পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার গৈয়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুদ্দিনকে (৫০) চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে আহত করলেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হান্নান মিয়া। গতকাল শুক্রবার(০৮জানু) জুমার নামাজের পর উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ গৈয়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষক শামসুদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হান্নান খানের ভাই হামিদ খান স্কুলের একটি কক্ষ দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার সভাপতিকে অবহিত করলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। আজ (গতকাল) জুমার নামাজের পর বিদ্যালয়ে বসে উপবৃত্তির তালিকা তৈরি করছিলাম। সে সময় সভাপতি হান্নান এসে তার ভাইয়ের দখল করা স্কুলের কক্ষে কেন বিদ্যুতের লাইন দেওয়া হয়নি জানতে চান। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে কক্ষে থাকা চেয়ার দিয়ে আমাকে পেটানো শুরু করেন। এতে বাম হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে।’
এ ঘটনার পর একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জলিল হাওলাদারসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক শামসুদ্দিনের বাম হাতের তালু ও আঙুল আঘাতে থেঁতলে গেছে। তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অভিযুক্ত মো. হান্নান খান দাবি করেন, তিনি ওই শিক্ষকের সঙ্গে একত্রে মসজিদে জুমার নামাজ পড়েন। তখন প্রধান শিক্ষকের একটি কথায় মুসল্লিদের মাঝে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নামাজের পর এ বিষয়ে লাইব্রেরিতে গিয়ে কথা বলতে গেলে প্রধান শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে লাইব্রেরির কক্ষ আটকে একটি চেয়ার নিয়ে তাকে আঘাত করতে যান। তখন আরেকটি চেয়ার নিয়ে ফেরাতে গেলে কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হন প্রধান শিক্ষক। নিজের কারণে এ পরিস্থিতি হয়েছে বলেও দাবি করেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. হান্নান খান।
কলাপাড়া থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কলাপাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বা সদস্যদের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা কলাপাড়াতে ইতিপূর্বে কখনোই ঘটেনি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা শিক্ষকসমাজ এর বিচার চাই।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কর্তৃক শিক্ষক পেটানোর ঘটনা এ নতুন নয়। এমন ঘটনা বিভিন্ন স্কুল কলেজেই ঘটে থাকে তার কতটা সংবাদ মাধ্যমে আসে কতটা শিক্ষকেরাই চেপে থাকেন ভয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে। স্কুলের শিক্ষকদের সবসময়ই কমিটির লোকজনদের তোয়াজ করে চলতে হয়। এর হেরফের হলেই শিক্ষকরা গালমন্দ ও লাঞ্চনার শিকার হন বলে মনে করেন তারা। তারা জানান, অধিকাংশ স্কুল কমিটিতে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাই থাকেন। স্কুলের অবকাঠামো থেকে শুরু করে অন্তর্গত বহু জিনিসেই তারা কর্তৃত্ব ফলান। তাদের অলিখিত আইনের শাসনের শিকার হন প্রায় প্রতিটা স্কুল। এতে স্কুলের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হয়ে থাকে বলে তারা মনে করেন।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৩৭
আপনার মতামত জানানঃ