অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল একজন কট্টর রিপাবলিকান হলেও টিভিতে প্রয়াত রানির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার চোখে জল এসে গিয়েছিল। তবে টার্নবুল স্পষ্ট করেই বলেছেন, অস্ট্রেলিয়াকে প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার ওপর গণভোট হয়তো শিগগিরই হবে না, কিন্তু একদিন এটা হতেই হবে, এটা অবধারিত। রাজা তৃতীয় চার্লস এখন অস্ট্রেলিয়ারও রাজা এবং রাষ্ট্রপ্রধান। তার মায়ের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সম্পর্কের এক নতুন পরিচ্ছেদের সূচনা হলো। কারণ, রাজতন্ত্রের সাথে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক মোটেও সহজ-সরল নয়, বরং বেশ জটিল। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু দেশটিতে রিপাবলিক বা প্রজাতন্ত্র ঘোষণার বিতর্ককে আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। প্রশ্ন হলো, এ সম্পর্ক ভবিষ্যতে কেমন থাকবে – বা আদৌ থাকবে কিনা। এই প্রশ্নটা আরো বড় পর্যায়ের। বিশ্ব পর্যায়ের। গণতন্ত্রের এই যুগের রাজতন্ত্র কি কাঙ্ক্ষিত?
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ’কে রাজকীয় শোভাযাত্রাসহকারে তাঁর শেষ যাত্রায় বাকিংহাম প্যালেস থেকে যখন কফিনে করে ওয়েস্টমিনস্টার হলে নেওয়া হচ্ছিল, তখন তাঁর কফিনের ওপর রাজমুকুট ইম্পিরিয়াল স্টেট ক্রাউন রেখে দেওয়া হয়েছিল। এটি হিরে-জহরতে মোড়া এক বিশ্বখ্যাত মুকুট। এটি উপনিবেশগুলোয় ব্রিটিশরাজের পদ্ধতিগত লুণ্ঠন এবং ট্রান্স আটলান্টিক দাস ব্যবসা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির প্রতীক।
এর সৌন্দর্য পৃথিবীর একটি অংশকে মোটেও বিস্ময়াভিভূত করেনি। এটি রানির উত্তরাধিকারের বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করার একটা সুযোগ দিয়েছে। কারও কারও কাছে রানি তাঁদের প্রিয় সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তবে অন্য অনেকেই বিশ্বাস করে, রানির হাতে নিপীড়িত মানুষের রক্তের দাগ লেগে ছিল। তিনি ছিলেন শেষ ঔপনিবেশিক রানি, যাঁর নামে ঔপনিবেশিকতার আনুষ্ঠানিক অবসানের পরও বহু মানুষ নিগৃহীত হয়েছে।
এটি হিরে-জহরতে মোড়া এক বিশ্বখ্যাত মুকুট। এটি উপনিবেশগুলোয় ব্রিটিশরাজের পদ্ধতিগত লুণ্ঠন এবং ট্রান্স আটলান্টিক দাস ব্যবসা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির প্রতীক।
ব্রিটিশ রাজা বা রানি একজন অনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান। এটি একুশ শতকের একটি প্রগতিশীল এবং উন্নত সমাজের সঙ্গে একেবারে বেমানান। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, ব্রিটিশ রাজতন্ত্র আক্ষরিক অর্থে দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দী করা আফ্রিকানদের পিঠে চড়ে বানানো সম্পদের ওপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। এই রাজপরিবার এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ লুট করেছে এবং দেশগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে নিয়েছে।
রাজতন্ত্রের বর্ণবাদ এবং কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধিতাকে সম্মানসূচক অবস্থানে রাখার জন্য রানি ধারাবাহিকভাবে মারমুখী অবস্থানে থেকেছেন। রানির আরেকটি অকাট্য উত্তরাধিকার হলো সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেও সরকারের কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হওয়া। অথচ তাঁর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেছিলেন, ‘ব্রিটেন আজকে তাঁর (রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ) জন্যই মহান দেশ।’
