সৌর জগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতিতে উঠেছে প্রলয়ঙ্করী ধূলার ঝড়। ধূলার মেঘেই ঢাকা পড়েছে আকাশ। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র পাঠানো নভোযানে ধরা পড়ল সেই ঝড়ের ছবি। পৃথিবীর উপর পড়তে চলেছে বড় কোনও প্রভাব? এই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করছেন বিশ্বের তাবড় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি মহাকাশযান জুনো-র পাঠানো বৃহস্পতির ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে নাসা। সেখানেই সৌরজগতের দৈত্য় গ্রহর উত্তর মেরু এলাকায় শক্তিশালী ঝড় ও ধূলার মেঘ দেখা গিয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও বৃহস্পতির ঝড়ের ছবি লেন্সবন্দি করে জুনো। তবে সেই ঝড় এতোটা ভয়ংকর ছিল না, জানিয়েছেন মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশযান জুনোর পাঠানো বৃহস্পতির ঝড়ের ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিটির ক্যাপশানে নাসা লিখেছে, ‘১৪ হাজার ৬০০ মাইল (২৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার) দূর থেকে বৃহস্পতির ঝড়ের ছবি তুলেছে জুনো। ঝড়ের সময় যে ধুলোর মেঘ তৈরি হয়েছে, সেগুলির গঠনের ক্ষেত্রে তারতম্য রয়েছে।’ ওই মেঘ বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে নাসা।
২০১৬-য় বৃহস্পতিবার কক্ষপথে পৌঁছয় জুনো। প্রথম পর্যায়ে বৃহস্পতির উপগ্রহগুলির উপরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছিল এই মহাকাশযান। ২০১৯-এ প্রথমবার বৃহস্পতির ঝড়ের ছবি হাতে পায় নাসা। সেবার বৃহস্পতির মাঝের অংশে ওই ঝড় উঠেছিল বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, পৃথিবীর মতো বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে রয়েছে একাধিক গ্যাসের উপস্থিতি। যার মধ্যে অন্যতম হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। পৃথিবীর চেয়ে সেখানকার বায়ুমণ্ডল কিছুটা উত্তপ্ত বলেই অনুমান। বৃহস্পতির উপগ্রহগুলির বায়ুমণ্ডলেরও হদিশ দিয়েছে জুনো। তবে সেখানে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান মার্কিন জ্যেতির্বিজ্ঞানীরা।
তবে বৃহস্পতির ঝড়ের সরাসরি কোনও প্রভাব পৃথিবীর বুকে পড়বে না বলে আশ্বস্থ করেছে নাসা। এই ঝড়ের ক্ষতিকর দিকগুলি বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি গ্রহটির মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সংক্রান্ত তথ্য পৃথিবীতে পাঠিয়ে চলেছে মহাকাশযান জুনো।
দু’দিন আগেই সৌরজগতের ষষ্ঠ গ্রহ শনির ছবি পোস্ট করে নাসা। প্রায় ৭ লাখ ৪৬ হাজার মাইল অর্থাৎ ১০ লাখ ২০ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে বলয় শুদ্ধ গ্রহটিকে লেন্সবন্দি করে ক্যাসিনি নামের মহাকাশযান। ছবিতে বিন্দুর মতো শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল ও চাঁদকে দেখা গিয়েছে। এই গ্রহ-উপগ্রহগুলিকে এক ফ্রেমে আনতে লাল, সবুজ ও নীল রঙের ফিল্টার ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছে নাসা।
মূলত কোথাও এতটুকু পানির অস্তিত্ব পাওয়া মানেই সেখানে অক্সিজেনের খোঁজ। আর অক্সিজেন থাকলে প্রাণের ইঙ্গিত মিলবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাইতো অন্যান্য গ্রহে পানির অস্তিত্ব পেতে হন্যে হয়ে খোঁজ চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলের পর এবার আশা দেখাল বৃহস্পতি।
সৌরজগতের সব থেকে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। গ্যাস ও তরলে পরিপূর্ণ এই গ্রহ। এত ধরনের গ্যাসের মধ্যে সব সময়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া চলতে থাকে। ফলে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং অনুঘটকের উপস্থিতিতে অনুকূল পরিবেশের বিক্রিয়ার পর পানি তৈরি হবে কি না, তা এত দিন সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছিল না।
নাসার পাঠানো যান ‘জুনো’ এবার দিলো সেই উত্তর। নেচার জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি থেকে জানা গেছে, ২০১১ এবং ২০১৬ দু’বছর জুনোকে পাঠানো হয়েছিল বৃহস্পতিতে।
তার পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, সর্ববৃহৎ গ্রহের বায়ুমণ্ডলে অন্তত ০.২৫ শতাংশ পানি রয়েছে। এমন একটা বায়ুমণ্ডলের স্তরে স্তরে প্রায় পানির অস্তিত্ব মিলতে পারে, তা ভাবতে পারেননি গবেষকরা। বায়ুমণ্ডলের একটা নির্দিষ্ট স্তরের নিচে মেঘ জমে। তাপমাত্রার হেরফেরে তা বৃষ্টির মতো ঝরবে বলে মনে করছেন তারা।
কিছুদিন আগে জানা যায়, যে মঙ্গলে পানির জন্য এত খোঁজ, সেখানে নাকি আস্ত সমুদ্র, এমনকি সুনামির ভয়ঙ্কর ঢেউও উঠেছিল সেই সমুদ্রে। তবে সবটাই প্রায় ৩৫০ কোটি বছর আগের ঘটনা। সম্প্রতি মার্কিন গবেষণায় এসব তথ্য মিলেছে। তখন কি বিপর্যয় হয়েছিল, তা জানা না গেলেও মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধে সমুদ্র সৈকতের অস্তিত্ব পেয়েছেন গবেষকরা।
সেই সুনামির চরিত্র কিন্তু পৃথিবীর থেকে অনেক আলাদা। দু’টি উল্কাপিণ্ডের আঘাতে কেঁপে উঠেছিল পুরো মঙ্গলপৃষ্ঠ। কয়েক বিলিয়ন বছর আগের কথা। এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে, দু’টি উল্কা আঘাত হেনেছিল লালগ্রহে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেই উল্কা জলে এসে পড়ায় বিশাল বিশাল ঢেউ সমুদ্র ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় উপকূলেও। সেই জলোচ্ছ্বাসের পরেই এক বিশাল এলাকা জুড়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আর এই সুনামির ক্ষত এখনো দৃশ্যমান মঙ্গল পৃষ্ঠে। সেটাই সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
আপনার মতামত জানানঃ