রহস্যময় এই পৃথিবীর কতটুকুই বা জানি আমরা! আদৌ কি এসব রহস্য ভেদ করা সম্ভব? বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও মানুষের কৌতূহলী মনের বদৌলতে অনেক রহস্যেরই সমাধান সম্ভব হয়েছে এবং অনেক রহস্য সমাধানে প্রচেষ্টা চলছে। সম্প্রতি এমনই নতুন এক রহস্যের উৎপত্তি হয়েছে বরফে ঘেরা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে।
খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার বছর আগে শীতল এই মহাদেশটি ছিল সবুজে ঘেরা। ৫০ কোটি বছর আগের ক্যামব্রিয়ান ফসিল অর্থাৎ পশুপাখির দেহাবশেষের জন্য বিশ্ববিখ্যাত ছিল এই মহাদেশ। তার মানে বোঝা যায়, মানুষের বসতি নিয়ে নিশ্চয়তা না থাকলেও এক সময় পশুপাখির বিচরণক্ষেত্র ছিল এ ভূমি। এমনকি তখনকার তাপমাত্রা ছিল ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যথেষ্ট রহস্য ও কৌতূহলপূর্ণ এ পিরামিডগুলোর নির্দিষ্ট কোনো নাম না থাকলেও এলসওর্থ পর্বতশ্রেণির দক্ষিণাংশে অবস্থানের কারণে এগুলো হেরিটেজ রেঞ্জ নামে পরিচিত।
পৃথিবীর ৭টি মহাদেশের মধ্যে অ্যান্টার্কটিকা একমাত্র মহাদেশ, যেখানে কোনো রকম জনবসতি গড়ে ওঠেনি। এর প্রধান কারণ এখানকার বিরূপ আবহাওয়া। কখনও কখনও ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে চলে এখানে। বেশিরভাগ সময়েই তাপমাত্রা হয়ে থাকে মাইনাস ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সম্প্রতি, স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে দেখা গেছে বরফের মহাদেশে একটি রহস্যময় ত্রিভুজ কাঠামো, এটিকে বিশ্বের নতুন আশ্চর্য বলে অনেকে অভিহিত করেছেন।
অনেকেই অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন অ্যান্টার্কটিকায় পিরামিড কোথায় থেকে আসবে? অ্যান্টার্কটিকার এলসওয়ার্থ পর্বতমালার দক্ষিণ অংশে তোলা ছবিতে বিশাল পিরামিড আকৃতির কাঠামো দেখা গেছে।
কিছু অদ্ভুত চেহারার শিখর, যেগুলো মাটি থেকে উঠে আসছে বলে মনে হয়। বর্গাকার ভিত্তির প্রতিটি দিকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত পরিমাপ করে এটির সাথে মিশরের গিজার গ্রেট পিরামিডের মিল পাওয়া যায়।
এই সপ্তাহে ছবিগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে, অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদ নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন এই আবিষ্কার ঘিরে। একজন ব্যক্তি টুইট করেছেন, কিভাবে পিরামিডগুলি মিশর থেকে অ্যান্টার্কটিকায় স্থানান্তর হলো ?
ইলুমিনাতির মতো কোনো গোপন জাতি এই পিরামিড তৈরির পেছনে আছে বলে মনে করছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন এই কাঠামো মানবসৃষ্ট। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই কাঠামোটি প্রাচীন সভ্যতার অন্তর্গত যা বন্যার আগে বিদ্যমান ছিল।
কারণ প্রায় ১০,০০০ বছর আগে অ্যান্টার্কটিকা উষ্ণ ছিল। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক ডক্টর মিচ ডার্সির মতে, এটি আসলে একটি পাহাড়।
পিরামিড-আকৃতির কাঠামোগুলো এলসওয়ার্থ পর্বতমালায় অবস্থিত, যেটি ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা একটি পরিসর, তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বরফের উপরে পাথুরে চূড়াগুলো তৈরি হয়েছে।
শিখরগুলো স্পষ্টভাবে শিলা দ্বারা গঠিত। এগুলোকে আসলে ‘নুনাটক’ বলা হয়, যা হিমবাহ বা বরফের উপরে আটকে থাকা শিলার চূড়া। এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয় যে, এই নির্দিষ্ট চূড়াটির আকৃতির সাথে পিরামিডের মিল রয়েছে। পাশাপাশি এটি কোনোভাবেই মানবসৃষ্ট নয়।
এলসওয়ার্থ পর্বতমালা হলো অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ পর্বতমালা, যা মেরি বাইর্ড ল্যান্ডের রনে আইস শেল্ফের পশ্চিম প্রান্তে উত্তর থেকে দক্ষিণ ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৪৮ কিলোমিটার প্রশস্ত। এগুলো চিলির অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে অবস্থিত এবং ১৯৩৫ সালে লিঙ্কন এলসওয়ার্থ ডান্ডি দ্বীপ থেকে রস আইস শেল্ফ পর্যন্ত একটি ট্রান্স-অ্যান্টার্কটিক ফ্লাইটে যাত্রার সময় এটি আবিষ্কার করেছিলেন।
এলসওয়ার্থ পর্বতমালার তাপমাত্রা গড়ে -৩০সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি থাকে। এখানে অভিযানের জন্য সেরা সময় নভেম্বর থেকে জানুয়ারি।
এছাড়া ধারণা করা হয়, ভিনগ্রহী এলিয়েনরা প্রযুক্তিগতভাবে মানুষের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল। আর পিরামিডগুলো তাদেরই সমাধিস্থল। এগুলো দেখতে মিসরের ফারাও যুগের পিরামিডগুলোর মতোই বর্গাকৃতির।
যার চার দিকই মসৃণ ঢাল। সাধারণত পাহাড়ের একটি বা দুটি দিকে মসৃণ ঢাল হয়। তবে ভূতত্ত্ববিদরা এর রহস্য উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এগুলো সাধারণ পাহাড়। বছরের পর বছর বরফের চাপে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পিরামিড আকৃতি ধারণ করেছে। পাহাড়গুলোর মসৃণতার কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন ‘ফ্রিজ থো’ নামক প্রক্রিয়া।
শীতল বরফের আস্তরণে ঘেরা এ মহাদেশের পাহাড়গুলোতে দিনের বেলা তুষার ও পানি জমে, যেগুলো রাতে বরফ হয়ে আয়তন বৃদ্ধি পায়, যার ফলে চাপ সৃষ্টি হয়। আর এই চাপের কারণেই পাহাড়ের চারদিকে মসৃণ ঢালের সৃষ্টি হয়।
এসডব্লিউএসএস/১৫৪৫
আপনার মতামত জানানঃ