বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে আবারও উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই উদ্বেগ জানান দপ্তরটির প্রধান উপমুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল।
বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশ ১০ ধাপ পিছিয়েছে। এর পেছনে আছে বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন। ব্রিফিংয়ে এই আইনকে সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন (ড্র্যাকোনিয়ান) আইনগুলোর একটি বলেও আখ্যায়িত করেন প্যাটেল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বশেষ বিশ্বের স্বাধীন গণমাধ্যম সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২। গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশের আরও ১০ ধাপ অবনতি হয়েছে। সূচকে বাংলাদেশের এই অবস্থানের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হচ্ছে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন।
যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন অনুযায়ী, এই আইন বিশ্বে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন আইনগুলোর একটি। এনিয়ে আমরা খুব স্পষ্ট করে আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছি। মুক্ত গণমাধ্যম এবং ‘অবহিত নাগরিক’ যেকোনো জাতি এবং এর গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন কন্টেন্টের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রয়েছে তার প্রভাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
ব্রিফিংয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ডয়েচে ভেলের ডকুমেন্টারি প্রসঙ্গে ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, আমি আবারো পুনরাবৃত্তি করতে চাই যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আমরা অবশ্যই আশা করবো বাংলাদেশ সরকার এই খবর এবং ভিডিওটির বিষয়বস্তুগুলো পর্যালোচনা করে দেখবে।
এর আগে ওই একই ব্রিফিংয়ে অপর এক বিদেশি সাংবাদিকও ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানি রিপোর্ট প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি প্যাটেলের কাছে জানতে চান, গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের ওপর যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সেটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে অগ্রসর হতে চায়?
জবাবে ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন করে পদক্ষেপ নেবে কী না সেটা নিয়ে আমি এখন নির্দিষ্ট করে কিছু বলছি না। তবে আমি এখন যা বলতে চাই তা আমি গত বৃহস্পতিবারেও বলেছি।
সেটা হলো, এই আর্টিকেল এবং ভিডিওর অভিযোগগুলো আমরা সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখবো। আমরা আশা করবো বাংলাদেশ সরকারও একই কাজ করবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
এর আগে গত ৩১শে মার্চ বাংলাদেশে সরকার যেভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ করছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর উদ্বেগ জানিয়ে বলেছিল, গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমকর্মীসহ সবার বাক্স্বাধীনতার বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, বিশেষ করে (বাংলাদেশে) নির্বাচনের বছরে।
সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসা এবং তিনিসহ প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বেদান্ত প্যাটেলকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে বাক্স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সরকার ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশ বাক্স্বাধীনতা নিয়ে সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করেছে। সরকার একের পর এক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করছে। এই তো গতকাল (বুধবার) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাদাপোশাকে বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এরপর প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে) মামলা করেছে। এ মাসের শুরুর দিকে আল-জাজিরার একজন প্রতিবেদকের ভাইয়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
জবাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘মোটাদাগে আমি যেটা বলতে চাই, তা হচ্ছে সরকারের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার নিয়ে আমরা আগের মতোই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। একটি দেশের গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমসহ সবার বাক্স্বাধীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, বিশেষ করে নির্বাচনের মতো বছরে। দায়িত্ব পালনের কারণে কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে হুমকি, হেনস্তা, শারীরিকভাবে আক্রমণ অথবা গ্রেপ্তার করা উচিত নয়।’
পরে ওই সাংবাদিক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে আরেকটি প্রশ্ন করেন। তিনি জানতে চান, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূসকে নিয়ে ৪০ বিশ্বনেতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা (বাংলাদেশের) প্রধানমন্ত্রীকে একটি খোলাচিঠি দিয়েছেন এবং সেটি ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে। এসব বিশ্বনেতার মধ্যে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনও আছেন। একজন নোবেলজয়ী ব্যক্তিকে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানির বিষয়ে মার্কিন সরকারের অবস্থান কী?
জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূসের বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত চিঠির ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মতো আমরাও অধ্যাপক ইউনূসের বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্বীকার করি। তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কারসহ আরও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মাননা পাওয়ার মধ্য দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট। তবে এ বিষয়ে আমার কাছে এ মুহূর্তে নির্দিষ্টভাবে বলার মতো কিছু নেই।’
এসডব্লিউ এসএস /১৪০০
আপনার মতামত জানানঃ