অথচ ব্রিটিশ উপনিবেশের শিকার হয়ে সাবেক উপনিবেশগুলো এখনো যে অন্যায়, দারিদ্র্য এবং অনুন্নয়নের শিকার হচ্ছে, তা নিয়ে কোনো প্রকাশ নেই। এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে চুরি করা গয়না এবং প্রত্নবস্তু বাকিংহাম প্রাসাদ এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামের দেয়ালে এখনো শোভা পায়; সে জন্যও কোনো লজ্জাবোধ নেই। আধুনিক গণতন্ত্রের যুগে যা একদমই বেমানান। আর একটা বেমানান ঘটনা এই রাজ্যাভিষেকের আয়োজন।
সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ জীবনযাত্রার সংকটে পড়েছে মানুষ। খোদ ব্রিটেনে হাজারো মানুষ গৃহহীন। হাজার হাজার মানুষ ফুড ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। লাখ লাখ মানুষ বাড়তি জ্বালানি মূল্য পরিশোধ করছে। আর এর মধ্যেই এতো আয়োজন করে এই যে রাজ্যাভিষেক।
এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে চুরি করা গয়না এবং প্রত্নবস্তু বাকিংহাম প্রাসাদ এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামের দেয়ালে এখনো শোভা পায়; সে জন্যও কোনো লজ্জাবোধ নেই। আধুনিক গণতন্ত্রের যুগে যা একদমই বেমানান। আর একটা বেমানান ঘটনা এই রাজ্যাভিষেকের আয়োজন।
ভেবে দেখুন, বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে শুরু করে সদ্য প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রিয় বারমোলার প্রাস—সব মিলিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের মোট ২৩টি প্রাসাদ আছে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে বছরে খরচ হয় ৫ কোটি পাউন্ড। রাজপরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৮৬৭ কোটি পাউন্ড। এই সম্পদের উত্তরাধিকার হয়েছেন নতুন রাজা চার্লস। সেই সঙ্গে রানির দুর্গ, রত্ন, শিল্পকর্ম ও ঘোড়ার খামারের উত্তরাধিকার হয়েছেন তিনি। আর এ সবকিছুই করমুক্ত। ১৯৯৩ সালের ব্রিটিশ সরকারের এক আইনের বলে একজন সার্বভৌম ক্ষমতার শাসকের কাছ থেকে আরেকজন সার্বভৌম শাসকের কাছে সম্পদ হস্তান্তরের সময় তা করমুক্ত।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে সভরিন গ্র্যান্ট বা সার্বভৌম অনুদান। বিষয়টি হচ্ছে, ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে রাজপরিবারের অনেক সম্পদ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে, যাকে বলে ক্রাউন এস্টেট। এর মধ্যে জমি আছে ১ দশমিক ১৬ লাখ হেক্টর। এসব জমিতে কৃষিখামারসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা আছে। সেখান থেকে যে আয় আসে, তা প্রথমে সরকারের রাজস্ব বিভাগে জমা হয়। তা থেকে একসময় ১৫ শতাংশ অর্থ সার্বভৌম অনুদান হিসেবে দেওয়া হতো।
২০১৬-১৭ সাল থেকে আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করা হয়। এটা হিসাব করা হয় সাধারণত দুই বছর আগের আয়ের ওপর। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজপরিবার এ বাবদ ৮ কোটি ৬৩ লাখ পাউন্ড পেয়েছে, যা আদতে ২৫ শতাংশেরও বেশি।
এ ছাড়া ডাচি (ডিউকের জমিদারি) হিসেবে নেট যে রাজস্ব আয় হয়, তা সরাসরি রাজার হিসাবে যায়। এই অর্থ দিয়ে অন্যান্য আনুষ্ঠানিক খরচ নির্বাহ করা হয়, যাকে বলে প্রিভি পার্স। বর্তমানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের দুটি ডাচি আছে—ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টার ও ডাচি অব কর্নওয়াল। ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টার সরাসরি রাজার অধীনে থাকে, অর্থাৎ এখান থেকে যে আয় হয়, তা রাজার ব্যক্তিগত আয়। এতে রাজার ১৮ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমি আছে। ৭০০ বছর ধরে এটি রাজার ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে কৃষিখামার, আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবন আছে। মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৫ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড। ২০২১-২২ সালে এই দুটি ডাচি থেকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের আয় হয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড। এ ছাড়া লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে রাজার আরও কিছু সম্পদ আছে, যেগুলো প্রিভি পার্সের অন্তর্গত। রাজপরিবারের সদস্যদের খরচ এই প্রিভি পার্স থেকে নির্বাহ করা হয়।
