জ্বালানি সঙ্কট বুঝতে ইউরোপকে বুঝতে হবে। ইউরোপ ইতোমধ্যে তার স্টোরেজগুলোয় পুনরায় গ্যাস মজুত করতে সক্ষম হয়েছে এবং নভেম্বরের মধ্যে সেগুলোর ৮০ শতাংশ পূর্ণ করার যে লক্ষ্য ছিল তা পূরণ করেছে। ফলে আসন্ন শীতে মহাদেশটির হাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প খোঁজাও অব্যাহত রেখেছে ইউরোপ। এ ছাড়া জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম মোকাবিলায় জনগণকে সহায়তা করার জন্যও নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
যদিও ইউরোপের স্থিতিশীলতা এবার নির্ভর করছে তুলনামূলক ‘স্বাভাবিক’ শীতের ওপর। কারণ তাপমাত্রা খুব বেশি কমে গেলে জ্বলানির চাহিদা বাড়বে কয়েকগুণ। তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ইউরোপীয় অর্থনীতিও ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ, প্রচুর ব্যয়বহুল হওয়ায় এ অঞ্চলে তেমন কিছুই উৎপাদন করা হয় না।
তবে বিশেষজ্ঞরা একটি জায়গায় সম্মত যে, পরিস্থিতি কঠিন হলেও এবারের শীত মৌসুম হয়তো কোনোভাবে পার করতে পারবে ইউরোপ। তবে উদ্বেগ বেশি পরের বছর কী ঘটবে, তা নিয়ে।
তারা বলছেন, সমস্যা এখনই দূর হবে না। আগামী বছরগুলোতে এ ধরনের পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয়া যায়. তা নিয়ে এখনই পরিকল্পনার প্রয়োজন। কারণ আগামীতে এই সংকট আরও তীব্র হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতির জেরে যদি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আরও বাড়তে থাকে, বেকারত্বের হার বেড়ে যায় এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়; এর সার্বিক প্রভাব প্রতিফলিত হতে পারে রাজপথে। অর্থাৎ দেশে দেশে সাধারণ মানুষ তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু করতে পারে।
পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ?
এটা তর্কাতীতভাবে সত্য যে ২০২২ সালের প্রধান সংকট জ্বালানি। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে ইউরোপ। অঞ্চলটিতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। মূলত এই সংকটের কারণেই একদিকে ত্বরান্বিত হয়েছে মূল্যস্ফীতি অন্যদিকে অর্থনৈতিক মন্দা।
বলা হচ্ছে, ২০২৩ সালেও তেল ও গ্যাসের বাজারে অস্থিরতা থাকবে। তবে একটি নতুন জ্বালানি ব্যবস্থা তৈরি করতে বিশ্ব দ্বিগুণ চেষ্টা করবে, যা হবে সস্তা, পরিবেশ সম্মত ও অধিক নিরাপদ।
জীবাশ্ম জ্বালানি শেষের পথে, কিন্তু কোনো রাজনীতিবিদ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সত্যটুকু বলতে চান না। আসল ঘটনা হলো, আমরা ইতোমধ্যে তেল, কয়লা, ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছি। কারণ অবশ্য মজুত ফুরিয়ে যাওয়া নয়, বরং এগুলো মাটির নিচ থেকে উত্তোলনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খরচ দিন দিন এমনভাবে বাড়ছে, যা এগুলি থেকে পাওয়া লাভের তুলনায় ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।
অর্থাৎ, ফুরিয়ে আসছে কম খরচে উত্তোলনযোগ্য মজুত। অন্যদিকে সৌরশক্তি বা অন্য যেকোনো ‘ক্লিন এনার্জি’র পক্ষেও তাদের বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতায় জীবাশ্ম জ্বালানিগুলোর প্রতিস্থাপক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত নেই।
জ্বালানির এ সমস্যাটা মূলত পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা। বিশ্বের সব অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য মাথাপিছু জ্বালানি ব্যবহার বা আদতে মাথাপিছু সম্পদ পর্যাপ্ত পরিমাণে বেশি থাকতে হয়। এর বিপরীত হলেই, সভ্যতা হয়ে ওঠে পতনোন্মুখ। ইতিহাসও তা-ই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
রাজনীতিবিদেরা তাই সরাসরি বলতে পারবেন না যে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতি ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। বরং তারা সাধারণের সামনে নিজেদের কর্তৃত্ব নিয়ে একটি বিভ্রম তৈরি করে রাখেন।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সপ্তাহে দেয়া বক্তৃতায় আইইএর প্রধান বলেছেন, তীব্র ইউক্রেন সংকটের মধ্যেই ইউরোপে এলএনজির ক্রমবর্ধমান আমদানি এবং চীনে পুনরায় জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি বাজারকে আরও কঠিন করে তুলবে। আগামী বছর বিশ্ববাজারে মাত্র ২০ বিলিয়ন ঘনমিটার নতুন এলএনজি আসবে।
