পিরোজপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবং তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রবিবার (১৭ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ নির্দেশ দেন।
রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক আলী আকবর সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।
২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুইবার পিরোজপুর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন আউয়াল। এ সময়ে সরকার দলীয় এমপি এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রায় ৪৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
এসব মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ছয় জন ভুয়া ব্যক্তিকে ভূমিহীন দেখিয়ে সরকারি খাস জায়গা ইজারা নেওয়া এবং সেখানে তার স্ত্রীর নামে তিনতলা ভবন নির্মাণ করার অভিযোগে রয়েছে। এছাড়া, স্বরূপকাঠি উপজেলার ডাকবাংলোর কাছে সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে আধুনিক ডাক বাংলো নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া এবং পিরোজপুরে ৪৪ শতাংশ সরকারি খাস জমির চারদিকে দেয়াল নির্মাণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলা দুটিতে এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৫ টাকার এবং লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ৫০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
প্রথম মামলার অভিযোগে বলা হয়, এ কে এম এ আউয়াল অবৈধ উপায়ে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৫ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মোট ১৫ কোটি ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
এর আগেও ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর দুদকের উপপরিচালক পরিচালক মো. আলী আকবর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় বরিশালে ৩টি মামলা দায়ের করেন। তিনটিতে সাবেক এমপি আউয়াল এবং একটিতে তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে আসামি করা হয়। ওই তিন মামলায় তারা জামিনে আছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে খাস জমি দখল থেকে শুরু করে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে আছে দেশের প্রায় অধিকাংশ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। নির্বাচনে অঢেল টাকা ঢেলে জয়ী হবার থেকেই তাদের এসব মিশন চলতে থাকে। সরকার দলীয় বিধায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে কেউ সাহস করে না। এমন রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনও কোনো ভূমিকা নিতে পারে না। দুদক যেচে নিজেরা যদিও কারো কারো বিরুদ্ধে মামলা করে, সেগুলোতেও তেমন কোনো প্রাণ থাকে না। জামিন নিয়ে বের হয়ে আসেন। শুধু সম্পত্তি ক্রোক আর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার মধ্য দিয়ে এসবের শাস্তি নিরূপণ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৬
আপনার মতামত জানানঃ