পৃথিবীর মানচিত্রে মহাদেশ ও মহাসমুদ্রগুলোর বর্তমান যে অবস্থান আমরা দেখি, সূদুর অতীতে তেমন ছিল না। গত দুইশ কোটি বছর ধরে মহাদেশগুলো একসঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আবার প্রতি ৬০ কোটি বছর পরপর তা ভেঙ্গেও গেছে।
আজ থেকে ২০ কোটি বছর আগে ‘প্যানথালাসা’ নামের বিশাল মহাসমুদ্রের অস্তিত্ব ছিল। আরও ছিল ‘প্যানজিয়া’ নামের অতিমহাদেশ। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, আগামী ২০ থেকে ৩০ কোটি বছরের মধ্যে বিশ্বের মহাদেশগুলো একসঙ্গে মিশে এক অতিমহাদেশের সৃষ্টি করবে। এর মধ্যে থাকবে বিশাল এক মরুভূমি।
ভবিষ্যতে এমন সংযুক্তি অবশ্যম্ভাবী। তবে আমেরিকার পশ্চিম উপকূল এশিয়ার সঙ্গে মিলিত হবে নাকি পূর্ব উপকূলে ইউরোপ ও আফ্রিকার সঙ্গে মিলিত হবে, তা নিয়ে ভূতত্ত্ববিদদের মধ্যে আছে মতভেদ। পৃথিবীর গভীরে কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে বলে এরকম হওয়ার সম্ভাবনা সামনে আসছে নতুন গবেষণায়।
পৃথিবীর সবগুলো মহাদেশের একত্রে মিলিত হওয়া মানে কিছু বিক্ষিপ্ত দ্বীপসহ একটি বিশাল মহাসমুদ্রের উদ্ভব হওয়া। ঠিক এভাবেই অতীতে ‘প্যানজিয়া’ ছিল সবশেষ সবচেয়ে বড় মহাদেশ। আর ‘প্যানথালাসা’ হলো সেকালের মহাসমুদ্র।
মহাদেশগুলোর ভাঙন শুরু হলে পৃথিবীতে দুই বা তারও বেশি বিশালাকার জলরাশির সৃষ্টি হয়। আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরগুলো আগের অভ্যন্তরীণ সাগরের অবশিষ্টাংশ। অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগর বহিঃস্থ মহাসাগর হয়ে প্যানথালাসায় রূপ নেয়।
এভাবে অভ্যন্তরীণ বা বহিঃস্থ মহাসাগরগুলো বন্ধ হওয়ায় নতুন অতিমহাদেশগুলোর সৃষ্টি হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লি অতীতে এমনটা সম্ভব বলে জানিয়েছেন। প্রশান্ত মহাসাগরের বিলুপ্তি অবশ্যম্ভাবী বলে মন্তব্য করেছেন লি। আটলান্টিক মহাসাগর প্রতি বছর কয়েক সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে একই গতিতে সংকুচিত হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগর। কাজেই পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগরটি কীভাবে শেষ হয়েছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। ভূতত্ত্ববিদগণ আগেই এমনটা বলেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘আমাশিয়া’ বা ’অ্যামাশিয়া’। অধ্যাপক লি মনে করেন, আগামী ২৮ কোটি বছরে এরকম ঘটনা ঘটবে।
পৃথিবীর বাইরের স্তরটি ভূত্বক নামে পরিচিত। এ ভূত্বক দুই ভাগে বিভক্ত। ওপরেরটি মহাদেশীয় ভূত্বক। এর গড় পুরুত্ব ২০–৪০ কিলোমিটার। আর নিচেরটি মহাসামুদ্রিক ভূত্বক। এর গড় পুরুত্ব ৫-১০ কিলোমিটার। শুধু ভূত্বক যখন শক্তিশালী থাকে, তখন মহাদেশগুলো দিক পরিবর্তন করতে পারে।
যাহোক, এ ব্যাপারে বিপরীত মতবাদও আছে। অনেকের মতে, ভূত্বক যখন নিচের স্তরে ছিল, অর্থাৎ ভূত্বক যখন শীতল ছিল, তখন তার ওপর মহাসাগরীয় ভূত্বক দূর্বল ছিল। লি ও তাঁর সহকর্মীরা দেখেছেন, প্রায় ৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবীর তাপমাত্রা যথেষ্ট শীতল ছিল। ফলে ভূত্বক দূর্বল হয়ে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছায় যে সেগুলো আর ওলটপালট হওয়া সম্ভব ছিল না। কাজেই ‘অ্যামাশিয়া’ ও ভবিষ্যতের সব অতিমহাদেশগুলো বহিঃস্থ মহাসাগরের পথ ধরে তৈরি হবে।
তবে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম দিকে, এশিয়া পূর্ব দিকে ও অস্ট্রেলিয়া উত্তর দিকে সরতে থাকবে। অ্যান্টার্কটিকা অনেকদিন পৃথিবীর নিচের দিকে স্থির হয়ে আছে। তাই, অ্যান্টার্কটিকার ভবিষ্যৎ যাত্রা সম্বন্ধে ধারণা দেয়া কঠিন বলে অধ্যাপক লি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন।
লি জানিয়েছেন, বড় মহাদেশগুলোর অক্ষাংশের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। এর মানে এই নয় যে, ভবিষ্যতে পৃথিবী বসবাসযোগ্য থাকবে। অর্থাৎ, ‘অ্যামাশিয়া’ তৈরি হলে পৃথিবী আকস্মিকভাবে অন্যরকম হবে। ধারণা করা হচ্ছে, পৃথিবী সমুদ্রপৃষ্ট নীচে চলে যাবে। ফলে অতিমহাদেশের অভ্যন্তরে খুব শুষ্ক ও বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