ব্রিটেনের নিউ ক্যাসেলে সেন্ট মেরি গির্জায় ‘সেক্স পার্টি’র অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ভ্যাটিকান।
গোটা ব্রিটেন যখন কোভিডের কারণে কঠিন লকডাউনের মধ্যে তখন এই সেক্স পার্টি হয়। এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আর্চবিশপ অব লিভারপুলকে। তিনি বৃটিশ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পোপের উপদেষ্টারা তাকে এই অভিযোগের ‘গভীর তদন্ত’ করার নির্দেশ দিয়েছে।
গার্ডিয়ানের খবরে জানানো হয়, গত ডিসেম্বর মাসে হেক্সহাম এবং নিউক্যাসেলের বিশপ রবার্ট বাইর্ন পদত্যাগ করেন। ২০১৯ সালে তাকে বিশপ করা হয়। একইসময় নিউ ক্যাসেলের সেন্ট ম্যারি ক্যাথেড্রালের ডিন নিযুক্ত করা হয় ফাদার মাইকেল ম্যাকয়কে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র সানডে টাইমসকে জানান, এই মাইকেল ম্যাকয়ই লকডাউন চলাকালীন বেশ কয়েকজন ‘প্যারিসনার’ বা চার্চের বাসিন্দাকে একটি ‘পার্টিতে’ যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানান। নিউক্যাসেল ক্যাথেড্রালের সঙ্গে লাগোয়া যাজকদের থাকার স্থানে ওই ‘সেক্স পার্টি’ অনুষ্ঠিত হয়।
তবে রবার্ট বাইর্ন এ পার্টির বিষয়ে জানতেন এমন কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তারপরেও তিনি গত ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন।
তিনি সেসময় বলেন, এই দায়িত্ব পালন করা তার জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ম্যাকয়ের বিরুদ্ধে এর আগেও শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে তদন্তের সময় ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেন তিনি।
মূলত চার্চের নান ও যাজকরা অন্য সাধারণ মানুষের মতো তারাও পর্নভিডিও দেখেন। অনলাইন পর্নোগ্রাফি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় এতে আসক্তি বাড়ছে তাদেরও। খোদ ভ্যাটিক্যান পোপ ফ্রান্সিস এমনটা স্বীকার করলেন।
পাশাপাশি পর্নোগ্রাফির বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি স্বীকার করে নেন, যাজক ও নানরাও পর্নোগ্রাফি দেখেন। এই অভ্যাস ধর্মীয় মননকে ‘দুর্বল’ করে দেয়।”
ভ্যাটিকানে ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওই প্রশ্নের জবাবে ৮৬ বছর বয়সি পোপ বলেছেন, ‘পর্নোগ্রাফি নামক পাপ এখন অনেক মানুষের মধ্যে ঢুকে পড়েছে…এমনকি যাজক ও নানরাও তার মধ্যে আছেন।’ তাদের তিনি বলেছেন, ‘শয়তান ওই পথ ধরেই প্রবেশ করে।’
সেমিনারিয়ানদের সঙ্গে কথা বলার সময় পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘এটি (পর্নোগ্রাফি) এমন একটি পাপ, যা অনেক মানুষের মধ্যে আছে। অনেক সাধারণ মানুষ, অনেক সাধারণ নারী, ধর্মযাজক এমনকি নানদের মধ্যেও এটা রয়েছে। শয়তান এর মাধ্যমেই প্রবেশ করে।’
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভ্যাটিকানে ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে পর্নোগ্রাফি নিয়ে সাবধান করে পোপ বলেছেন, ‘এই প্রলোভন (পর্ন আসক্তি) তাদের হৃদয়কে দুর্বল করে দেয়।’
পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ”ডিজিটাল পর্নোগ্রাফির প্রলোভন আছে, যদি তা দেখা দরকার বলে আপনারা মনে করেন, তাহলে মনে করিয়ে দেব, একাজ নীতিবহির্ভূত। এ মোটেই পূণ্যের কাজ নয়। যাজক ও নানদের মধ্যেও এধরনের ছবি দেখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।”
তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘আমি শিশুদের উপর অত্যাচারের কথা বলছি না, আমি সাধারণ পর্নোগ্রাফির কথা বলছি।’
ওই আলোচনাসভায় পোপ বলেছেন, “আমাদের সকলের হৃদয়ে যীশু খ্রিষ্ট বসবাস করেন। সেখানে পর্নের মতো অপবিত্র বস্তুকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া যায় না। ধর্মযাজক-সহ সমস্ত ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রতি পোপের বার্তা, “ফোন থেকে পর্ন জাতীয় ছবি মুছে ফেলুন। বরং ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়াকে অন্য কাজে ব্যবহার করুন। খ্রিষ্টিয়ান হওয়ার আনন্দ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিন ইন্টারনেটের মাধ্যমে।”
