সৌদি আরবে এখন বড় ধরনের পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। আভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক দেশের সাথে সম্পর্কেও আসছে পরিবর্তন। একদিকে কাতারের সাথে দেশটির সম্পর্কের বরফ গলেছে, তেমনি দেশের ভেতরেও নানা ক্ষেত্রে বাধাবিপত্তি কাটছে।
প্রথাগতভাবেই দেশটির নারীদের ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আছে। তাদের জীবনের সিদ্ধান্তগুলো সাধারণত আসে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের মাধ্যমে। দেশটিতে নারীদের ঘোরাফেরার স্বাধীনতা নেই। তবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত ধরে এক্ষেত্রে গত কয়েকবছরে দেশটিতে বেশ কিছু বড় বড় পরিবর্তন এসেছে। তারপরও দেশটিতে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যার কারণে ক্রাউন প্রিন্সের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়ছে।
গত কয়েকবছরে সৌদি আরবের নারীদের জন্য কিছু কাজ করা হয়েছে। এর বেশ অনেকটাই কৃতিত্ব ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে দিতে হয়; যিনি দেশের সামাজিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু তার সাথে সাথে সমাজে সংস্কারের দাবি তোলা অনেকের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
এই যেমন সম্প্রতি, নারী অধিকার কর্মীদের প্রতি ‘কোমল’ মনোভাব দেখানোর জন্যে ১০ বিচারপতিকে মৃত্যুদণ্ড সৌদি সরকারের। এসব বিচারপতির অপরাধ, নারী অধিকার এবং মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি তারা কিছুটা সহানুভূতিশীল ছিলেন। সেই অপরাধেই ‘চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতক’ তকমা দিয়ে ১০ জন বিচারপতিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সৌদি আরব সরকার।
১০ জন বিচারপতির মধ্যে ৬ জন রিয়াদের স্পেশালাইজড ক্রিমিনাল কোর্টের বিচারপতি। বাকি চারজন হাইকোর্টের বিচারপতি। ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল তাদের গ্রেফতার করে সৌদি স্টেট সিকিউরিটি এজেন্সি।
তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত জেলেই বন্দি রয়েছেন তারা। তাদের কোনও রকম আইনি সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে না প্রশাসনের তরফে। শুধু তাই নয়, পরিবার এবং বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেওয়া হচ্ছে না।
সাজাপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্যে একজন হলেন আল লুহাইদান। তিনি ২০২০ সালে বিশিষ্ট নারী অধিকার কর্মী লুজাইন-আল-হাথলাউলকে তার এজলাসে পেশ করার ২ মাসের মধ্যেই মুক্তি দিয়েছিলেন। লুজাইনকে আগে ৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল সৌদি আদালত।
কিন্তু সেই মামলা লুহাইদানের এজলাসে ওঠার পর তিনি লুজাইনের শাস্তি কমিয়ে মাত্র ২ বছর ১০ মাসের সাজা শোনান। সেই সাজার বেশিরভাগটাই আগে অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তি পান ওই নারী অধিকার রক্ষা কর্মী।
বাকি ‘অভিযুক্ত’ বিচারপতিদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তাদের সরিয়ে দিয়ে ইতিমধ্যেই সেই জায়গায় অন্য বিচারপতিদের নিয়োগ করেছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স।
সূত্রের খবর, নবনিযুক্ত বিচারপতিরা রাষ্ট্রের প্রতি অত্যন্ত অনুগত। তারা ইতিমধ্যেই দেশদ্রোহিতা এবং অন্যান্য অভিযোগে বিচারাধীন মানবাধিকার এবং নারী অধিকার কর্মীদের সাজা বাড়িয়ে দিতে শুরু করেছেন।
জানা গেছে, শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া দুজনের সাজা ৮ বছর এবং ১৩ বছর থেকে বাড়িয়ে যথাক্রমে ৩৪ এবং ৪৫ বছর করে দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতিদের এভাবে অভিযুক্ত করা এবং শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করানো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এর মাধ্যমে সৌদি সরকার এই বার্তা দিতে চাইছে, যে, ন্যূনতম রাষ্ট্রদ্রোহিতাও কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
সন্ত্রাস এবং অন্যান্য অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সমাজকর্মীদের কঠোর থেকে কঠোরতম সাজা না দিলে একই শাস্তির মুখে পড়তে হবে বিচারপতিদেরও।
এসডব্লিউএসএস/১৭৫০
আপনার মতামত জানানঃ