পাবনার সকল রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছে মটর মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়। দীর্ঘদিন ধরে পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত শাহাজাদপুর উপজেলার মটর মালিক ও শ্রমিকরা যৌথভাবে পাবনা থেকে ঢাকাগামী সব পরিবহনের শ্রমিকদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরণেরর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। এরই প্রতিবাদে এ পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পাবনা জেলা মটর মালিক ও শ্রমিকরা। এতে পাবনা-ঢাকা মহাসড়কসহ বিভিন্ন রুটে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শহরে ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় সকল টিকিট কাউন্টার বন্ধ। যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই দূর-দূরান্তে যাতায়াতের জন্য বাইরে বের হলেও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে পাবনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী গাড়ি চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করাসহ অতিরিক্ত চাঁদা আদায় এবং পরিবহন চালক ও যাত্রীদের মারধরের ঘটনা ঘটছে।এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি, শাহজাদপুর পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন এবং সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেও কোনো সমাধান হয়নি। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ঢাকাগামী গাড়ির চালককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাবনা থেকে সব যানবাহন গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বনপাড়া-হাটিকুমরুল হাইওয়ে হয়ে চলাচল করলেও, সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।সড়ক পথের চাঁদাবাজি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে পাবনা মোটর মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ গত সোমবার ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। নির্ধারিত সময়ে কোনো সমাধান না হওয়ায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডাকা দেয় তারা।
শ্রমিক নেতারা জানান, ‘পাবনা থেকে দেশের প্রায় ২২টি জেলায় গাড়ি চলাচল করে। ধর্মঘট চলাকালে পাবনা থেকে সব রুটের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। পাবনার ওপর দিয়ে চলাচলকারী অন্যান্য জেলার যানবাহন চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
তারা জানান, তাদের এ আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে পাবনার পরিবহন শ্রমিকদের লাঞ্ছিত, অবৈধভাবে চাঁদা আদায় এবং যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়ার বিরুদ্ধে। তারা এর স্থায়ী সমাধান আশা করেন।
তারা বলেন, সমাধানের লক্ষ্যে প্রশাসন যেকোনো সময় আমাদের ডাকলে আমরা বসতে প্রস্তত আছি। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনার মালিক ও শ্রমিকদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পরিবহন শ্রমিকদের এহেন ধর্মঘটে বিপাকে পড়েছে যাত্রীরা। সিরাজগঞ্জ এবং পাবনার মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের অন্তর্গত দ্বন্দ্বের ভোক্তভুগি হচ্ছে দূর-দূরান্তগামী এসব যাত্রীরা। প্রতিদিন এই রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীরা ধর্মঘটের কারণে তাদের প্রয়োজনীয় যাতায়াত বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। একই সাথে মালবাহী সমস্ত পরিবহন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনার মালিক শ্রমিকদের অন্তর্গত দ্বন্দ্ব মেটাতে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যত কোনো ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি বলে যাত্রীরা ব্যবসায়ীরা আজ এই ধর্মঘটের শিকার হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে পাবনাগামী পরিবহনের ওপর চাঁদাবাজি ও নির্যাতনকে আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এসব অপকর্মে সিরাজগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতার কারণে দুর্বৃত্তরা এসব কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরেই পরিচালনা করে আসছে। একই সাথে প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব হয়ে থাকার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তারা। সিরাজগঞ্জ এবং পাবনার মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যকার এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে অতিসত্বর রুট চালু করে যাত্রীদের যাতায়াত অবাধ করার আহ্বান জানান তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০৫
আপনার মতামত জানানঃ