাসে ওঠার সময় হামলাকারীরা আবার লাঠি ও ইট নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করে।
লংমার্চে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, সমাবেশ শেষ করে বাসে ওঠার পর পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ৫০-৬০ জন লংমার্চকারীদের বহনকারী বাস চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে এবং লাঠি দিয়ে পেটায় ও পাথর ছুড়ে মারে। এতে লংমার্চে যোগ দেওয়া অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। এছাড়া ফেনী থেকে আসার পথে দাগনভূঞা-বেগমগঞ্জের চৌমুহনী আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর তাদের গতিরোধ করা হয়। পরে তারা পুলিশের সহযোগিতায় চৌমুহনী লাইফ কেয়ার হাসপাতালে দুপুরে এসে গুরুতর আহত ৩৫ জনকে চিকিৎসাসেবা দেন। বাকিদের বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক এমএইচ রিয়াজ, সদস্য মো. ইব্রাহিম, রাবেয়া রফিক রিমি, তানভীর আলম, মাহীম হোসেন, সীমা আক্তার, জান্নাতুল ফাতেমা, মাশরাফি, মারিয়া, সাকিল, নিধি রয়েছেন।চৌমুহনী লাইফ কেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিব উদ্দিন ৩৫ জনের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আহত বেশিরভাগই গুরুতর। তাদের মাথা, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের গুরুতর জখম রয়েছে। অনেকের হাত ও পা ভেঙে গেছে। লংমার্চ সংগঠক সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সভাপতি মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, দেশে এখন আর কথা বলার কোনো পথ নেই। একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও সরকার সহ্য করতে পারছে না।
এদিকে গতকাল দুপুরে শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে করে জেলা ছাত্রলীগ। সংগঠনের সভাপতি এম সালাউদ্দিন ফিরোজ লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, লংমার্চের হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত নয়। ওই কর্মসূচির প্রতি তাদেরও সমর্থন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পরিতাপের বিষয় লংমার্চের নামে জাতির পিতা, প্রধানমন্ত্রী ও এমপি নিজাম হাজারীর ফেস্টুনগুলোতে বিভিন্ন অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য করে লংমার্চকর্মীরা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে ছাত্রলীগ ছবি অবমাননার প্রতিবাদে একটি মিছিল করে।ফেনী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাইনুল ইসলাম পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, লংমার্চকারীদের কয়েকজন সমাবেশ শুরু হওয়ার কিছু সময় আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর পোস্টারের ওপর আপত্তিকর লেখা লিখে। এ দৃশ্য দেখে নিজাম হাজারীর অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় লংমার্চকারী ও নিজাম হাজারীর অনুসারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ সরকারদলীয় লোকজনদের নিবৃত করার চেষ্টা করে। কিন্তু লংমার্চকারীদের ওপর কোনো হামলা পুলিশ চালায়নি বলে তিনি দাবি করেন।
আপনার মতামত জানানঃ