রাজপরিবারের সবচেয়ে দৃশ্যমান সম্পদ হচ্ছে অমূল্য রত্নভান্ডার, যার মধ্যে ভারতীয় কোহিনুরও আছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাব অনুসারে, যার সামগ্রিক মূল্য ১২ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২৭০ কোটি ডলার। রাজপরিবারের অন্যান্য সংগ্রহ প্রদর্শনী থেকেও আয় হয়। ২০২১-২২ সালে এ বাবদ আয় হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড। এ ছাড়া সদ্য প্রয়াত রানি এলিজাবেথের ১০০টির বেশি ঘোড়া ছিল, যেগুলো তিনি বিভিন্ন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় পাঠাতেন। সেখান থেকেও তিনি ৯০ লাখ পাউন্ড আয় করেছেন।
একসময় বলা হতো, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্যাস্ত হয় না। ফলে সারা বিশ্বের ধনসম্পদ দিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে এই রাজপরিবার। অথচ গোটা বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক রুগ্ন দশায় আছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্দার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে অর্থনীতি। বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, যেকোনো সময় পা হড়কে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ গত জুন মাসেই সংস্থাটি বলেছিল, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে করোনা মহামারি—এমন আরও অনেক কারণই চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক।
এদিকে ৯৫৩ সালে, উইনস্টন চার্চিলের সরকার রানীর রাজ্যাভিষেকের জন্য ১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করেছিলেন। আর এবার রাজা চার্লসের এ অনুষ্ঠানে খরচ হচ্ছে ১শ মিলিয়ন পাউন্ড। আজকের অর্থে ১৯৫৩ সালের রাজ্যাভিষেকের জন্য প্রায় ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়েছিল কিন্তু কিং চার্লসের অনুষ্ঠানে দ্বিগুণ খরচের কারণ হচ্ছে নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলি নিশ্চিত করা যা তখন এত বড় সমস্যা ছিল না।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাস
ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু ইংল্যান্ড, যা একসময় রোমান সাম্রাজ্যের অন্তুর্ভুক্ত ছিল। ভূখণ্ডটি যে সে সময় একেবারে অজ্ঞাত ছিল সকলের কাছে, তা নয়। তবে দেশটিতে সকলের যাওয়া-আসার সুযোগ তখনও হয়ে ওঠেনি। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শুরুর দিকে গ্রিক, ফিনিশিয়ান ও কার্থেজিয়ানরা ইংল্যান্ডের সাথে বাণিজ্য করত। গ্রিকরা এই ইংল্যান্ডকে ক্ষুদ্র এক দ্বীপ হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা ইউরোপের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত।
ধারণা করা হয়, কার্থেজিয়ান নাবিক হিমিলকো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে প্রথম এই দ্বীপে আসেন। অন্যদিকে গ্রিকদের দাবি, তাদের দেশীয় পরিব্রাজক পাইথিয়াস খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে সর্বপ্রথম এই দ্বীপে আসেন। কিন্তু অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা গ্রিক ও কার্থেজিয়ানদের দাবিকে অগ্রাহ্য করেছেন।
সেসব ইতিহাসবেত্তাদের বিশ্বাস, সর্বপ্রথম ইংল্যান্ড আবিষ্কৃত হয়েছিল জুলিয়াস সিজারের সময়। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫ এবং ৫৪ সালের দিকে দুইবার অভিযান চালান তিনি। প্রতিবারই ব্যর্থ হবার পাশাপাশি সমস্ত সৈন্যও হারাতে হয়েছিল তাকে। পরবর্তীতে আরেক রোমান যোদ্ধা আউলাস প্লাওটিয়াস খ্রিস্টাব্দ ৪৩ সালের দিকে ইংল্যান্ড জয় করেন। তার হাত ধরেই ইংল্যান্ড রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
