নতুন বছরটা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের একের পর এক সফর এবং মিয়ানমারের পশ্চিম সীমান্তে বিদ্রোহী ও সেনাবাহিনীর ক্রমবর্ধমান লড়াইয়ে দেশটির জান্তা বাহিনীর আকাশপথে উপর্যুপরি শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে। এই দুটো ঘটনাকে একই পৃষ্ঠার এপিঠ ওপিঠ বলে ভেবে নেওয়া যায়। কারণ এই দুই ঘটনার সমন্বয়েই বদলে যেতে চলেছে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক চেহারা।
পেন্টাগন ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের এমনতর সফরগুলো এই জল্পনাকেই জ্বালানি যোগাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের উপরে বসনিয়ার মতো নো ফ্লাইং জোন ঘোষণা করতে চলেছে, যদি না তারা দেশটিতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সরাসরি সেনা অভিযান না চালায়। তবে মিয়ানমারে নো ফ্লাইং জোন আরোপ করার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের লজিস্টিক সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন হবে। আর বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জন্যই এত বেশি বাংলাদেশ সফরে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
সম্প্রতিই ডোনাল্ড ল্যু বাংলাদেশে এসেছেন। তবে এটা দেখানো হচ্ছে যে তার বাংলাদেশে আসার অন্যতম উদ্দেশ্য এখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। যদিও নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, ল্যুর বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য ভিন্ন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাথে বৈঠক সত্ত্বেও ল্যুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ছিল সালমান এফ রহমানের সাথে। এর আগে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা। আর সেটি ছিল ভারতের সাথে। তাই এই অতি সহজ সমীকরণ থেকে আরও অতি সহজ যে সমাধান আমরা পাই তা হল, উপরে উল্লেখিত লজিস্টিক সাপোর্টের জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের এই ছোটাছুটি।
সালমান এফ রহমানের সঙ্গে ডোনাল্ড ল্যুর বৈঠক
ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাথে তার নিজ বাসায় বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড ল্যু।
বাসাটিতে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক অবস্থান করেন তিনি। তবে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কোনো কথা বলেননি। সাধারণ ভাবে মনে হবে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাণিজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতেই এই বৈঠক। এ বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিবের সাথে বৈঠক করতে মন্ত্রণালয়ে যান ডোনাল্ড ল্যু।
প্রসঙ্গত, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড ল্যু গত শনিবার সন্ধ্যায় দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসে পৌঁছান। বাংলাদেশে অবস্থানকালে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ডোনাল্ড ল্যু বাণিজ্য, অর্থনীতি, মানবাধিকার এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ডোনাল্ড ল্যুর সফরে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আর ঢাকার পক্ষ থেকে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীকে ফেরত নিয়ে আসাসহ নানা বিষয় আলোচনায় রাখা হয়।
এখানে যে প্রশ্নটি আমাদের গণমাধ্যম এড়িয়ে গেছে তা হল, এত উচ্চ পর্যায়ের লোক থাকতে কেন যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা বাংলাদেশের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টাকে বেছে নিলেন! এবং তার সাথে তার বাসায় গিয়ে বৈঠক করলেন, তাও রুদ্ধদ্বার, তাও দীর্ঘ দেড় ঘন্টার! এমনকি বৈঠকের পর তারা এড়িয়ে গেলেন গণমাধ্যমকে! যদি তাদের মধ্যে শিল্প বাণিজ্য নিয়ে বৈঠক হয়, তবে সে বিষয়ে গণমাধ্যমকে তথা দেশবাসীকে জানানোই তো তাদের অন্যতম দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিশেষত বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন নানা চাপে, নানা প্রশ্নে বিতর্কের চূড়ান্ত সীমায় অবস্থান করছে, আছে প্রবল ঝুঁকিতে; এমন একটা সময়ে দেশবাসীকে কেন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের তথ্য থেকে বঞ্চিত করা হলো!
