কুষ্টিয়ার মিরপুরে মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এনামুল হক নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার জন্য নিজ কর্মীদের আহ্বান জানালেন। গত শনিবার(০৯জানু) সন্ধ্যায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এক নির্বাচনী পথসভায় তিনি তার কর্মী-সমর্থক এবং ভোটারদের এভাবে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। আজ বুধবার(১৩জানু) এই বক্তব্যর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক বলছেন, ভোট ভয়ের কোনো ব্যাপার না। আমি যদি ওপেন সিল মেরে দিই তাহলে কারও কিছু বলার নেই। সবাই নৌকায় সিল মেরে দেবেন প্রকাশ্যে, কোনো সমস্যা নাই। যেখানে সবাই একতরফা ভোট দেবে সেখানে কেন আপনি সন্দেহের মধ্যে থাকবেন। তাই কাউন্সিলরের দুটি গোপন কক্ষে আর মেয়রের ভোটটি প্রকাশ্যে দেবেন, কাউকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
আরো বলেন, ‘আপনি যদি ওপেন ভোট দেন, তাহলে তো কেউ নিষেধ করতে পারবে না। কারণ আপনাদের মধ্যে যাতে দূরত্ব না বাড়ে। ভোট আপনিও দিতে চেয়েছেন আরেকজনও দিতে চেয়েছে। এখন আরেকজন যদি ভেতরে ঢুকে ভোট দেয় তাহলে মনে সন্দেহ দেখা দেবে। মনে হবে ও হয়তো নৌকায় ভোট দেয়নি। তাই আপনারা সব ওপেন করে দেন। তাহলে আর একে অপরের প্রতি সন্দেহ থাকবে না। আপনারা কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের ভোট ভিতরে গিয়ে দেবেন আর এই ভোটটি (মেয়র) সরাসরি সামনে দেবেন।’
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভায় ১৬ জানুয়ারি নির্বাচন হবে। সেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপির রহমত আলী রব্বান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনের আগে আওয়ামী প্রার্থী প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালে মিরপুর পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আরিফুর রহমান গত সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এর অনুলিপি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি জানার পর মেয়র প্রার্থী এনামূল হককে ডেকে এনে সতর্ক করা হয়েছে। তাকে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের পরও কেন ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান এ রিটার্নিং অফিসার।
রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দলীয় পরিচয়ে মেয়র নির্বাচনে সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে স্থানীয় নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ অধিকাংশ প্রার্থীরই রয়েছে। নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করে প্রার্থীদের এমন প্রচারণা নতুন কিছু নয়। তবে অবশ্যই তাকে সরকার দলীয় হতে হবে। অন্যদের ক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসাররা যথাযথ ব্যবস্থা দ্রুত নিতে পারলেও সরকার দলীয় প্রার্থীদের বেলায় সঙ্গত কারণেই চুপ থাকেন। সরকার দলীয় প্রার্থীদের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এক ধরনের নমনীয় ব্যাপার কাজ করে। কোথাওবা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতেও দেখা যায় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রার্থীদের এভাবে নির্বাচনী বিধি লঙ্গন স্পষ্ট হয় যে নির্বাচনের নামে আসলে কী হতে চলেছে। নির্বাচন কমিশন নিজেদের স্বচ্ছতা নিয়ে গলাবাজি করলেও আদতে পরীক্ষার দিন তারা ঘুমিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ তোলেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য সিইসিকে সজাগ দৃষ্টি এবং বিধি লঙ্গনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৪
আপনার মতামত জানানঃ