৪১০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ইংল্যান্ডে রোমান সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে। তখন সেখানে সত্যিকার অর্থে রাজতন্ত্র গড়ে ওঠে। যার নেতৃত্ব ছিলেন অ্যাংলো-স্যাক্সনরা। তারা ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নতুন এক ধরনের শাসনব্যবস্থা চালু করে, যার নাম ছিল ‘হেপ্টারকি’। এই শাসনব্যবস্থায় ইংল্যান্ডকে সাতটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত করা হয়। এগুলো হলো: কিংডম অব নর্থামব্রিয়া, ওয়েসেক্স, মার্সিয়া, ইস্ট-অ্যাংলিয়া, এসেক্স, কেন্ট এবং সাসেক্স।
পরবর্তী ৪০০ বছর হেপ্টারকি শাসনব্যবস্থা চালু ছিল। এই সময়ে স্বাধীন সাত রাজ্যের রাজা পর্যায়ক্রমে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন ওয়েসেক্সের রাজা এগবার্ট। তিনি ওয়েসেক্স ছাড়াও কেন্ট, সাসেক্স ও সারে (ছোট এক রাজ্য) নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি তার ছেলে ইথেলওয়াফকে সারের দায়িত্ব দিয়ে তাকে উপ-রাজা বানান।
১০৬৬ সালে হেপ্টারকি ব্যবস্থার অবসান ঘটে। তখন উইলিয়াম দ্য কনকারার নিজেকে পুরো ইংল্যান্ডের একক রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন। ইংল্যান্ডের ছোট ছোট রাজতন্ত্রগুলো উচ্ছেদ করে তিনি একক রাজতন্ত্র সৃষ্টি করেন। অবশ্য উইলিয়ামের আগে ইথেলওয়াফ ইংল্যান্ডে একক কর্তৃত্ব সৃষ্টি করেছিলেন। ৯২৭ সালে তাকে ইংল্যান্ডের প্রথম রাজা হিসেবে অন্য রাজারা মেনে নিয়েছিলেন। তার শাসনকাল ইংল্যান্ডের রাজনীতি ও ইতিহাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একসময় পুরো বিশ্বে যে সুবিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিল, তার বীজ বপন করেছিলেন তিনি।
ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ভিত্তি রচনার শেষ কাজটুকু করে নরম্যানরা। ১০৬৬ সালে নরম্যানরা ইংল্যান্ড-জয় করলে উইলিয়াম দ্য কনকারার ইংল্যান্ডের একক রাজা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ইংল্যান্ড বিজয়ের পর তিনি সাতটি রাজ্য নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন, যা এখনো ইউনাইটেড কিংডম বা যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত।
উইলিয়াম দ্য কনকারারের শাসনকালের ১০০ বছর পর ইংল্যান্ডের ক্ষমতায় আসে টুডররা। তার সময়ে ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। এরপর বিভিন্ন রাজ্যের রাজাদের মধ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজা হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এই প্রতিযোগিতা থেকেই স্কটল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজা হন, যিনি ষষ্ঠ জেমস নামেও পরিচিত। ১৭১৪ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য হ্যানোভারিয়ানদের অধীনে চলে যায়।
এর পাঁচ প্রজন্ম পর রানী ভিক্টোরিয়ার জন্ম হয়। তিনি ছিলেন স্যাক্সে কোবার্গ রাজপরিবারের প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া এবং ডিউক অব কেন্ট এডওয়ার্ডের মেয়ে। রানী ভিক্টোরিয়া তার চাচাতো ভাইকে বিয়ে করার ফলে হাউজ অব স্যাক্সে কোবার্থের সৃষ্টি হয়, যা ‘স্যাক্সে কোবার্থ গথা’ নামে পরিচিত।
পরবর্তীকালে ১৯১৭ সালে জার্মানির সাথে যুদ্ধে জড়ানোর পর রাজা পঞ্চম জর্জ রাজপরিবারের নাম পরিবর্তন করে হাউস অব উইন্ডসর রাখেন। ইংল্যান্ডের উইন্ডসর শহরের নামানুসারে এমন নামকরণ। বর্তমান ব্রিটিশ রাজপরিবারের সরকারি নামও হাউস অব উইন্ডসর।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৩৫
আপনার মতামত জানানঃ