ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় দায়মুক্তি দিয়েছে পুলিশ। র্যাবের করা এ মামলায় ‘তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায়’ গতকাল রোববার(০৩ জানু) এ ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে লালবাগ থানা পুলিশ। সেখানে ইরফানকে দায় থেকে মুক্তি দিয়ে পুলিশ দাবি করেছে, তার কাছে কোনো অস্ত্র ও মাদক ছিল না। তার সহযোগী জাহিদের কাছ থেকে এই অস্ত্র ও মাদক পাওয়া গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কুদরত-ই খুদা এ বিষয়ে জানান, ইরফান সেলিমের দুই মামলার ফাইনাল প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে অস্ত্র ও মাদক মামলা ছিল তা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
অভিযানে পাওয়া অস্ত্র ও মাদক কী হলো জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, অস্ত্র ও মাদক তার সহযোগীর কাছে পাওয়া গেছে। তার কাছে পাওয়া যায়নি। এখন সেগুলো মালখানায় আছে। পরবর্তী সময়ে আদালতে জমা দেয়া হবে।
ডিএমপির চকবাজার থানায় দায়ের হওয়া এই দুটি মামলারই বাদী ছিল র্যাব। মামলার দুই মাসের মাথায় এই প্রতিবেদন দেয়া হলো।
ইরফানের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইরফানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের মামলার তদন্ত করেছে লালবাগ থানা পুলিশ। আমরা তদন্ত করে যা পেয়েছি, তা রিপোর্টে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছি।
দুই মামলার অভিযোগের দায় থেকে ‘মুক্তি’ পাওয়ার পর এখন ইরফানের বিরুদ্ধে আর একটি মামলা তদন্তাধীন। নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তার করা এ মামলা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ইরফান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাসপেন্ড হওয়া কাউন্সিলর। তার পিতা হাজী সেলিম ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি এবং তার শ্বশুর নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী।
গত ২৫শে অক্টোবর রাতে ধানমন্ডি এলাকায় ‘সংসদ সদস্য’ লেখা সরকারি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর করেন হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম। ওই ঘটনার ভিডিও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
পরদিন এ ঘটনায় ইরফানসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে ধানমন্ডি থানায় মামলা করা হয়। মামলায় বাদী ওয়াসিফ আহমেদ আরও দু’জনকে অজ্ঞাত আসামী করেন।
২৬শে অক্টোবর পুরান ঢাকায় হাজী সেলিমের বাসায় দিনভর অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযানের পর র্যাব জানিয়েছিল, ইরফান সেলিমের বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৭টি ওয়াকিটকি, ১০ ক্যান বিয়ার, একটি হাতকড়া, একটি ড্রোন, ৪০৬ পিস ইয়াবা এবং বিদেশি মদ ও বিয়ার পাওয়া গেছে। এই বাসা থেকে তিনটি অস্ত্রও জব্দ করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি একনলা বন্দুকের লাইসেন্স ছিল। অন্য দুটি পিস্তলের লাইসেন্স নেই বলে জানানো হয়। আর ওয়াকিটকিগুলোও ছিল অবৈধ।
এ সময় অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগে ইরফানকে দেড় বছর ও তার দেহরক্ষীকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ মামলায় এজাহারভুক্ত চার আসামির সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আইন সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আসামি প্রভাবশালী হওয়াতে পূর্ব থেকেই জনমনে যে ধারণা জন্মেছিল ধীরে ধীরে সেদিকেই যাচ্ছে। ইরফান সেলিমকে রক্ষায় প্রভাবশালী সমস্ত মহলই কাজ করছেন অভিযোগ এনে তারা মনে করেন, ইরফান সেলিমের সমস্ত অপরাধ এখন সহযোগীদের ঘাড়ে এসে ঠেকবে। দেশে আইনের কোনো সুশাসন নেই দাবি করে তারা মনে করেন, ইরফান সেলিমের স্থানে অন্যকেউ থাকলে হয়তো মামলা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই চলতো। একই সাথে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আইনের ফাঁক দিয়ে রাঘব বোয়ালদের ছুটে যাওয়ার চিরায়ত আরেক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। এবিষয়ে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১২৭
আপনার মতামত জানানঃ