সৌদি আরবের সরকার পবিত্র মাস রমজানের জন্য বেশ কিছু নিয়ম ও বিধি নিষেধের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। দশটি বিষয় সম্বলিত এই তালিকাটি ঘোষণা করেছেন ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবদুল লতিফ আল শেইখ। যার মধ্যে আছে মসজিদ পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশাবলী, নামাজের নিয়ম এবং রমজানের শেষ দশ দিন একা থাকা সংক্রান্ত নির্দেশাবলী।
এর মধ্যে একটি নিয়ম আছে মসজিদে মাইক ব্যবহার সংক্রান্ত। যেখানে উল্লেখ করা আছে, মাইকের শব্দের মাত্রা হতে হবে নিয়ন্ত্রিত এবং মানুষকে নামাজে আহবানের ক্ষেত্রেও শব্দের মাত্রা নির্দেশিত সীমার মধ্যে থাকতে হবে।
সৌদি আরবের সরকার মসজিদে নামাজ রেকর্ড করা এবং তা সম্প্রচার করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পাশাপাশি মসজিদে সন্তানদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও বাবা-মায়ের উপর আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
আরো আরোপ করা হয়েছে মসজিদের মধ্যকার ক্যামেরার উপর। পাশাপাশি রোজা রাখা মানুষদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্যের পেছনে অর্থ ব্যয়ের লাগামও টেনে ধরা হচ্ছে এই সিদ্ধান্তে।
এই সমস্ত নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সৌদি আরবের সরকার জানিয়েছে, এর কারণ চলতি মহামারী কোভিড-১৯। মানুষের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্যই সরকার এই সমস্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
যদিও সমালোচকরা দাবি করছেন দেশটির সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মূলত সৌদি আরবের জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ। পাশাপাশি মানুষের জীবনে ইসলামের প্রভাব কমিয়ে আনাও এর উদ্দেশ্য হতে পারে বলে মনে করছেন সমালোচকরা।
অনেক মুসলিমই ইতিমধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নিজেদের ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেছে জানা যায় তারা এই নিষেধাজ্ঞাকে সৌদি আরবে রমজান মাস উদযাপনের যে ঐতিহ্য চলে আসছে বহুদিন ধরে, তার সমাপ্তির সময় এসে গেছে এটাই বোঝাচ্ছে সরকার।
অনেকে আরো একধাপ এগিয়ে আছে। তারা সৌদি আরব এবং দেশটির সাথে সমস্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক বয়কটের দাবি জানাচ্ছে। একটি দল সরকারকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার পেছনে মূলত সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের দেশটির ধর্মীয় সংস্কৃতির আধুনিকায়ন ও পুনর্গঠন পরিকল্পনা রয়েছে।
এর আগে দেশটি নারীদের উপর আরোপ করা বহু পুরনো বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। যা কিনা বৃষ্টির অর্থনৈতিক অবস্থা আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। যদিও সমালোচকদের মতে অর্থনীতিকে মাথায় রেখে দেশটির সরকারের নেওয়া এমন সব সিদ্ধান্ত মূলত দেশটির প্রচলিত ঐতিহ্যের বিরুদ্ধাচারণ এবং মানবাধিকারের উপর আঘাতের শামিল।
পশাপাশি চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২০২৩ সালে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে হজ পালনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে পবিত্র হজ পালনে চারটি শর্ত দিয়েছে সৌদি আরব। শর্তগুলো জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সৌদি আরব। শর্তগুলো প্রকাশ করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ও অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
সৌদি আরবের দেওয়া শর্তগুলো হলো: ১. করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯), মেনিনজাইটিস এবং সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিতে হবে, ২. যারা হজ করেননি এবারের হজে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া, ৩. হজে পালনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ১২ বছর এবং ৪. হজযাত্রীর কোনো বড় দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকা যাবে না।
এসডব্লিউএসএস/০৯৩০
আপনার মতামত জানানঃ