সৌরমণ্ডলে শুধুমাত্র একটি গ্রহের সুস্পষ্ট বলয় রয়েছে; সেটি হচ্ছে ‘শনি’। শনির সেই বলয়ই নাকি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
২০১৮ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এক বিশেষ মহাজাগতিক ঘটনা নিশ্চিত করেছে। নাসা জানিয়েছে, শনির অনন্য বলয় পাকাপাকিভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। বলয়গুলোকে ধূমকেতু, গ্রহাণু বা ভেঙে যাওয়া উপগ্রহের টুকরো দিয়ে তৈরি বলে মনে করা হয়। শনির মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রবল। তাই শনির মাটিতে পৌঁছনোর আগেই ধূমকেতু এবং গ্রহাণুগুলো ভেঙে যায়।
ধূমকেতু, উপগ্রহ এবং গ্রহাণুর এই ভাঙা টুকরোগুলির উপর মূলত বরফ এবং ধূলিকণার প্রলেপ থাকে। নাসা জানিয়েছে, গ্রহের শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ টান এই বলয় থেকে বরফের কণাগুলোকে আশ্চর্যজনক গতিতে নিজের দিকে টেনে নিচ্ছে। ফলে বলয়গুলি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, এই মুহূর্তে শনি গ্রহে প্রতি সেকেন্ডে ১০ হাজার কিলোগ্রাম বলয় বৃষ্টি হচ্ছে। যা কিছু ক্ষণের মধ্যেই একটি বড় সুইমিং পুল ভর্তি করার জন্য যথেষ্ট। বিগত কয়েক কোটি বছরে বলয় বৃষ্টির পরিমাণ অনেক গুণে বেড়ে গেছে। তবে কেন এমনটা হচ্ছে, তার পাকাপাকি উত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে নেই।
যদিও নাসা জানিয়েছে শনির বলয়গুলো সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হতে কয়েক যুগ সময় লাগবে। তবে পৃথিবী থেকে শনির বলয় দেখা যাবে আর মাত্র কয়েক বছর। কিন্তু কেন? নাসার দাবি, ২০২৫ সালের গোড়ার দিক থেকেই পৃথিবী থেকে শনির বলয় আর দেখতে পাওয়া যাবে না। কারণ, ওই সময় পৃথিবীর সঙ্গে একটি বিশেষ কোণ করে অবস্থান করবে শনি।
এমন এক অবস্থানে থাকবে যেখান বলয়গুলিকে পৃথিবী থেকে দেখা যাবে না। তবে চিন্তার কারণ নেই। বেশি দিন শনির মহাজাগতিক বলয়কে চোখে হারাবেন না বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীর হিসাবে সূর্যের চারপাশে কক্ষপথ সম্পূর্ণ করতে শনির সময় লাগে প্রায় ২৯.৪ বছর। ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই শনি আবার এমন এক অবস্থানে চলে আসবে, যখন পৃথিবী থেকে আবার শনির বলয় দেখা যাবে।
নাসা জানিয়েছে, ২০৩২ সাল নাগাদ আবার স্বমহিমায় ‘ফিরে আসবে’ শনির বলয়। আবার দেখতে পাওয়া যাবে সেটিকে। বর্তমানে পৃথিবীর সাপেক্ষে শনি এমন এক অবস্থানে রয়েছে, যেখান থেকে পৃথিবীর মানুষ এই বলয় পরিষ্কার দেখতে পান। তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। শনি যে হেতু বলয়ে থাকা বরফের কণাগুলি নিজের দিকে টেনে নিচ্ছে, সে ক্ষেত্রে বলয় সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হতে কত সময় লাগবে?
নাসার বিজ্ঞানীদের দাবি, শনির বলয়গুলো সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে এখনও প্রায় ১০ কোটি বছর সময় লাগবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, শনি এখন ‘বৃদ্ধ’। এই গ্রহের জন্ম সাড়ে ৪০০ কোটি বছরেরও বেশি আগে। ফলে সেই তুলনায় বলয় হারাতে আর বেশি দিন সময় নেই শনির।
১৬১০ সালে ইটালির জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও দুরবিন দিয়ে শনির বলয় প্রথম চাক্ষুষ করেন। তবে বর্তমানে যে কেউ ভাল দুরবিন নিয়ে শনির বলয় দেখতে পারেন।
আপনার মতামত জানানঃ