জলবায়ু পরিবর্তন কখন, কীভাবে ও কতটা ক্ষতি করবে পৃথিবীর তা সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট ভাবে বলা না গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফল এখনই পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর এই পরিবর্তনে বদলে যাবে আমাদের জীবন যাপন। পানির সঙ্কট তৈরি হবে। খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে।
কোনো কোনো অঞ্চল বিপজ্জনক মাত্রায় গরম হয়ে পড়বে, এবং সেই সাথে সমুদ্রের পানি বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত হবে। ফলে সে সব জায়গা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া – অতিরিক্ত গরমের পাশাপাশি ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ের প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকবে। ফলে জীবন এবং জীবিকা হুমকিতে পড়বে। গরীব দেশগুলোতে এসব বিপদ মোকাবেলার সক্ষমতা কম বলে তাদের ওপর এই চরম আবহাওয়ার ধাক্কা পড়বে সবচেয়ে বেশি।
তাপমাত্রা বাড়ায় উত্তর মেরুর জমাট বাধা বরফ এবং হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে সাগরের উচ্চতা বেড়ে উপকুলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
এছাড়া সাইবেরিয়ার মত অঞ্চলে মাটিতে জমে থাকা বরফ গলতে থাকায় বরফের নিচে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে, মিথেনের মত আরেকটি গ্রিনহাউজ গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। পৃথিবীর উষ্ণতা তাতে আরো বাড়বে, এবং বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়বে।
তবে ইতিমধ্যেই মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ভুগতে শুরু করেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ এক রিপোর্টে দেখতে পেয়েছে গত ৫০ বছরে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে ২০ লাখ মানুষের। অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলার।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্ররা। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড মেটেওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) থেকে সোমবার প্রকাশিত নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৭০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বে ১১,৭৭৮টি আবহাওয়া-সংশ্লিষ্ট বিপর্যয় ঘটেছে। আস্তে আস্তে এর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ সময়ে যেসব মানুষ মারা গেছেন তার মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগের বেশি মারা গেছেন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
ডব্লিউএমও’র প্রধান পিটেরি তালাস বিবৃতিতে বলেছেন আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানি সংশ্লিষ্ট বিপদে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি বহন করতে হয় অধিক ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায়কে। গত সপ্তাহে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কিছু অংশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় মোখা। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয় মিয়ানমারে। অনেক মানুষ নিহত হন।
ভয়াবহ এই ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়। দরিদ্রদের মধ্যে যারা আরও দরিদ্র তাদের ক্ষতি হয়েছে বেশি। তবে ডব্লিউএমও আগেভাগে সতর্কতা সিস্টেম উন্নত করেছে। সহযোগিতা করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। এর ফলে মানব ক্ষয়ক্ষতি কমানো গেছে।
পিটেরি তালাস আরও বলেন, অতীতে মোখার মতো বিপর্যয় বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারে শত শত মানুষ মারা গেছেন। এমনকি এই সংখ্যা হাজারো হতে পারে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়ে মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা সামরিক জান্তা সরকার ১৪৫ বলে জানিয়েছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে এই সংখ্যা অনেক বেশি।
১৯৭০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে এসব বিপর্যয় সংক্রান্ত মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ২০২১ সালে রিপোর্ট করা হয়। তাতে দেখা যায় এই সময় শুরুর পর গড়ে প্রতি বছর ৫০ হাজার করে মানুষ মারা গেছেন। ২০১০-এর দশকের মধ্যে এই মৃত্যুর সংখ্যা কমে বছরে ২০ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে।
ডব্লিউএমও সোমবার প্রকাশিত রিপোর্টে বলেছে, ২০২০ এবং ২০২১ সালে সব মিলে বিশ্বজুড়ে মোট এমন মৃত্যুর সংখ্যা ২২ হাজার ৬০৮। আগেভাগে সতর্কতা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কারণে এই সংখ্যা কমিয়ে আনা গেছে। ২০২৭ সালের মধ্যে সব দেশের জন্য দুর্যোগে আগাম সতর্কতা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জাতিসংঘ।
বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেক দেশে এমন ব্যবস্থা আছে। ওই সংস্থাটি হিসাব কষে দেখেছে ১৯৭০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক ক্ষতি বৃদ্ধি পেয়েছে সাতগুন। প্রথম দশকে প্রতিদিন গড়ে ৪৯ লাখ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তা শেষ দশকে প্রতিদিন ৩৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫০০
আপনার মতামত জানানঃ