পৃথিবীটা গোলাকার। প্রায় দুই হাজার বছরেরও আগে মানুষ এই সত্যটা আবিষ্কার করেছে। টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শুধু পৃথিবীই নয়, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া চাঁদ–সূর্য এবং গ্রহ–নক্ষত্র–উপগ্রহসহ মহাকাশের বেশিরভাগ বস্তুই গোলাকার।
চলতি বছরের শুরুর দিকে নাসা জানিয়েছিল, তারা ৫ হাজার এক্সোপ্ল্যানেটের তালিকা তৈরি করে ফেলেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই বিপুল সংখ্যক গ্রহের সবগুলোই গোলাকার! কোন ঘনকাকার, পিরামিড বা বিষম আকারের গ্রহের দেখা বিজ্ঞানীরা পাননি।
পৃথিবী সহ ব্রহ্মাণ্ডের সব গ্রহই দেখতে গোলাকার, কারণ জানাচ্ছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরাই আকৃতিকে বলা হয় ওব্লেট স্পেরয়েড। টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শুধু পৃথিবীই নয়, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া চাঁদ–সূর্য এবং গ্রহ–নক্ষত্র–উপগ্রহসহ মহাকাশের বেশিরভাগ বস্তুই গোলাকার। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা গ্যালাক্সি দিয়ে মহাকাশে উঁকি দেন।
গ্রহের নিজস্ব কোনও আলো নেই, তাই এদের পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। তারপরও অসংখ্য গ্রহ পর্যবেক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। চলতি বছরের শুরুর দিকে নাসা জানিয়েছিল, তারা ৫ হাজার এক্সোপ্ল্যানেটের তালিকা তৈরি করে ফেলেছে।
আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই বিপুল সংখ্যক গ্রহের সবগুলোই গোলাকার! কোন ঘনকাকার, পিরামিড বা বিষম আকারের গ্রহের দেখা বিজ্ঞানীরা পাননি। কেন সমস্ত গ্রহের আকৃতি একই এবং কেন তারা সবসময় বৃত্তাকার? নলাকার বা আয়তক্ষেত্রাকার নয় তা নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন উঠেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিজ্ঞানীরা এর কারণে কী বলছেন।
সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসপি) জ্যোতির্বিদ্যা, জিওফিজিক্স এবং বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এনোস পিকাজিওর মতে, “এটি মহাকর্ষের কারণে ঘটে। এই আকৃতিকে বলা হয় ওব্লেট স্পেরয়েড। এই শক্তিই পদার্থকে একত্রে ধরে রাখে। গ্রহের আকৃতি অ-সম্পূর্ণ গোলাকার। গ্রহের মেরু দিয়ে পরিমাপ করা পরিধি বিষুবরেখার পরিধির চেয়ে ছোট। গ্রহ যদি ঘনকের মত হতো, তার অর্থ হতো এর কোণাগুলি অপেক্ষাকৃত উঁচু।”
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সমস্ত পদার্থের উপর কাজ করে এবং আকৃষ্ট কণাগুলি একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে পরিণত হয়ে একটি গরম এবং তরল ভর তৈরি করে। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে এই ভর ঠান্ডা হয়ে একটি গোলাকার পৃষ্ঠ তৈরি করে।
এ জন্যেই গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্ররা গোলকাকার। যেসব গ্রহাণুর অভিকর্ষ অপেক্ষাকৃত কম, তারা গোল হতে পারে না। হয় এবড়ো থেবড়ো। বিষুব রেখার সম্প্রসারণ অনেক গ্রহেই বেশি। বৃহস্পতির বিষুব রেখা মেরুগুলির পরিধির চেয়ে ০.৩ শতাংশ প্রশস্ত। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এই আকারের অনেক গ্রহে এই পার্থক্য ৭ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছায়। সামগ্রিকভাবে সমস্ত গ্রহ একই আকারের।
মহাকাশে শুধু গ্রহই নয়, নক্ষত্র বা বড় কোনও উপগ্রহের আকারও গোলাকার হয়। অনিয়মিত বা বিষম আকার দেখা যায়, গ্রহাণু, উপগ্রহ বা ধুমকেতুর মত ছোট আকারের বস্তুর বেলায়। আকার ছোট হওয়ায় ভর কম থাকে এসব বস্তুর।
ফলে এদের মধ্যে বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল এবং নিউক্লীয় বলকে উপেক্ষা করার মত শক্তিশালী মহাকর্ষ বল তৈরি হয় না। এদের মৌল উপদানগুলোর ওপর নির্ভর করে বিদ্যুৎচুম্বকীয় এবং নিউক্লিয়ার বলের তারমতম্য তৈরি হয়।
আরও বিশদে বললে, গ্রহের জন্ম হয় মূলত নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরতে থাকা ধুলিকণা এবং গ্যাসের মিশ্রণে। মহাকর্ষ বলের টানে শুরুতে এসব কণা মিলে একটি স্তুপে পরিণত হয়। এরপর এই স্তুপটা চারপাশের আরও গ্যাস, ধুলিকণা সংগ্রহ করে আরও বড় হতে থাকে।
স্তুপের আকার যতো বড় হয়, মহাকর্ষ বলও তত বাড়ে। বাড়ে ভর। ফলে চারদিকে স্থান-কালের চাদরে বক্রতা তৈরি হয়। স্তুপের সবকিছু সবদিক থেকে আরও কাছে আসতে থাকে। একটা সময় বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় এবং নিউক্লিয়ার বলের ওপরে মহাকর্ষ বল জয়ী হয় স্তুপের ভর অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে। স্তুপের সবদিকের মহাকর্ষ বল সমান হওয়ায় এটা ধীরে ধীরে গোলাকার ধারণ করে।
এছাড়া মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তুই সবসময় সবচেয়ে স্থায়ী (স্টেবল) অবস্থায় অবস্থান করতে চায় এবং এটি অর্জন করতে হলে ন্যূনতম পৃষ্ঠতল ও সর্বোচ্চ আয়তন এ থাকতে হবে যা শুধুমাত্র গোল আকারে সম্ভব ।
এমনটা হওয়ার কারণ হল পদার্থের অভ্যন্তরে অনু-পরমাণুর গতিশক্তির কারণে বস্তুতে একটি বিশেষ চাপ কাজ করে যেই চাপ বস্তুকে গোলাকার আকার ধারণ করতে ধাবিত করে ।
আবার অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, গ্রহ সৃষ্টির সময় গ্যাসীয় রূপে অত্যন্ত আনস্টেবল থাকে এবং গ্র্যাভিটি সবসময় সেন্টার অফ পয়েট থেকে কাজ করে তাই গ্রহ গোলাকার আকৃতি ধারণ করে।
এসডব্লিউএসএস/১৩৪৫
আপনার মতামত জানানঃ