ভারতের ৭৫তম প্রজাতন্ত্র দিবসের চার দিন আগে ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় নতুন রাম মন্দিরের ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় ৭৩ বছর আগে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদও গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরে একই ধরনের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
আফগান আক্রমণকারীদের বেশ কয়েকবারের হামলায় সোমনাথ মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সব চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল একাদশ শতাব্দীতে মাহমুদ গজনির আক্রমণের কারণে। স্বাধীনতার পর এই মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং রাজেন্দ্র প্রসাদের উপস্থিতিতে মন্দিরে পূজা শুরু হয়।
দেশের রাষ্ট্রপতির এরকম একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার স্বপক্ষে মত দেননি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। নেহরু ১৯৫১ সালে রাজেন্দ্র প্রসাদকে লিখেছিলেন, “প্রিয় রাজেন্দ্র বাবু, সোমনাথের বিষয়টি নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমি যেটা আশঙ্কা করেছিলাম যে এই বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যা করা হবে, সেটাই হয়েছে। আমাদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে যে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার কীভাবে এরকম একটা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। বিশেষ করে যখন এই কর্মসূচিকে ধর্মীয় পুনর্জাগরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন আর মি. নেহরুর উত্থান হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করার সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে।
নেহরুর জাতীয়তাবাদ ছিল উপনিবেশবাদ বিরোধী, যার কেন্দ্রে সংখ্যাগুরুত্ববাদ নয় বরং ছিল বহুত্ববাদ। অন্যদিকে মোদীর জাতীয়তাবাদ আসলে তার দলের আদর্শগত ভিত্তি যে সংগঠনের, সেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের জাতীয়তাবাদ। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, উপনিবেশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করেছে আরএসএস।
সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদ
নেহরুর জাতীয়তাবাদে ভারতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দাস হিসাবে বিবেচনা করা হতো, কিন্তু মি. মোদী এবং আরএসএস মনে করে ভারত আসলে ১২০০ বছর ধরেই দাস হয়ে ছিল।
আরএসএস এটাও মনে করে যে পুরো মধ্যযুগ ধরেই ভারত আসলে গোলাম হয়ে থেকেছে। সেজন্যই মুসলিম শাসকদের প্রতীক ও নির্মাণগুলি মুছে ফেলাই আরএসএস আর বিজেপির ভাবাদর্শের অংশ।
জওহরলাল নেহরু চেয়েছিলেন সরকার যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকুক অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদী নিজেই রাম মন্দিরে ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন।
ঐতিহাসিক মুকুল কেশবন মনে করেন এই দুটি ঘটনাই ভারতীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুকুল কেশবন বিবিসিকে বলছিলেন, “ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য রেখাটা মি. নেহরু কখনই ভাঙতে চাননি। অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদী ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যকার সীমারেখা প্রায় মুছেই ফেলেছেন। অযোধ্যায় রাম মন্দির একটি শক্তিশালী ধর্মীয় প্রতীক হলেও প্রাথমিকভাবে এর মাধ্যমে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদের একটা রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া হলো।”
“আরএসএস ও তার নেতাদের পরিকল্পনায় বাবরি মসজিদ এক নম্বরে ছিল, কিন্তু আরও বেশ কয়েকটি মসজিদও তাদের নজরে রয়েছে। বাবরি মসজিদ নিয়ে তাদের বিজয় তো প্রকাশ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদী ভাবাবেগকে উস্কে দেওয়া এবং সংখ্যালঘুদের ভয় দেখানোর এই অব্যাহত প্রচেষ্টা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের যে গণতান্ত্রিক ভিত্তি, সেটাকেই ধ্বংস করে দেবে”, যোগ করেন মি. কেশবন।
চলতি মাসেই বেনারসের জ্ঞানবাপী মসজিদে হিন্দু পুরোহিতদের পূজা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। নিম্ন আদালতের এই সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে নারাজ এলাহাবাদ হাইকোর্টও। মথুরাতেও মসজিদ আর ইদ্গাহ নিয়ে একই ধরনের দাবি আছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর।
অনেকে মনে করেন, ১৯২৫ সালে আরএসএস প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা হিন্দু সংখ্যাগুরু কেন্দ্রিক যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে এসেছে কংগ্রেসের উপনিবেশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদের বিপরীতে, তা এখন পূর্ণতা পেতে চলেছে।
