আজ থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থা, সরকারী দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের যে সকল ব্যক্তি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নির্বাচনে যে কোন ধরনের বাঁধার সৃষ্টি করবে — তাদের ও তাদের পরিবারকে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ঘোষণা।
নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর৷ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট৷ এদের মধ্যে আছে আইন।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করায় জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নীতি আরোপ করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ভিসা নীতির আওতায় পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও এই নীতি প্রয়োগ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলো শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী যারা গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
এই ব্যক্তিরা এবং তাদের নিকটাত্মীয়রা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন৷
নির্বাচন প্রক্রিয়ার অবমূল্যায়নে জড়িত থাকার জন্য দায়ী অন্যরাও ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন বলে জানানো হয়েছে৷ এই তালিকায় বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, বিরোদী দল ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেয়া বার্তায় বলেছেন, এই ঘোষণা বিশ্বব্যাপী স্বাধীন, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারের প্রতিফলন এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার প্রতি বাংলাদেশের সরকার, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রচেষ্টার সমর্থন।
এর আগে, গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে কেউ গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না। এমনকি তার পরিবারের সদস্যরাও মার্কিন ভিসা থেকে বঞ্চিত হবেন।
যা বলছেন ডোনাল্ড লু
এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এই নীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম আমরা প্রকাশ করব না। কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যেকোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।
আমি এটুকু বলতে পারি যে এই নীতি ঘোষণা করার পর থেকে সার্বিক ঘটনা খুব কাছ থেকে আমরা দেখেছি। সাক্ষ্য-প্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।
এই নীতির উদ্দেশ্য হলো, সহিংসতা কমানো এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে এমন যেকোনো কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের গঠনমূলক অংশীদার হওয়া।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ক্ষুণ্ণ করছেন, এমন যেকোনো ব্যক্তির ওপর এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে এই নীতি অনুযায়ী।
ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সংগঠনের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা থেকে বিরত রাখতে সহিংসতা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা মতামত প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমের ওপর পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণের মতো কারণে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে।
এই নীতি অনুযায়ী যাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যরাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্নকারীদের সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাপক তথ্য এবং প্রতিটি তথ্য প্রমাণ ও পর্যালোচনার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এই নীতির আওতায় কাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করে। আমরা এই প্রক্রিয়া সরকার, বিরোধী দল ও নিরাপত্তা সংস্থার ওপর সমান ও যথাযথভাবে প্রয়োগ করি।
এই নীতি শুধুমাত্র নির্বাচনের দিনের জন্য নয়, বরং সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য প্রযোজ্য। আমরা নির্বাচনের সঠিক তারিখ জানি না, তবে এটা স্পষ্ট যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে।
যা বলছে আ’লীগ
বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরুর খবরে আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন নয় বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা বলেন।
ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, এটা নতুন কিছু নয়, এর আগেও তারা ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল। এটা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমার মনে হয় না কোনো চাপ আমাদের ওপর আছে। কারণ আমাদের একটাই কথা আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই এবং সেটাই করব।
তিনি বলেন, আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র এমন ভিসানীতি যদি ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দিত তাহলে বিএনপি দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও করতে পারত না। তখন তারা এসব করতে ভয় পেত।
আপনার মতামত জানানঃ