পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের আদালতের বাইরে থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই দলের প্রধান ইমরান খানকে গ্রেফতার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এদিন হাজিরা দিতে আদালতে এসেছিলেন তিনি। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় তার আটকের খবরটি জানিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে জানা গেছে, পিটিআই প্রধান ইমরান খান শুনানির জন্য মঙ্গলবার (৮ মে) বিকালে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে উপস্থিত হন। আদালতের প্রাঙ্গণ থেকে পিটিআই চেয়ারম্যানকে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় রেঞ্জার্সের সদস্যরা গ্রেফতার করে।
আজ মঙ্গলবার (৯ মে), গ্রেফতার করা হয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান তথা প্রাক্তন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। পাক সংবাদমাধ্যম জিও টিভির খবর অনুযায়ী, এদিন পাকিস্তানি রেঞ্জাররা এক জমি দুর্নীতি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করল। আলকাদির ট্রাস্ট মামলা নামে পরিচিত ওই জমি দুর্নীতি মামলায় এদিন ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজিরা দিয়েছিলেন ইমরান খান। সরাসরি আদালত থেকেই তাঁকে হেফাজতে নেয় পাক রেঞ্জাররা।
ইমরান খানকে গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর থেকেই একের পর এক মামলায় ফাঁসেন ইমরান খান। সব মিলিয়ে এখন তাঁর বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা চলছে। এর আগে অন্যান্য বেশ কয়েকটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করতে চেয়েছিল পাক পুলিস। এমনকী তাঁর বাড়িরও দখল নেওয়া হয়েছিল। এর আগের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই গ্রেফতারি এড়াতে পেরেছিলেন পিটিআই প্রধান। এবার জমি দুর্নীতি মামলায় রেহাই মিলল না।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের নেতা তথা প্রাক্তন পাক মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী উর্দুতে টুইট করেন, ‘ইসলামাবাদ হাইকোর্টের দখল নিয়েছে রেঞ্জার্সরা। আইনজীবীদের মারধর করা হচ্ছে, ইমরান খানের গাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। ইমরান খানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের ভেতর থেকে অপহরণ করেছে রেঞ্জার্সরা।’ এদিন, আল কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইসলামাবাদ হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছিলেন ইমরান খান। কিন্তু, তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। এরপর, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকেই গ্রেফতার করা হয় ইমরান খানকে।
একটি কালো গাড়িতে করে আদালত চত্বর থেকে তাঁকে বের করে নিয়ে যায় তদন্তকারী সংস্থা। এরপরই আদালত চত্বরেব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, ইমরানের ব্যক্তিগত আইনজীবীও আহত হন। তবে, ইসলামাবাদের আইজিপি ডা. আকবর নাসির খান দাবি করেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, পিটিআই চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের আগের দিন দেশটির তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেছিলেন, পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেফতার করলেই দেশের চলমান সমস্যার সমাধান হবে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং দুর্নীতির জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শাস্তি দেওয়া উচিত উল্লেখ করে মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, ইমরান খানের ‘নোংরা মানসিকতা’ সমাজে অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশে এই মুহূর্তে খাদ্য, কর্মসংস্থান এবং ব্যবসার প্রয়োজন, ইমরান খানের প্রচারিত প্রতারণা, বিশৃঙ্খলা এবং বিভ্রান্তি নয়। দেশে চরমপন্থি মনোভাব সৃষ্টির জন্য পিটিআই প্রধানকে দায়ী করে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি কাশ্মীর নিয়ে রাজনীতি করছেন এবং তার রাজনীতির জন্য ইসলামকে ব্যবহার করছেন।
পিটিআই প্রধানের বিরুদ্ধে সমাজে অসহিষ্ণুতা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে মরিয়ম আওরঙ্গজেব আরও বলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন ইমরান খান।
জিও নিউজের খবরে বলা হয়েছে, পিটিআই চেয়ারম্যানকে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিন ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে রেঞ্জার্সের সদস্যরা গ্রেফতার করে। যেখানে তিনি (খান) তার বিরুদ্ধে নথিভুক্ত একাধিক এফআইআরের বিষয়ে জামিন চাইতে গিয়েছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গ্রেফতারের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটি কালো ভিগো গাড়িতে করে নিয়ে গেছে। ইসলামাবাদ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. আকবর নাসির খান সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারের বিষয় নিশ্চিত করে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
এদিকে জানা গেছে, জমি কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত একটি মামলার কারণেই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের সহ-সভাপতি ফাওয়াদ চৌধুরি বলেন, ‘জোর করে ইমরানকে তুলে নিয়ে গিয়েছে পাক রেঞ্জার্স। তাঁর আইনজীবী ফয়জল চৌধুরীও হামলার শিকার হয়েছেন।’
আল কাদির ট্রাস্টের জমি হস্তগত করার অভিযোগ সম্প্রতি ইমরানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলার জামিন নিতেই মঙ্গলবার সকালে ইসলামাবাদ হাই কোর্টে গিয়েছিলেন তিনি। গ্রেফতারির সময় ইমরান সমর্থকেরা বাধা দিলে হাই কোর্ট চত্বরে তাদের সঙ্গে রেঞ্জার্স বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে।
ওই মামলায় আগেই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল নিম্ন আদালত। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ইমরান এবং তার স্ত্রী মানেকার মালিকানাধীন ওই ট্রাস্ট বেআইনি ভাবে একটি বাণিজ্যিক সংস্থার থেকে প্রায় ৫৩ কোটি টাকা মূল্যের জমি নিয়েছিল।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৫০
আপনার মতামত জানানঃ