পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে কমপক্ষে পাঁচটি গির্জায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার ঘটনা ঘটেছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গতকাল বুধবার জারানওয়ালা এলাকায় এ তাণ্ডব চালানো হয়েছে। কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।
খ্রিষ্টধর্মীয় নেতা আকমল ভাট্টি জানিয়েছেন, একদল লোক কমপক্ষে পাঁচটি গির্জায় আগুন দিয়েছেন। আতঙ্কিত লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার পর সেগুলোয় লুটপাট চালানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, মসজিদের মাইক থেকে এক ধর্মীয় নেতা সহিংসতায় উসকানি দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, গির্জার ভবন থেকে ধোঁয়া উড়ছে। সেখান থেকে বের করে আনা আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু লোক পার্শ্ববর্তী মহাসড়ক অবরোধ করেন।
পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে এই গির্জায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে লুটপাট চালানোর ঘটনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তা ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে এই হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে এসব ঘটনা তদন্তে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত বুধবার ফয়সালাবাদের জারানওয়ালা এলাকায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের গির্জা ও বাড়িতে হামলা চালানো হয়। প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে এই তাণ্ডব চালানো হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও পুলিশ ওই সময় হামলাকারীদের কোনো বাধা দেয়নি।
স্থানীয় প্রভাবশালী মুসলমানদের নেতৃত্বে হাজারো মানুষ সেখানে হামলা চালায়। রড, লাঠি, ছুরিসহ দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয় এই হামলায়। এদিকে হামলাকারীদের অভিযোগ, সেখানে দুজন পবিত্র কোরআন পুড়িয়েছিলেন। অভিযুক্ত ওই দুজনকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সেখানকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তায় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্যদেরও সেখানে দেখা গেছে।
পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেখানে পুলিশকে সাহায্য করতে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত ওই এলাকা ঘিরে রেখেছে। ওই এলাকার প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল এসব ঘটনার বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এতে দেখা যায়, গির্জাগুলোয় ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়া হয়েছে। অনেক ভবনের প্রাচীর পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিছু কিছু বাড়ির সব জিনিস পুড়ে গেছে।
পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গির্জা ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে এসব ঘটনা তদন্তে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
এ দিনই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাকিস্তানে কোরআন অবমাননার খবরে গির্জা ও বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
বেদান্ত প্যাটেল আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মুক্তমতকে সমর্থন করে। সহিংসতা কিংবা সহিংসতার হুমকি কখনো মত প্রকাশের গ্রহণযোগ্য ধরন হতে পারে না। এসব অভিযোগের বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য আমরা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার মতো বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। দেশটিতে ইসলাম ধর্ম কিংবা ইসলাম ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবমাননার দায়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ারও বিধান রয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/১২১০
আপনার মতামত জানানঃ