মুকুল কেশবনের কথায়, “হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক ধারাটি ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাস নতুন করে লেখার চেষ্টা করছে এবং উপনিবেশবিরোধী জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। স্বাধীনতা আন্দোলনে আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভার ভূমিকা ছিল নগণ্য। বহুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর চিন্তাধারার প্রতি চরম শত্রু মনোভাবাপন্ন এই দুটি সংগঠনই।”
‘রাম মন্দির নির্মাণ ইতিহাস বদলানোর জন্য নয়’
বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী সমিতির সদস্য ও লেখক স্বপন দাশগুপ্ত অবশ্য বিশ্বাস করেন না যে রাম মন্দির নির্মাণ আর ভগবান রামচন্দ্রর মূর্তিতে প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ করার ফলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
দাশগুপ্ত বিবিসিকে বলছিলেন, “দেখুন, সাংবিধানিক পরিচয় আর সাংস্কৃতিক পরিচয়কে আলাদা করা যায় না। দুটি একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নেহরুপন্থীরা যে ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনা গ্রহণ করার চেষ্টা করছিলেন, সেখানে তারা মনে করতেন যে সাংবিধানিক আর সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মধ্যে কোনও সম্পর্কই নেই। তারা মনে করেন ১৯৫০ সালে ভারত গঠিত হয়েছিল, কিন্তু ভারত তো হাজার হাজার বছর ধরে ছিলই।”
“আমি মনে করি অযোধ্যার মাধ্যমেই ‘ভারতীয় পরিচয়’ আবারও ফিরে এল। আমরা ইতিহাস সংশোধন করতে পারি না, কিন্তু আগে তো স্বীকারই করত না যে মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাসকে তো স্বীকার করতে হবে। রাম মন্দির নির্মাণ ইতিহাস বদলানোর জন্য নয়, ইতিহাসের ভুলগুলি যাতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায়, সেটাই রাম মন্দিরের গুরুত্ব”, বলছিলেন স্বপন দাশগুপ্ত।
মধ্যযুগীয় ভারতে উপাসনালয়ের ওপরে হামলাকে কি আধুনিক গণতান্ত্রিক ভারতে হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখা উচিত? ভারতের প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী আসগর আলী ইঞ্জিনিয়ার বলতেন, “সেই সময়ের শাসকরা উপাসনালয় ধ্বংস করতেন যুদ্ধ বা হামলায় বিজয়ের প্রতীক হিসাবে। সেটাকে বর্তমান সময়ে হিন্দু বনাম মুসলিম দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখা উচিত নয়।“
স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, “হিন্দুত্ববাদ যে একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ধর্ম এর একটি অংশ। আমিও বিশ্বাস করি, রাষ্ট্র ও ধর্মকে এক করা উচিত নয়। অযোধ্যায় রাষ্ট্র যুক্ত হয়েছিল, কিন্তু রাষ্ট্র নিজেকে এতটাও দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা হুমকির মুখে পড়েছে বলে আমি মনে করি না। যদি ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য হয়, তাহলে সে কথা বলা যায়।”
রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্ক
ভারতের সংবিধানের মূল রচয়িতা বি আর আম্বেদকর বলতেন, ধর্মের প্রতিটি দিক বা ধর্মের প্রতিটি রীতিনীতির প্রতি সম্মান দেখানো সম্ভব নয়, অর্থাৎ ধর্মকে সম্মান করা উচিত কিন্তু সমালোচনাও করতে হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন থাকা উচিত, কিন্তু যখন ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করতে শুরু করে আর ধর্ম বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন রাষ্ট্রেরও হস্তক্ষেপ করা উচিত। দ্বিতীয়ত, ধর্ম থেকে রাষ্ট্র নিজেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে না বরং সকল ধর্ম থেকে নীতিগত দূরত্ব বজায় রাখে।”
“যেমন, অস্পৃশ্যতা মেনে নেওয়া যায় না, তাই ব্যক্তিগত আইনে থাকলেও সেটা অবিকৃতভাবে রাখা যাবে না। রাষ্ট্রকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কখন ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং কখন দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আমরা অবশ্যই আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের অংশ হিসাবে স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের পথে কোনও বাধা হিসাবে ধর্মকে আসতে দেব না”, লিখেছিলেন মি. আম্বেদকর।
যখনই প্রয়োজন পড়েছে, তখনই ভারত রাষ্ট্র ধর্মের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। পশুবলি বন্ধ করা এবং দলিতদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকার তো রাষ্ট্রই দিয়েছিল।
কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট
জওহরলাল নেহরু সবসময়ে যে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন তাকে দুর্বল করে দেওয়ার কাজটা শুরু হয়েছিল তার পরিবারের মধ্যে থেকেই। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট শুরু হয় আশির দশক থেকে।
