আমাদের সৌরজগতের বাইরে কি প্রাণের অস্তিত্ব আছে? এমন প্রশ্ন মানুষের বহুদিনের। তবে শিগগিরই এ প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
এক্সোপ্লানেট বলতে সৌরজগতের বাইরের যেকোনো গ্রহকে বোঝায়। আমাদের সৌরজগতের বাইরে ছোট ও বড় মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার এক্সোপ্লানেট আবিষ্কৃত হয়েছে।
সৌরজগতের বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা তার তত্ত্ব অনুসন্ধানে সূর্য বাদে অন্য নক্ষত্রগুলোকে প্রদক্ষিণ করে চলা এই এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর ওপর নজর রাখছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেই নজরদারিতেই এবার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ হাতে এসেছে।
সেসব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। সৌরজগতের বাইরে এক্সোপ্ল্যানেট কে২-১৮বি নামে একটি গ্রহ রয়েছে। ২০১৫ সালে নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ প্রথম খুঁজে পায় গ্রহটিকে। এটি পৃথিবীর চেয়ে দ্বিগুণ বড় ও ভর পৃথিবীর আটগুণ বেশি।
এক্সোপ্ল্যানেট কে২-১৮বি শুরু থেকেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহলের উদ্রেক করে আসছে। এর সঙ্গে আমাদের পৃথিবীর পরিবেশের অনেক মিল রয়েছে। তাই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দীর্ঘদিন ধরেই এটি পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
এই পর্যবেক্ষণে এক্সোপ্ল্যানেটটিতে ডাইমিথাইল সালফাইড (ডিএমএস) নামে রাসায়নিক যৌগ থাকার প্রমাণ মিলেছে। পৃথিবীতে শুধুমাত্র জীবনের কারণে এই কার্বন উৎপন্ন হয়।
গবেষকরা অবশ্য বলছেন, ১২০ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহটিতে কার্বন অণুর উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। গবেষকরা সেখানকার বায়ুমণ্ডলে মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডও শনাক্ত করেছেন। এই গ্যাসগুলো শনাক্ত হওয়ার অর্থ হতে পারে, ওই এক্সোপ্ল্যানেটের বুকে মহাসাগরও রয়েছে।
গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিক্কু মধুসূধন। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এই ফলাফল দেখে তার পুরো দল ‘চমকে গেছে’।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে, ডাইমিথাইল সালফাইড বা ডিএমএস শুধুমাত্র জীবনের কারণে উৎপাদিত হয়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এটির বেশিরভাগই সামুদ্রিক পরিবেশে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন থেকে নির্গত হয়।’
কে২-১৮বি গ্রহ সম্পর্ক এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা হলো, এটি যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, সেটি সূর্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম উত্তপ্ত, আকারে অর্ধেক। ওই নক্ষত্রকে সচরাচর ‘লাল বামন’ নামে ডাকা হয়। মাত্র ১৪ মাইল দূরত্বে অবস্থিত গ্রহটি ৩৩ দিনে একবার নিজ নক্ষত্রকে পরিভ্রমণ করে।
গ্রহটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এটির তাপমাত্রা। এর আগে অনেক গ্রহে পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সেসব গ্রহের তাপমাত্রা প্রাণের টিকে থাকার অনুকূলে ছিল না। তবে কে২-১৮বি-এর তাপমাত্রা খুব গরম বা ঠাণ্ডা নয়। এর গড় তাপমাত্রা মাত্র ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের কারও কারও মতে, পৃথিবীর মতোই কে২-১৮বি এক্সোপ্ল্যানেটের বুকে সাগর বা মহাসাগরের মতো পানি থৈ থৈ করছে। সাগর-মহাসাগর থাকার কথা মেনে নিলেও তা আসলে ‘হাইশান’ বলেও মনে করেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।
ইংরেজিতে হাইড্রোজেন ও ওশান শব্দ দুটি মিলেই উৎপত্তি ‘হাইশান’ শব্দটির। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে আকারে বড় হয় সাধারণত। বায়ুমণ্ডল হাইড্রোজেনের মোটা আস্তরণে ঢাকা থাকে, যা তরল মহাসাগর ধারণে সক্ষম।
বিজ্ঞানী নিক্কু মধুসূদন জানিয়েছেন, প্রাণের খোঁজ করতে গিয়ে এতদিন সাধারণত ছোট আকারের ও পাথুরে এক্সোপ্ল্যানেটগুলোকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তবে আকারে বড় ‘হাইশান’-এর বায়ুমণ্ডল গবেষণার জন্য অনেক বেশি সহায়ক
আপনার মতামত জানানঃ