বিশ্ব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে গেল বছরের তুলনায় ১৬ ধাপ এগিয়ে ১৪৯তম হয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর ১৬৫তম স্থানে থাকা বাংলাদেশ এবার এগিয়েছে ১৬ ধাপ। বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান ও চীন। তবে বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিস্থিতি ‘বেশ গুরুতর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে সূচকে। গত ২৩ বছরের মধ্যে এবার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
শুক্রবার (২ মে) গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) তাদের ২০২৫ সালের সূচক প্রকাশ করেছে। মোট পাঁচটি (রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, নিরাপত্তা ও আইন) ক্যাটাগরিতে সূচক করা হয়েছে। এবারো সূচকের শীর্ষে আছে নরওয়ে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান দখল করেছে এস্তোনিয়া ও নেদারল্যান্ডস। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে চীন, উত্তর কোরিয়া ও আফ্রিকার ইরিত্রিয়া।
এদিকে ২০১৮ সালের পর ১৫০ এর ভেতরে উঠে আসা বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। যেখানে ভারতের অবস্থান ১৫১তম, পাকিস্তানের ১৫৮তম ও চীনের ১৭৮তম। তবে পিছিয়ে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নেপাল (৯০তম), শ্রীলংকা (১৩৯তম) ও মালদ্বীপের (১০৪তম) চেয়ে।
এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সূচকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অবস্থাকে”কঠিন পরিস্থিতি”উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনন্য এবং জটিল অধ্যায়। এই অভ্যুত্থান, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অস্বস্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা দেশের শাসনব্যবস্থায় গভীর পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করে তোলে। এই পর্বে আমরা বিশ্লেষণ করব, সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার জন্য কী ধরনের সমাধান গ্রহণ করা যেতে পারে।
অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারে বড় ধরনের নেতৃত্বের সংকট দেখা দেয়। রাজনৈতিক দলগুলো যখন একে অপরের সঙ্গে বিভাজিত, তখন সরকারের পক্ষে একটি কার্যকর এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা কঠিন হয়ে ওঠে। প্রথমদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়। প্রশাসনিক দুর্বলতা, অর্থনৈতিক চাপ এবং সামাজিক অস্থিরতা— সবকিছু মিলে একটি অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়।
এমন অস্থিতিশীল অবস্থায় সরকারের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত করা এবং দেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা। এ জন্য সরকারকে যে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে, তা হলো:
সরকারকে জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের বৈধতা অর্জন করতে হবে।
রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। সরকারকে সব মত ও পথের দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদের অভিযোগ শোনা এবং বিশ্বাসের পুনর্নির্মাণের পথে কাজ করতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য একটি শক্তিশালী প্রচেষ্টা প্রয়োজন। জাতিগত এবং ধর্মীয় বিভাজন এড়িয়ে জনগণের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। জনগণের আস্থা পুনর্নির্মাণের জন্য, সরকারের পক্ষ থেকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনর্গঠন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
২০২৪ সালের অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছে। দেশের রাজনৈতিক কাঠামো আরও সুশৃঙ্খল ও প্রতিবন্ধকতামুক্ত করার জন্য কিছু মৌলিক সংস্কার করা আবশ্যক। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকর আইন।
এছাড়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, দুর্নীতি দমন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ উদ্যোগের ওপর, যেখানে জনগণের স্বার্থে কাজ করা হবে। একদিকে রাজনৈতিক সংকট, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক বিভাজন— এই দুটি বিষয় একসঙ্গে মোকাবেলা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, যদি সরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনগণের প্রতি আন্তরিকতা দেখায়, তবে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো সম্ভব।
২০২৪ সালের অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার রাজনৈতিক সংকটের মোকাবেলা করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ভবিষ্যতে, রাজনৈতিক সমাধানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতার পথ তৈরি করা প্রয়োজন। দেশের শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ফেরাতে রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি, জনগণের বিশ্বাস অর্জন করাও গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার মতামত জানানঃ