স্টিফেন হকিং থেকে শুরু করে ইলন মাস্ক- বিশ্বের শীর্ষ কয়েকজন বিজ্ঞানী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এটি একসময় হয়তো মানব প্রজাতির জন্য একটি হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাজ শুরু ১৯৪০ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই সময় ব্রিটিশ গণিতবিদ অ্যালান টুরিং এবং নিউরোলজিস্ট গ্রে ওয়াল্টার বুদ্ধিমান মেশিন এবং তার বিভিন্ন সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি কোড ভাঙাটা খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু পারা যাচ্ছিল না।
শেষ পর্যন্ত পারলেন অ্যালান টুরিং। ব্রিটিশ সরকার আইন করে তাদের নাৎসি কোড ভাঙার তথ্য সারা পৃথিবীর কাছে গোপন রাখতে চেয়েছিল। ১৯৪৮ সালের দিকে ‘টুরিং টেস্ট ও যন্ত্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ নিয়ে কাজ শুরু করেন টুরিং।
এরপর সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে মার্কিন কম্পিউটার ও কগনিটিভ বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শব্দটি ব্যবহার করেন। এমনকী, এআই প্রযুক্তির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনিই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স আজ ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
এদিকে, মানবসভ্যতার পতন ঘটাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—এমনটাই বলছেন এআই গবেষক ও বিশ্লেষকরা। সদ্য প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে কিভাবে মানুষের সঙ্গে এআই প্রতিযোগিতায় নামবে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষকদলটিতে ছিলেন গুগল ডিপমাইন্ড প্রজেক্টের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মার্কাস হাটার এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাইকেল কোহেন ও মাইকেল ওসবর্ন। গবেষণাপত্রটি জার্নাল এআই ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা হয়েছে।
সেখানে তারা দাবি করেছেন, পৃথিবীতে শক্তির উৎস রয়েছে হাতে গোনা কয়টি, একই সঙ্গে মানবসভ্যতা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দুটিকেই উৎসগুলো সমানভাবে টিকিয়ে রাখতে পারবে না। তখন দুই পক্ষ শক্তির উৎস, যেমন—সোলার পাওয়ার প্লান্ট বা গ্যাসক্ষেত্র দখলের লড়াইতে নামবে।
আর বড়সড় সম্ভাবনা রয়েছে যন্ত্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে মানুষ তাদের পরাস্ত করতে পারবে না। কেননা মানবজাতির বেশির ভাগ দুর্বলতাকে কাটিয়ে ওঠার জন্যই মেশিনগুলো তৈরি করা হয়েছে। মেশিনগুলো মানুষকে সহজেই কাবু করতে পারবে, কিন্তু তার উল্টোটা করা হবে কঠিন।
তবে আজ সে প্রসঙ্গে যাব না। যে প্রসঙ্গে আলোচনা করব, তা হল আপনি জানলে অবাক হবেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যে ৪০ হাজার জৈব অস্ত্রের ফর্মুলা তৈরিতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা সাধারণত মানুষের শরীর এবং শরীরে বাইরে নানা ধরনের ক্ষতিকর জৈব উপাদান শনাক্ত করতে এটি ব্যবহার করেন।
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে জৈব অস্ত্র তৈরির বিষয়টি নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। খবর দ্য ভার্জের।
ন্যাচার মেশিন জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হাজার হাজার নতুন প্রাণঘাতী রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে কিছু কিছু রাসায়নিক ভাইরাস-এক্সের মতো শক্তিশালী, যা এখন পর্যন্ত বিকশিত সবচেয়ে শক্তিশালী নার্ভ এজেন্ট।
নতুন গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, কত সহজে কৃত্রিম মডেলগুলোকে নোংরা উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষিত করা যেতে পারে। একইসঙ্গে বিভিন্নি সম্ভাব্য জৈব অস্ত্র তৈরির নমুনাও তৈরি করেতে পারে।
সম্ভাব্য একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলের ওপর পরীক্ষা চালিয়েছে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, মাত্র ছয় ঘণ্টায় ৪০ হাজার জৈব রাসায়নিক অস্ত্রের ফর্মুলা তৈরি করতে পারে সেটি।
অন্য কথায় বলা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যখন অনেক শক্তিশালী, অনেক দ্রুততর হয়ে উঠবে এবং আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ওষুধের রাসায়নিক উপাদানগুলো খুঁজে বের করার বিষয়টি সামনে আসবে তখন অবধারিতভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে খুব বিপজ্জনক ও মারাত্মক ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার করবে না, তার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না।
গবেষকরা নিবন্ধে লিখেছেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে আমরা কম্পিউটার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আসছি কয়েক দশক ধরে। মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে নয়।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেতিবাচক ব্যবহার সম্পর্কে তারা আরও লিখেন, ‘আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাণিজ্যিক ব্যবহারে সম্ভাব্য অপব্যবহার সম্পর্কে চিন্তা করার ক্ষেত্রে এত দিন অজ্ঞাত ছিলাম। কারণে আমরা এত দিন মোটাদাগে কেবল এর সংশ্লিষ্ট খাতের নেতিবাচক ব্যবহার নিয়ে কাজ করেছি। সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাজ করা হয়নি।’
গবেষক দলটি একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে ‘মেগাসিন’ নামক একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমের ওপর ট্রায়াল চালায়। সেখানে এটিকে বিষাক্ত অণু শনাক্ত করে সেগুলোকে এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছিল। কিন্তু মেগাসিন করেছে তার বিপরীত।
এসডব্লিউ/এসএস/১০৫০
আপনার মতামত জানানঃ