এর কারণ এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল শিল্প বাণিজ্য নয়। বরং শেখ হাসিনাকে বার্তা দেওয়া। আর এই বার্তা লজিস্টিক সাপোর্টের। মিয়ানমারকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই ছিল এই বৈঠকের উদ্দেশ্য। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সালমান এফ রহমান শেখ হাসিনা অব্দি পৌঁছানোর পথ।
ভারত-বাংলাদেশকে মিয়ানমারের উস্কানি
সম্প্রতি কিছু দিন আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে গোলা নিক্ষেপের ঘটনায় বান্দরবান সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া এলাকার সীমান্তে পড়ে। বিস্ফোরণে একজন নিহত ও পাঁচ জন আহত হন। এই ঘটনার পর থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যায়।
উল্লেখ্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে নিজ দেশের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীদের শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় একের পর এক স্থলমাইন স্থাপন করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। প্রথমে এ ধরনের মাইন বিস্ফোরণে রোহিঙ্গারা হতাহত হলেও বাংলাদেশিরাও পরে এর শিকার হয়েছে।
পাশাপাশি চলতি বছরে গণমাধ্যমের সূত্র মতে, মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরাম আন্তর্জাতিক সীমান্তে অন্তত দুটি অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা ফেলেছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমারের চিন প্রদেশে একটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সদর দপ্তর লক্ষ্য করে এ হামলা চালায় মিয়ানমারের বিমানবাহিনী। এ হামলার বিস্তারিত সরকারিভাবে জানানো হয়নি। তবে ভারতের একটি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট জানিয়েছে, এ হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
সরকারি সূত্র ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধৃত করে দ্য প্রিন্ট নামের ওই ওয়েবসাইট জানিয়েছে, এ ঘটনায় অন্তত ১২ জন আহত হন, তাদের মধ্যে অন্তত ২ জন শিশু। মিয়ানমারের বিমানবাহিনী গণতন্ত্রকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন চিন ন্যাশনাল আর্মির (সিএনএ) সদর দপ্তর ক্যাম্প ভিক্টোরিয়া লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয় বলে জানা যায়।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানও খবরটির সত্যতা স্বীকার করেছে। তবে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বোমা ফেলা হয়েছিল ভারতের অংশে মিজোরামের ফকাওয়ান নামক এক গ্রামে। গার্ডিয়ান বলছে, এই ঘটনায় কেউ আহত হননি।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্ট
গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ‘বার্মা অ্যাক্ট’ বিল পাস হয়। যুক্তরাষ্ট্রের চার্চগুলো এই বিল পাসের জন্য লাগাতার তদবির করে যাচ্ছিল।
মূলত এই বিল এবং বাইডেন প্রশাসনের ২০২৩ সালের প্রতিরক্ষা বাজেটে তার অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ, ভারতসহ এ অঞ্চলের মনোযোগ দাবি করে। বাইডেন প্রশাসনের এ রকম পদক্ষেপে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা’র ধারায় অনেক পরিবর্তন আনতে পারে। যে পরিবর্তন কেবল মিয়ানমারে নয়, আশপাশের দেশগুলোয় ইউএসএইডের তৎপরতায়ও দেখা যেতে পারে।
এবার এ ‘বার্মা অ্যাক্ট’ অনুমোদন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাজেটে তার সংযুক্তির মূল রাজনৈতিক ফল কী হবে, সেটা অনেককে ভাবাচ্ছে এখন। নিশ্চিতভাবে এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরও সরাসরি যুক্ত হয়ে গেল। যদিও এ যুক্ততা ঘটবে তাদের ভাষায় ‘মানবিক সহায়তা’র মাধ্যমে। কিন্তু এ-ও প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে এবং বিলেও আছে, মিয়ানমারের ভেতরকার গণতন্ত্রের সংগ্রামকে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেবে।
দেশটিতে ‘বেসামরিক সরকার’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে মদদ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে এবং জান্তাবিরোধী এনইউজি সরকারের কথাও সেখানে আছে। দেশটির বর্তমান সামরিক সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ‘বেআইনি’ কর্তৃপক্ষ মনে করছে এবং তাদের যারা তহবিল দেবে—এমন শক্তির বিরুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র শক্ত ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ করে রাশিয়া ও চীন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা দিলে যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে বলেও ‘বার্মা অ্যাক্ট’ বলছে। জান্তার শক্তি কমাতে মিয়ানমারের জ্বালানি খাতও এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বড় লক্ষ্যবস্তু হবে বলে উল্লেখ রয়েছে এতে। খনিজ জ্বালানি এই মুহূর্তে স্থানীয় সেনা-তহবিলের বড় উৎস।
যেভাবে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ
বার্মা অ্যাক্ট প্রকাশ্যে আসার প্রক্রিয়া স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, কারেন-কাচিন-চিনদের নির্বিচার আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা থামাতে যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে হস্তক্ষেপ করবে ভবিষ্যতে। বাংলাদেশের জন্য বিষয়টা তাৎপর্যবহ। কারণ, এসব অঞ্চল মিয়ানমারের দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং বাংলাদেশের নিকটবর্তী।
নাগা নেতা ফিজো যেমন একসময় কাচিনে থাকতেন, মিজো নেতা লালডেঙ্গাও একসময় চট্টগ্রামে থাকতেন। আজকের ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ যেন পুরোনো এসব ইতিহাসকেই ফিরে ফিরে দেখাচ্ছে এবং ভাবাচ্ছে। সীমান্তপ্রাচীর তুলে সীমান্তের দুই দিকের ইতিহাসকে মুছে ফেলা কঠিন, যা বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ১৯৮৯ সালে জার্মানরা একবার দেখিয়েছিল।
নামে ‘বার্মা অ্যাক্ট’ হলেও এই আইন যুক্তরাষ্ট্র ও মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ কোনো বিষয় নয়। এই আইনের মনোযোগ এমন এক এলাকায়, যেখানে কেবল ভারত নয়, চীনেরও ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক স্বার্থ রয়েছে।
ফলে ভারতের পাশাপাশি চীনেরও বার্মা অ্যাক্টের ফলাফল নিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। মিয়ানমারের জান্তার বড় এক অভিভাবক বেইজিংয়ের নেতৃত্ব। ফলে নতুন পরিস্থিতির আঁচ লাগবে সরাসরি তাদের গায়েও।
তবে বাংলাদেশের জন্যও এই আইন–পরবর্তী ভবিষ্যৎ গুরুত্বপূর্ণ ভাবনার জায়গা তৈরি করছে। মিয়ানমার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভঙ্গি দক্ষিণ এশিয়ার এদিকে কূটনীতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা ছড়াতে পারে। এ রকম উত্তেজনা সব সময় যে সীমান্তের কাঁটাতারে আটকে থাকে, তা কিন্তু নয়।
নো ফ্লাই জোনের কারণ
মিয়ানমারের সামরিক এস্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি) ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকারের পতন ঘটিয়েছিল। সেই থেকে তারা শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে সক্ষম হয়েছে।
তবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করায় এসএসি নজিরবিহীন প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সামরিক গোষ্ঠীর আধিপত্য ও শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী, রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করা মানুষ, নির্বাসনে থাকা নতুন জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) এবং দেশজুড়ে একাধিক স্থানে বিক্ষোভ করা পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফএস) সদস্যরা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।
জান্তা সরকার যদিও বেশ আন্দোলনের মুখে খানিকটা ‘জখম’ হয়েছে, তথাপি তারা এখনো প্রবল প্রতাপে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে তিনটি প্রধান পদ্ধতির মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেশে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
সেগুলো হলো প্রথমত, সেনাবাহিনীর হাতে একটি দেশীয় অস্ত্রশিল্প রয়েছে, যা তাদের ক্ষুদ্র অস্ত্র এবং হালকা অস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিদেশিদের কাছ থেকে পাওয়া বিমান শক্তি এবং ভারী কামানের তীব্র ব্যবহার, যা সরকারবিরোধীদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তৃতীয়ত, নির্বিচার সহিংসতার ব্যাপক ব্যবহার, যার মাধ্যমে গোটা সামরিক বাহিনী একটি খুনে বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
এখন জান্তা সরকারের দখলে আছে দেশটির মাত্র ১৭ শতাংশ এলাকা। বিদ্রোহীদের দখলে আছে প্রায় ৫০ শতাংশ। বাকি অংশে চলছে নিয়ন্ত্রণের জন্য যুদ্ধ। অর্থাৎ এটা বলাই যায় যে মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। কারণ মাত্র ১৭ শতাংশ এলাকা দখলে নিয়ে আর যাই হোক একটি দেশ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এর আগে আমরা জেনেছি দেশটিতে জান্তা সরকারের এখনো আধিপত্য থাকার দ্বিতীয় অন্যতম কারণ দেশটির হাতে থাকা বিমান বাহিনী। আর এই কারণটারই ইতি ঘটাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর এই জন্যই নো ফ্লাইং জোন।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস ধরেই মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিদ্রোহী দমনে অভিযান চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি এ অভিযান আরও জোরদার করেছে মিয়ানমার সেনারা। আর এজন্য একযোগে দেশটির বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিমান হামলা চালায় তারা। আর এখানেই কার্যকর হয়ে উঠবে নো ফ্লাইং জোন।
কারণ নো ফ্লাইং জোনের অর্থ মিয়ানমারের আকাশে বিমান ওড়াতে পারবে না মিয়ানমার নিজেই। যদি ওড়ায় তাহলে হামলা করার অধিকার থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। এ কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন বাংলাদেশ ও ভারতের ভুমি। আর এভাবেই আরও পিছিয়ে পড়বে জান্তা সরকার। কারণ বসনিয়ায় ন্যাটো যেভাবে নো ফ্লাইং জোন ঘোষণা করেছিল ঠিক একইভাবে মিয়ানমারেও যদি যুক্তরাষ্ট্র তাদের উদ্দেশ্যে সফল হয় তাহলে ঘুরে যাবে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের মোড়।
এসডব্লিউ/বিপ্র/২০৫৫
আপনার মতামত জানানঃ