একটি তারা প্রাথমিক জীবনে দ্রুত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন উপাদান সংশ্লেষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিউশন প্রক্রিয়ায় অবিশ্বাস্য পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন করে থাকে।
বিশাল আকারের ছায়াপথে তারা’র গঠন থামাতে পারে ব্ল্যাক হোল— সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
পরিবর্তনশীল একটি মহাবিশ্বকে বাস্তবে কল্পনা করা বেশ কঠিন। অদ্ভুত ব্যতিক্রমী সব বিষয় থাকার পরও মহাবিশ্বের এসব পরিবর্তন শামুকের গতিতে ঘটতে থাকে। উদাহরণ হিসেবে প্রথম মহাবিশ্বে ধারাবাহিক ছায়াপথের গঠনের বিষয়টিকে ধরা যেতে পারে।
বিভিন্ন ছায়াপথের বিশাল মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র এর আশপাশের ধুলাবালি ও গ্যাস শুষে তারা’র বিশাল সংগ্রহ তৈরি করে। আর এসব তরুণ ছায়াপথের একেবারে কেন্দ্রে, বিভিন্ন সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল ছায়াপথকে শক্তিশালী কোয়াসারে পরিণত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) এর একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, ব্ল্যাক হোলগুলো এক শক্তিশালী সৌর বায়ু তৈরি করতে পারে, যা বিভিন্ন ছায়াপথ যে তারা তৈরি করতে পারে এর চেয়েও দ্রুত গ্যাস সরিয়ে দিয়ে নতুন তারা তৈরি হওয়ার বিষয়টিকে বন্ধ করে দেয়।
ব্ল্যাক হোলের আশপাশের বিভ্রান্তি ও রহস্য দূর করতে এগুলো বিশাল তারা’র মৃতদেহ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞান বিষয়ক সাইট ‘ইউনিভার্স টুডে’।
যখন বিভিন্ন সুপারম্যাসিভ তারা এদের জীবনের শেষ দিকে চলে আসে তখন এগুলো মূল একটি বিন্দুতে পরিণত হয়, যা এতটাই গাঢ় যে, আলো প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার বেগে এর মধ্যদিয়ে ভ্রমণ করলেও এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারে না। দাবি করা হয়, অনেক ছায়াপথের কেন্দ্রে এমন সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে।
একটি তারা প্রাথমিক জীবনে দ্রুত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন উপাদানে সংশ্লেষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিউশন প্রক্রিয়ায় অবিশ্বাস্য পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন করে থাকে।
সম্প্রতি জেডব্লিউএসটি ব্যবহার করে নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল খুঁজে পেয়েছে, দূরবর্তী ছায়াপথের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বাতাসের ৬০ শতাংশের বেশি নিরপেক্ষ গ্যাস দিয়ে তৈরি এবং আজ পর্যন্ত এগুলো অদৃশ্য রয়েছে।
এখন অবধি কেবল আয়নযুক্ত গ্যাস শনাক্ত করা সম্ভব ছিল, যেটি বৈদ্যুতিক চার্জ বহন করে থাকে ও গরম হয়। এ গবেষণায় প্রাপ্ত নিরপেক্ষ গ্যাস প্রকাশ করেছে, নিরপেক্ষ গ্যাস ঠাণ্ডা ছিল ও জেডব্লিউএসটি এটিকে শনাক্ত করতে পেরেছে।
নিরপেক্ষ গ্যাসের শক্তিশালী বহিঃপ্রবাহ মহাবিশ্বের প্রান্তে অবস্থিত কিছু ছায়াপথের মূলে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থেকে আসে বলে ধারণা করা হয়।
এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার ‘সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি’র ড. রেবেকা ডেভিসের নেতৃত্বে গবেষণা দলটি শনাক্ত করেছে, ১০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি দূরবর্তী ছায়াপথের মধ্যদিয়ে ব্ল্যাক হোল প্রবাহিত হতে পারে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচারে’ প্রকাশিত এ গবেষণাপত্রটিতে ব্যাখ্যা করা হয়, কীভাবে ‘তারায় গ্যাস রূপান্তরিত হওয়ার চেয়ে বহিঃপ্রবাহ দ্রুত গ্যাস অপসারণ করছে, যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, এই বহিঃপ্রবাহ ছায়াপথের বিবর্তনে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।’
গ্যাস ও ধুলাবালির অভাবের কারণে তারার গঠন ধীর হয়ে যাবে, এমনকি শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাবে। ঠিক যেমন একটি বনে সবসময় পুরানো বা মৃত গাছের পরিবর্তে নতুন গাছ জন্মায়, তেমনি ছায়াপথগুলোতেও সাধারণত মৃত তারাকে প্রতিস্থাপন করার জন্য নতুন তারা গঠন করে থাকে।
তবে, শেষ পর্যন্ত বন ও ছায়াপথ এদের বৃদ্ধি ও বিকাশের ধারা চালিয়ে যেতে পারবে না এবং অবশেষে এগুলো স্থির হয়ে যাবে ও জীবনের শেষ প্রান্তে থাকা বিভিন্ন তারা মিটমিট করে জ্বলতে জ্বলতে এক সময় মারা যাবে।
গবেষণা দলটি খুঁজে পেয়েছে, সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলসহ সক্রিয় গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াস গ্যাসের এই বহিঃপ্রবাহের পিছনের মূল চালিকা শক্তি।
আপনার মতামত জানানঃ