পতিতাবৃত্তিকে সভ্য সমাজ কখনোই ভালো চোখে দেখে নি, দেখার প্রশ্নও আসে না। তারপরেও এর চর্চা চলে আসছে বহুকাল আগে থেকেই। মধ্যযুগীয় ইউরোপও এর বাইরে ছিল না। সেখানেও পতিতা নারীর সংখ্যা ছিল প্রচুর। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, গির্জার যাজকমণ্ডলী এর চর্চা থামাতে কিংবা পতিতালয়ে না যেতে মানুষকে তেমন একটা বলতো না বলেই জানা যায়। আসলে তারা মনে করতো যে, যদি পুরুষদেরকে পতিতা নারীদের সাথে মিলিত হতে মানা করা হয়, তাহলে এর ফলাফল হতে পারে আরো ভয়ানক। কেমন? তারা ভাবতেন, এর ফলে পথভ্রষ্ট সেসব পুরুষেরা আরো ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে, সমাজে বেড়ে যাবে ধর্ষণের মতো অপরাধ, সম্ভ্রমহানির শিকার হবেন অভিজাত পরিবারের নারীরা এবং সর্বোপরি বেড়ে যাবে সমকামিতার হার।
উপরোক্ত আশঙ্কাগুলোর কারণে যাজকেরা সরাসরি এর বিরুদ্ধে তেমন একটা কথা বলতেন না। তবে তাই বলে দেহব্যবসার সাথে জড়িত নারীরা যে নির্বিঘ্নে তাদের কাজকারবার চালিয়ে যেতে পারতো, ব্যাপারটা ঠিক তেমন না। তৎকালীন ইউরোপে দেহব্যবসার সাথে জড়িত নারীদের জন্য বিভিন্ন অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, যাতে করে সমাজের চোখে তাদের নিম্ন মর্যাদার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এছাড়া তারা কেমন ধরনের পোশাক পরিধান করতে পারবে, সেটাও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল, যাতে করে সাধারণ নারীদের থেকে তাদেরকে আলাদা করা যায়।
পতিতা নারীরা শহরের নির্দিষ্ট কোনো এক জায়গায় থাকত। কোনোপ্রকার আইনী সহায়তা পাবার অধিকার তাদের ছিল না। পতিতালয়গুলোও খোলাখুলিভাবে তাদের কাজ চালাতো না। সাধারণত বাথ হাউজ কিংবা শিল্পের দোকানের আড়ালে সেগুলো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতো।
শারীরিক সম্পর্ক নামক বিষয়টি বৈধতা পায় বৈবাহিক বন্ধনের মতো আদি অথচ অমলিন এক বন্ধনের মধ্য দিয়ে। মধ্যযুগীয় ইউরোপও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সেখানেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার পবিত্র এ সম্পর্ককে বৈবাহিক বন্ধনের দৃঢ়তার পেছনে অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে ভাবা হতো। তবে দুজনের কেউ যদি সন্তান জন্মদানে অক্ষম হতো কিংবা সঙ্গীকে পরিতৃপ্ত করতে অক্ষম হতো, তাহলে অপরজন আদালতে গিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করতে পারতো!
এক্ষেত্রে স্বামী দোষী হলে তাকে আদালতে প্রমাণ করা লাগতো যে, না, তিনি এখনও একজন সক্ষম পুরুষ! নাহলে বিয়ে টিকতো না। তৎকালীন ইউরোপে এরকম অনেকগুলো কাহিনীরই সন্ধান পাওয়া যায়, যেখানে নপুংসতার দরুন স্বামীকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। এর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাতটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১১৯৮ সালে। অভিযোগ আনা হয়েছিল ফ্রান্সের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ। অভিযোগকারিনী ছিলেন ফিলিপেরই ২য় স্ত্রী, যিনি একইসাথে ড্যানিশ রাজা ১ম ভ্যালডেমারের কন্যা, ইঙ্গেবর্গ।
জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন প্রথা চলে আসছে সেই আদিকাল থেকে। প্রাচীন রোম, গ্রিস, মিশর- সবখানেই নানা রকম পদ্ধতির কথা জানা যায়, যার সাহায্যে সেখানকার দম্পতিরা জন্মনিয়ন্ত্রণ করে থাকতো। ব্যতিক্রম ছিলো না মধ্যযুগীয় ইউরোপও। তবে এতদিন পর্যন্ত গবেষকদের ধারণা ছিল যে, মধ্যযুগে বোধহয় ইউরোপে জন্মনিয়ন্ত্রণের হার হ্রাস পেয়েছিল। কারণ তৎকালে গির্জার যাজকেরা এ চর্চাকে বেশ খারাপ চোখেই দেখতেন। তাদের মতে, সন্তান হলো ঈশ্বরের উপহার। অতএব তাকে জন্ম নিতে দেয়া উচিত। আর বিয়ের আসল উদ্দেশ্যও এটা। এছাড়া উচ্চ শিশুমৃত্যু হারের কারণে নারীরাও জন্মনিয়ন্ত্রণে আগ্রহী ছিলেন না বলেই মনে করতেন গবেষকেরা।
তবে সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, তৎকালে ৩০ বছরের উর্ধ্বে নারীদের মাঝে সন্তান জন্ম দেয়ার হার বেশ কমে গিয়েছিল। এর অর্থ একটাই হতে পারে। তারা কোনো না কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রথার দ্বারস্থ হচ্ছিল। তবে তারা ঠিক কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতেন, সেই সম্পর্কে লিখিত তেমন কোনো দলিল নেই বললেই চলে। জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রতি গির্জার কঠোর বিরুদ্ধাচরণই এ দুষ্প্রাপ্যতার পেছনে মূল নিয়ামক বলে মনে করা হয়।
এ সময় নারীরা যে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতো, সেগুলো মূলত বিভিন্ন ধাত্রীদের মাধ্যমেই তারা শিখে নিত। বীর্যপাতের পূর্বে পুংজননাঙ্গ সরিয়ে নেয়াও ছিল জন্মনিয়ন্ত্রণের একটি মাধ্যম। সেই সাথে উদ্ভিজ্জ নানা উপাদানের প্রতিও মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
আপনার মতামত জানানঃ