সম্প্রতি ‘ক্লিন ইলেকট্রিসিটি’ তৈরির জন্য শৈবাল ব্যবহার করছেন বিজ্ঞানীরা, যা নবায়নযোগ্য শক্তির নতুন উৎস হতে চলেছে বলে দাবি তাদের।
টেকসই শক্তির উৎস খোঁজার প্রচেষ্টায় শৈবালকে এক নতুন চাবিকাঠি হিসেবে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
‘কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা শৈবাল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক নতুন উপায় আবিষ্কার করেছেন, যা কেবল কার্বন নির্গমন বন্ধই করে না, বরং বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করতেও সাহায্য করে।
‘কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’র ‘অপটিক্যাল-বায়ো মাইক্রোসিস্টেম ল্যাব’-এর গবেষণা দলটির এ গবেষণা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে পিয়ার-রিভিউড জার্নাল ‘এনার্জিস’-এ।
সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে উদ্ভিদ ও শৈবাল সূর্যের আলোকে শক্তিতে রূপান্তর করে এবং এই প্রক্রিয়ায় এরা অক্সিজেন ও ইলেকট্রন তৈরি করে। গবেষকরা শৈবালের এই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া থেকে শক্তি সংগ্রহের এক নতুন পদ্ধতি তৈরি করেছেন।
গবেষকদের এ মডেলটি বিদ্যুৎ তৈরি করতে এইসব ইলেকট্রনকে আটকে রাখে।
“সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে অক্সিজেন ও ইলেকট্রন তৈরি হয়। আমাদের মডেলটি ইলেকট্রনকে আটকে রাখে, যা আমাদের বিদ্যুৎ তৈরিতে সহায়তা করেছে,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগারি’র পোস্টডক্টরাল সহযোগী ড. কিরণকুমার কুরুভিনাশেট্টি।
“বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের মাধ্যমে এ প্রযুক্তি আপনাকে বিদ্যুৎ দেবে। এর একমাত্র উপজাত হল পানি।”
এ ডিভাইসকে ‘মাইক্রো ফটোসিন্থেটিক পাওয়ার সেল’ নামে ডাকা হচ্ছে। এটি বিশেষ প্রকৃতির ঝিল্লির মাধ্যমে আলাদা দুটি চেম্বার নিয়ে গঠিত। একটি চেম্বারে দ্রবণ হিসেবে শৈবাল থাকে ও অন্য চেম্বারে ‘পটাসিয়াম ফেরিসিয়ানাইড’ নামের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা ইলেকট্রনকে আটকে রাখতে সহায়তা করে।
এসব শৈবাল যখন সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায় তখন এরা ইলেকট্রনকে মুক্ত করে দেয়, যা পরে ঝিল্লিতে ইলেক্ট্রোডের মাধ্যমে আটকে যায় এবং বিদ্যুত প্রবাহ তৈরি করে।
আরও বিস্ময়কর বিষয় হল, এ সিস্টেমটি দিন ও রাত উভয় সময়েই কাজ করে।
“মানুষের মতোই শৈবাল ধারাবাহিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় এবং এরা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন ছেড়ে দেয়,” বলেছেন এ গবেষণার সহ-লেখক ও পিএইচডি গবেষক ধিলিপ্পন পানিরসেলভাম।
“এই প্রক্রিয়া চলাকালীন ইলেকট্রন মুক্ত করে দেন গবেষকরা, তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয় না, এমনকি এ প্রকিয়ায় ধারাবাহিকভাবে ইলেকট্রনও সংগ্রহ করা যায়।”
এ ডিভাইসটির প্রতিটি পাওয়ার সেল খুবই ছোট আকৃতির, কেবল দুই সেন্টিমিটার বাই চার মিলিমিটার। তবে, বর্তমানের এসব প্রযুক্তি বিদ্যুতের যোগান দিতে প্রচলিত সৌর প্যানেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে থাকলেও গবেষকরা এর ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী।
একক পাওয়ার সেলের সবোর্চ্চ ক্ষমতা এক ভোল্ট, যা ‘ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি)’-এ ব্যবহৃত বিভিন্ন সেন্সরের মতো স্বল্প-শক্তির এসব ডিভাইসকে শক্তি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ‘ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি)’ মানে বিভিন্ন জিনিসপত্রের সঙ্গে ইন্টারনেটের সংযোগ।
এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’র ‘মেকানিকাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের অধ্যাপক মুথুকুমারান পাকিরিসামি দাবি করেছেন, এই প্রযুক্তিটি একটি কার্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যের পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস হতে পারে। তিনি তুলে ধরেছেন, গবেষকদের এ সিস্টেমটি এরইমধ্যে থাকা প্রযুক্তির তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা দেয়।
সিলিকনভিত্তিক বিভিন্ন সৌর প্যানেলের আয়ু শেষ হওয়ার পর বর্জ্য হিসাবে ফেলে দেওয়া বিপজ্জনক, কারণ এগুলো তৈরিতে সাধারণত বিপজ্জনক পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। এর বিপরীতে, শৈবালভিত্তিক এ সিস্টেমটি ‘বায়োকম্প্যাটিবল পলিমার’ ব্যবহার করে বানানো হয়েছে। আর এসব উপাদান নিরাপদ, সহজে পচে যায় ও এটি বানানোও বেশ সাশ্রয়ী।
ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারসহ আরও গবেষণা ও বিকাশের সঙ্গে এই শৈবালভিত্তিক প্রযুক্তিটি আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
আপনার মতামত জানানঃ