যদিও টুইটারে পোপের ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটির উপরে, তবুও তিনি একেবারেই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকেন। পোপ জানিয়েছেন, তার মোবাইল ফোন নেই, তিনি কখনো ব্যবহারও করেননি। তার কথায়, ‘অনেকে মোবাইলে খবর বা গান শোনায় আসক্ত হয়ে পড়েন। এই আসক্তি তাদের কাজে প্রভাব ফেলে।’
তার বক্তব্য, ‘পবিত্র হৃদয় হলো, যা প্রতিদিন যিশুকে গ্রহণ করে এবং যা পর্নোগ্রাফিকে গ্রহণ করে না।’ তার প্রস্তাব, ‘মোবাইল ফোন থেকে পর্নোগ্রাফি ডিলিট করে দেয়া উচিত। তাহলে প্রলোভনের ফাঁদে পড়তে হবে না।’
উল্লেখ্য, ক্যাথলিক চার্চের ক্যাটিসিজম (চার্চের সংবিধান) অনুসারে, পর্নোগ্রাফি বানানো ও দেখার সঙ্গে জড়িতরা গুরুতর অপরাধী। গির্জার মতবাদ অনুসারে, পর্নোগ্রাফি হলো সতিত্বের বিরুদ্ধে অপরাধ। এটি দাম্পত্যকে বিকৃত করে।
এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে স্বল্পবসনা ব্রাজিলিয়ান মডেল নাতালিয়া গারিবোত্তোর ছবিতে পোপ ফ্রান্সিসের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে ‘লাইক’ দেয়ার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
তবে পরে এই ‘লাইক’ তুলে নেয়া হয়। সে সময় ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
‘ফ্রান্সিসকাস’ অ্যাকাউন্ট থেকে লাইক পাওয়ার পর ব্যাপক আলোচিত হয়ে ওঠেন নাতালিয়া। প্রতিক্রিয়ায় তিনি লেখেন- ‘এবার আমি অন্তত স্বর্গে যাব।’
এর পরের মাসেই ইন্সটাগ্রামে লাস্যময়ী স্বল্পবসনা মডেলের ছবিতে লাভ রিঅ্যাক্টের সাইন দিয়ে বড়দিনের ঠিক আগে ফের আলোচনার জন্ম দেন পোপ ফ্রান্সিস। এবার তিনি মুগ্ধ হন মডেল মার্গট ফক্সের ছবিতে।
ইন্সটাগ্রামে কালো সাঁতারের পোশাকে ছবি পোস্ট করেছিলেন মার্গট। আর সেটিই দৃষ্টি কাড়ে ভ্যাটিকান প্রধানের।
পোপের লাভ রিঅ্যাক্ট পাওয়ার পর দারুণ উচ্ছ্বসিত মার্গট লেখেন, ‘আমার ছবিতে পোপের লাইক দেয়া মানেই আমার জন্য স্বর্গের দ্বার উন্মুক্ত?’
প্রসঙ্গত, ভ্যাটিকানের অন্দরে বহুবারই যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধে। তবে প্রকাশ্যেই এহেন ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। পর্ন ছবির বিরোধিতাও এই প্রথম নয়। কিছুদিন আগেই তিনি বলেছিলেন, পর্ন ছবি বানানো মানে নারী-পুরুষের সম্পর্কের সম্মান নষ্ট করা। এহেন ছবির ফলেই মানুষের মনে শয়তান প্রবেশ করে। তবে প্রকাশ্যেই যাজক ও নানদের পর্ন দেখা নিয়ে যেভাবে সরব হয়েছেন পোপ, তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে নানা মহলে। অন্যদিকে, পোপের এহেন আচরণের প্রশংসাও করছেন অনেকেই।
উল্লেখ্য, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটের অভাব নেই। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, সেক্স প্রসঙ্গে যারা সংযমী, বেশি পর্ন তারাই দেখে!
বলা হয়েছে যারা সেক্স নিয়ে কথা বলে বা একেবারেই বলে না, তাদের মধ্যে পর্ন দেখার প্রবণতাও বেশি। সাধারণত আমরা ধরে নেই, যৌনতা বিষয়ে আগ্রহীরাই পর্নো সাইটগুলোর নিয়মিত ব্রাউজার। কিন্তু সমীক্ষা বলছে একেবারেই উল্টোটা।
ডব্লুডব্লুডব্লু ডট বাসেল ডটকম ১৯৯৮ জন পুরুষকে তিনটি বিভাগে ভাগ করে একটি সমীক্ষা চালায়। তিনটি বিভাগের মধ্যে একদল, যারা বেশি যৌন আগ্রহী, একদল যাদের যৌন সংসর্গের অভিজ্ঞতা রয়েছে আর একদল, যারা যৌনতা নিয়ে সংযমী।
এই তিন বিভাগের পুরুষদের মধ্যে সমীক্ষার পর দেখা গেছে, যারা বেশি যৌনতা মুখে পছন্দ করেন, তারা কিন্তু আদৌ খুব একটা পর্নোগ্রাফি দেখতে আগ্রহী নন। বরং যারা সংযমী বেশি, তারাই লুকিয়ে পর্নোগ্রাফিট দেখেন।
এসডব্লিউএসএস/১৫০০
আপনার মতামত জানানঃ