জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে সম্প্রতি বৃহস্পতি গ্রহের ওপরের স্তরের বায়ুমণ্ডলে রহস্যময় কার্যকলাপ উদঘাটনের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশেষ করে এ রহস্যময় কার্যকলাপটি দেখা গেছে বৃহস্পতির সুপরিচিত ‘গ্রেট রেড স্পট’ নামের অঞ্চলে, যেটি একসময় নীরস ও গুরুত্বহীন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তুগুলোর একটি হচ্ছে বৃহস্পতি। আর মেঘমুক্ত পরিষ্কার রাতের আকাশে সহজেই এর দেখা মেলে।
এ উজ্জ্বলতার কারণ গ্রহটির উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর আলো, যা ‘অরোরা’ নামে পরিচিত। এমনকি পৃথিবীর মেরু অঞ্চলেও এর দেখা মেলে। বৃহস্পতির ওপরের বায়ুমণ্ডল থেকে আসা আভা এতই দুর্বল যে স্থলভিত্তিক বিভিন্ন টেলিস্কোপের পক্ষে তা বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ করা জটিল হয়ে ওঠে।
তবে, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ইনফ্রারেড সংবেদনশীলতা বিজ্ঞানীদেরকে গ্রহটির ওপরের বায়ুমণ্ডল এতটা স্পষ্টভাবে গবেষণা করার সুযোগ দিয়েছে, যা এর আগে কখনও সম্ভব হয়নি।
বৃহস্পতির ওপরের বায়ুমণ্ডল হল সে জায়গা, যেখানে গ্রহটির চৌম্বকীয় ক্ষেত্র এর নিচের বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে মিলিত হয়। এই অঞ্চলে, বৃহস্পতির নিজস্ব চাঁদ ‘আইও’র বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির উপাদান থেকে দর্শনীয় অরোরার দেখা মেলে।
তবে গ্রহটির বিষুব রেখার কাছাকাছি অঞ্চলের ওপরের বায়ুমণ্ডলের প্রভাব ফেলে মূলত সূর্যালোক।
পৃথিবীর তুলনায় বৃহস্পতি গ্রহে সূর্যালোক পৌঁছায় মাত্র চার শতাংশ। তাই জোতির্বিদরা আশা করেছিলেন, এর নিরক্ষীয় অঞ্চলটি তেমন ভিন্ন কিছু বা আগ্রহের জায়গা হবে না।
২০২২ সালের জুলাইয়ে, জেমস ওয়েব নিজের ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোগ্রাফ (এনআইআরএসপেক)’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃহস্পতি গ্রহের ‘গ্রেট রেড স্পট’ পর্যবক্ষণ করেছিল।
বিস্ময়করভাবে, এইসব পর্যবেক্ষণে এমন এক জটিল ও সক্রিয় অঞ্চল উঠে এসেছে, যেখানে গাঢ় বৃত্ত ও উজ্জ্বল দাগ লক্ষ্য করা গেছে। আর এর বিভিন্ন ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’তে।
“আমরা ভেবেছিলাম গ্রহটির এই অঞ্চলটি সত্যিই নিরস হবে। আর কিছু না হলেও পৃথিবীতে দেখতে পাওয়া ‘নর্দান লাইটস’-এর মতোই আকর্ষণীয় এটি। বৃহস্পতি সবসময় আমাদের অবাক করেই বচলেছে,” বলেছেন যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অফ লেস্টার’-এর টিম লিডার হেনরিক মেলিন।
এই অঞ্চল থেকে নির্গত আলোর চালিকাশক্তি হচ্ছে সূর্য। তবে গবেষণা দলটি ইঙ্গিত দিয়েছে, আরেকটি প্রক্রিয়ার কারণে নিশ্চিতভাবেই এ গ্রহটির ওপরের বায়ুমণ্ডলের কাঠামো বদলে যাচ্ছে।
এর সম্ভাব্য কারণ, মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গের উপস্থিতি ও সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মতো বালিতে তরঙ্গ তৈরি হওয়ার বিষয়টি।
এইসব তরঙ্গ তৈরি হয় বৃহস্পতি গ্রহের নিচের অশান্ত বায়ুমণ্ডলের গভীরে অর্থাৎ ‘গ্রেট রেড স্পট’-এর আশপাশে, যেগুলো উপরের দিকে ভ্রমণ করে গ্রহটির ওপরের বায়ুমণ্ডলের কাঠামো ও নির্গমন পরিবর্তন করে।
মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ পৃথিবীতেও দেখা যায়। তবে সেগুলো বৃহস্পতিতে দেখতে পাওয়া তরঙ্গগুলোর চেয়ে অনেক দুর্বল প্রকৃতির।
গবেষণা দলটি আশা করছে, এ ধরনের আরও পর্যবেক্ষেণ চালিয়ে কীভাবে মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ বৃহস্পতি গ্রহের ওপরের বায়ুমণ্ডলে চলাচল করে এমনকি অঞ্চলটির শক্তির গতিবিদ্যা সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা মিলবে।
আপনার মতামত জানানঃ