যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনা ভাইরাসের নতুন ধরণ(স্ট্রেইন) নিয়ে গোটা বিশ্বই ইতোমধ্যে আতঙ্কিত। করোনার এই নতুন ধরণের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে, একই সাথে নিয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা। তবুও যেন থামানো যাচ্ছে না এই নতুন করোনা। ফাঁক—ফোঁকর দিয়ে ঢুকে পড়ছে বিভিন্ন দেশে। এবার খবর পাওয়া গেলো প্রতিবেশি দেশ ভারতেও শনাক্ত হয়েছে করোনার এই নতুন স্ট্রেইন এবং একই সাথে বিস্তার লাভ করছে দ্রুত গতিতে।
জানা যায়, গতকাল ভারতে ৬ জনের শরীরের করোনার এই নতুন স্ট্রেইন পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে তিনজন বেঙ্গালুরুতে, দুজন হায়দারাবাদে ও ১ জন শনাক্ত হয়েছেন পুনেতে। কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে আজ বুধবার(৩০ ডিসেম্বর) সেই সংখ্যা বেড়ে ২০ এ দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ২ বছর বয়সী এক শিশুও রয়েছে।
জানা যায়, যুক্তরাজ্যে নতুন করোনা শনাক্ত হবার পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ভারতও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তবে বিচ্ছিন্ন করার আগেই ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য থেকে ৩৩ হাজার যাত্রী ভারতে প্রবেশ করেছেন। এখান থেকেই দেশব্যাপী করোনা ছড়িয়েছে বলে ধারণা করছে দেশটি। বলা হচ্ছে, নতুন স্ট্রেন পাওয়া গেছে এমন একজন যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে ট্রেনে করে দিল্লি থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ গিয়েছিলেন। তার থেকেই ছড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন। নতুন স্ট্রেন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় দেশটিতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
দুই বছর বয়সী এক শিশুর করোনা শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, শিশুটিও সম্প্রতি তার পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্য থেকে ভারতে ফিরেছিল। ফেরার পর ওই পরিবারের মোট চারজনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাদের প্রত্যেকের রিপোর্টই পজিটিভ আসে। নতুন স্ট্রেনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে তাদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করানোর জন্য দিল্লি পাঠানো হয়। চারটি নমুনার মধ্যে বাচ্চাটির শরীরে নতুন স্ট্রেনের খোঁজ মিলেছে।
খবরে বলা হয়েছে, শিশুটির পরিবার থাকে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মেরঠে। তার আক্রান্ত হওয়ার পর ওই এলাকা সিল করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কঠোর নজরদারিও চালাচ্ছে প্রশাসন।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় আক্রান্তদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর পাশাপাশি করোনা টেস্টে পজিটিভদের অন্তত ৫ শতাংশের জিনোম সিকোয়েন্স করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এদিকে করোনার নতুন স্ট্রেইন নিয়ে বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে তৈরী হয়েছে চাপা আতঙ্ক। বাংলাদেশে ইতিপূর্বে তিনজনের শরীরে করোনার নতুন ধরণ শনাক্ত হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ শনাক্ত হওয়া এই স্বতন্ত্র করোনা যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনার সাথে মিল নেই। তাছাড়া বাংলাদেশে চলমান আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন শনাক্তের সুযোগ বা সক্ষমতাও নেই। নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশে আছে কি না, তারচেয়ে বড় বিষয় চলে আসার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না বলে জানান তারা। কোনোভাবে যদি ব্রিটেনের নতুন স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্টটি বাংলাদেশে চলে আসে তবে তা সংক্রমণের বিস্তার ত্বরাণ্বিত করতে পারে বলে মনে করেন। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরো সতর্ক অবস্থানে থাকার পরামর্শও দেন। বলেন, এখন কেবল যুক্তরাজ্যের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বা সে দেশটির প্রতি সতর্ক থাকলেই করোনার এই নতুন রুপ ঠেকানো যাবে না, পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও এই অবস্থান জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে ভারতের সাথে বাংলাদেশের অবাধ যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিও সতর্ক নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৪
আপনার মতামত জানানঃ