জনপ্রিয়তা ক্রমশ কমতে থাকায় কংগ্রেস এমন অনেক সিদ্ধান্ত নেয় যা আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকেই শক্তিশালী করে। ইন্দিরা গান্ধী আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়কে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দিয়েছিলেন।
আবার হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার সাহায্যও নিয়েছিলেন তিনি। পাঞ্জাবে অকালি দলকে চাপে ফেলার জন্য জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালেকে উৎসাহিত করার অভিযোগও রয়েছে তারা বিরুদ্ধে। মিসেস গান্ধীই ১৯৮৩ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সহায়তায় নির্মিত ভারত মাতা মন্দিরে পূজা শুরু করেছিলেন।
ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর ১৯৮৪ সালে তার পুত্র রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হন এবং তার নীতিমালা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠে যায়। শাহ বানো মামলায় মুসলিম মৌলবাদীদের কাছে আত্মসমর্পণের অভিযোগ ওঠে রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে।
শাহ বানো মধ্য প্রদেশের ইন্দোরের একজন মুসলিম নারী ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় তার স্বামীকে খোরপোষ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু রাজীব গান্ধী সংসদে আইন পরিবর্তন করে আদালতের ওই রায় উল্টিয়ে দিয়েছিলেন।
রাজীব গান্ধীর এই সিদ্ধান্তটাই হিন্দুত্ববাদীদের সামনে একটা সুযোগ করে দেয় একথা বলার, যে কংগ্রেস মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি করে। তখন থেকেই মুসলিম তোষণ শব্দটির প্রচলন ঘটে। এরপর হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা তাদের রাজনীতিকে শক্তিশালী করে তুলতে থাকেন।
ভারতীয়রা কি সাম্প্রদায়িক হয়ে গেছে?
প্রথম সাধারণ নির্বাচনে, ১৯৫২ সালে, জওহরলাল নেহরুর বিজয়কে ধর্মনিরপেক্ষতার জয় হিসাবে দেখা হয়। তখন বলা হতো যে পাকিস্তান একটা ইসলামিক রাষ্ট্র হলেও ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠী কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের পক্ষেই রায় দিয়েছে। যদিও দেশভাগের পর সাম্প্রদায়িক হিংসার স্মৃতি তখনও মানুষের মনে টাটকা ছিল।
যখন বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়, তখন রাম মন্দিরের জন্য প্রচারে নামা বিজেপি নেতারাও প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। সেই সময়ে অটল বিহারী বাজপেয়ী বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী সমিতি থেকে পদত্যাগের প্রস্তাব দেন, যদিও সেই পদত্যাগপত্র তার দল গ্রহণ করেনি।
সাংবাদিক করণ থাপারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অটলবিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন, “৬ই ডিসেম্বর অযোধ্যায় যা হয়েছিল, তা হওয়া উচিত হয়নি।”
কিন্তু এখন সময় বদলেছে এবং বিজেপির নেতা-কর্মীরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়ে কোনও দুঃখ প্রকাশ করেন না। বস্তুত, রাম মন্দির অভিযানে সামনের সারিতে ছিলেন যে বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী, তিনি এ নিয়ে গর্ব অনুভব করেন।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর উত্তর ভারত ও মুম্বাইয়ে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়। হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিশেষজ্ঞ এবং ‘মোদীজ ইন্ডিয়া’, অর্থাৎ মোদীর ভারত নামে বইটির লেখক অধ্যাপক ক্রিস্টোফ জেফরলোকে প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতীয়দের সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে তাদের রক্তেই ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। সত্যিই কী তাই?
জবাবে মি. জেফরলো বলেন, “এখন পুরো পরিস্থিতিই পাল্টে গেছে। এখন আর আমরা বলতে পারি না যে ভারতীয়রা স্বভাবগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ। অযোধ্যা আন্দোলন যখন শুরু হয় ১৯৮৪ সালে, সেই সময়ে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা খুব কঠিন ছিল। পর পর অনেক দাঙ্গা হয় ১৯৮৯ সাল থেকে আর ওইসব দাঙ্গাগুলো মেরুকরণের ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিল। আমি এটা বলতে পারি না যে কোনও মানুষ স্বভাবগতভাবে সাম্প্রদায়িক। ভয় দেখিয়ে মানুষকে সাম্প্রদায়িক বানানো হচ্ছে। শত্রুকে সামনে দাঁড় করানো হয় এবং নিরাপত্তাহীনতার ভাবনা তৈরি করা হয়।“
ক্রিস্টোফ জেফরলো বলছেন, “১৯৯২ সালে এবং তার কিছুদিন আগে থেকে হিন্দুত্ববাদীদের কর্মসূচিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল, দ্বন্দ্বও ছিল, কিন্তু এখন বিজেপির পক্ষে হিন্দুদের একত্রিত করা কঠিন নয়।”
আপনার মতামত জানানঃ