মাত্র ১০০ ঘণ্টা বা ৪ দিনের মধ্যে তৈরি হলো ১১৮ কিলোমিটার হাইওয়ে! শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এমনটি বাস্তবায়ন করেছেন ভারতের গাজিয়াবাদ-আলিগড় এক্সপ্রেসওয়ের কর্মী-ঠিকাদাররা।
অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বিটুমিনাস কংক্রিট বিছিয়ে চোখের নিমেষে তৈরি হয়ে গেছে মাইলের পর মাইল মসৃণ, কালো, চকচকে হাইওয়ে!
একটি বাড়ির বড় উঠোন ঢালাই করতেই যেখানে এই সময় লেগে যায়, সেখানে এই অল্প সময়ের মধ্যেই ১০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছেঃ এটি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের অংশ।
গাজিয়াবাদ ও আলিগড়ের মাঝের এই অংশটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এর মাধ্যমে বেশ কিছু কারখানা এলাকা, কৃষি অঞ্চল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট হিসেবেও কাজ করে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়করি।
ওদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উক্ত কাজের গতির প্রশংসা করে টুইটে বলেছেন, ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি হাইওয়ে রুটে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এর মাধ্যমেই আরও উন্নত অবকাঠামোর জন্য কাজের গতি এবং আধুনিক পদ্ধতিকে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়।’
উল্লেখ্য, রাস্তাটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল গাজিয়াবাদ আলিগড় এক্সপ্রেসওয়ে প্রাইভেট লিমিটেড, কিউব হাইওয়েজ ট্রাস্টের একটি বিশেষ সংস্থা (এসপিভি) এবং ইপিসি ঠিকাদার লারসেন অ্যান্ড টুব্রো লিমিটেড।
এখানে প্রশ্ন বাংলাদেশে কেন এই প্রযুক্তি কাজে দিচ্ছে না। এর কারণ সড়ক নষ্টের প্রবণতা। সাধারণত সড়ক নষ্টের জন্য মূলত দায়ী করা হয় পানিকে। আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। পানি হলো বিটুমিনাসের প্রধান শত্রু। তাই পিচঢালা পথগুলো খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এর বিপরীতে কংক্রিটের রাস্তার পানি সহনক্ষমতা রয়েছে। সিমেন্টের পানি সহনক্ষমতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। তাই কংক্রিটের সড়ক তৈরি করলে পানির সংস্পর্শে এলে এটি আরো টেকসই হবে এ রকমই ধারণা পোষণ করেন বিশেষজ্ঞরা।
কংক্রিটের রাস্তার আরো কিছু সুবিধা রয়েছে। সড়কের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বিটুমিনাসের চেয়ে কংক্রিটের রাস্তা বেশি নিরাপদ। যেসব রাস্তায় লাইটিং দেওয়া যায় না, সে ক্ষেত্রে কংক্রিটের রাস্তায় গাড়ির লাইট আলোর প্রতিফলনের জন্য ভালো দেখা যায়। আবার গাড়ির ব্রেকিংয়ের জন্যও এটা তুলনামূলক বেশি নিরাপদ।
এছাড়া কংক্রিটের রাস্তা জ্বালানিসাশ্রয়ী, স্থায়িত্ব অনেক বেশি এবং পরিবেশবান্ধব। বিটুমিনাসের সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সাড়ে পাঁচ গুণ জ্বালানি বেশি খরচ হয়। যেমন-এক মাইল রাস্তা নির্মাণের জন্য কংক্রিট ব্যবহারে ৫৫০ গ্যালন জ্বালানি খরচ হলে বিটুমিনাসে ৯ হাজার গ্যালন জ্বালানি খরচ করতে হয়। আবার বিটুমিনাস সার্ফেসে ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া গরমের সময় শহরাঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আমাদের বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।
একসময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কংক্রিটের রাস্তা ছিল। এখন প্রায় নেই বললেই চলে। এখন সারা দেশেই বিটুমিনসের রাস্তা। আর পুরো দেশের রাস্তার বেহাল অবস্থা নতুন করে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করছে কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণে।
যেকোনো রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কার করতে হলে একটি বিকল্প রাস্তা রাখতে হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা পাওয়া যায় না। আবার কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণের জন্য একটি রাস্তা প্রায় ২১ দিন ব্যবহার করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ২১ দিন রাস্তা বন্ধ রাখতে হবে, যা ঢাকা শহরে অসম্ভব। আর বিটুমিনাসের রাস্তা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবহার করা যায়। তাই ঢাকায় এ পদ্ধতির বিকল্প নেই। সুনামগঞ্জের কিছু রাস্তা কংক্রিটের তৈরি, যেগুলো বেশ কিছুদিন পানির নিচে ডুবে থাকে। কিন্তু তার পরও বেশ স্থায়ী হচ্ছে।
এগুলো তৈরিতেও তেমন কোনো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয় না। কিছু দুর্গম জায়গায়, যেখানে রোলার বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি নেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে এই কংক্রিটের ব্যবহার বেশ ফলদায়ক।
এসডব্লিউএসএস/২০২৫
আপনার মতামত জানানঃ