ফাতিহ বিরল বলেন, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ মন্দার দ্বারপ্রান্তে থাকার কারণে এটি বিশেষ ঝুঁকির। যদি আমরা বিশ্ব মন্দার কথা বলি তাহলে আমি বলব ওপেকপ্লাসের তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত সত্যিকার অর্থে দুর্ভাগ্যজনক। কারণ বিশ্বে তেলের চাহিদা বেড়ে এই বছর ২ মিলিয়ন বিপিডির কাছাকাছি পৌছে গেছে।
বিরল আরও বলেন, আবহাওয়া যদি মৃদু থাকে তাহলে ইউরোপ হয়ত কোনোভাবে এই শীত পাড়ি দিতে পারবে। কিন্তু যদি তীব্র ও দীর্ঘ শীত হয় এবং যদি নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে বিস্ফোরণের মতো কিছু ঘটে, তাহলে ইউরোপকে এই শীতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
আইইএর প্রধান উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালে জ্বালানী তেলের ব্যবহার ১.৭ মিলিয়ন বিপিডি বাড়তে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এ কারণে বিশ্বের চাহিদা মেটাতে রাশিয়ার তেলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বিশ্ব কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?
মূলত ২০ শতকের জীবাশ্ম-জ্বালানি যুগে অনেক দর কষাকষি দেখা গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৩ সালে অনেক দেশ নতুন পদক্ষেপ নেবে। পদক্ষেপ মূলত নেওয়া শুরু হয়ে গেছে।
মূলত তীব্র জ্বালানি সংকটে বিদ্যুতের সরবরাহে টান পড়ায় এবং ভবিষ্যতে বিদ্যুতের মূল্য আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে নবায়নযোগ্য শক্তি।
সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির বাজারে যে অস্থিরতা ও সঙ্কট তৈরি হয়েছে, এই সঙ্কট মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক বিদ্যুতের লোডশেডিং ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে গোটা বিশ্ব বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন আর পরিবেশ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। একদিকে উন্নত বিশ্বের অবাধে কার্বন নির্গমন অব্যাহত আর অন্যদিকে দরিদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুর্ভোগ আর স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এসব কারণে বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে সময়োপযোগী একটি পরিবেশ বান্ধব শক্তি এবং কার্বন নিঃসরণ মুক্ত উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং একটি টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থায় পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদী দলগুলো নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের উপর উৎসাহ ও জোর দিয়ে আসছে।
আসলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এমন এক শক্তির উৎস, যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবং শক্তির উৎসটি নিঃশেষ হয়ে যায় না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমন- সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ু প্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈব শক্তি (বায়োগ্যাস, বায়োম্যাস, বায়োফুয়েল), ভূ-তাপ, সমুদ্র তরঙ্গ, সমুদ্র-তাপ, জোয়ার-ভাটা, শহুরে আবর্জনা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। সভ্যতার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এতদিন ব্যবহার করে আসা জীবাশ্ম জ্বালানির বিপরীতে নবায়নযোগ্য শক্তি বর্তমানে বিশ্বে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অধিকাংশ দেশ তাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।
ব্যাপকভাবে না হলেও বাংলাদেশ সৌরশক্তিকে ক্ষুদ্রভাবে কাজে লাগিয়েছে ইতোমধ্যে, যা ‘সোলার প্ল্যান্ট’ নামে পরিচিত। সোলার প্ল্যান্ট ব্যবহারে সফলতাও এসেছে ব্যাপক। দুর্গম অঞ্চলে পাহাড় কিংবা চরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে সোলার প্ল্যান্ট। ভারতেও সোলার প্ল্যান্ট ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সোলার প্ল্যান্টের অবস্থান ভারতেই। প্রায় ৬৪৮ মেগাওয়াট (কম-বেশি হতে পারে) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে ভারত।
অপর দিকে চীন শতাধিক কয়লাবিদ্যুৎ বন্ধ করে বায়ুবিদ্যুৎ ও প্রচুর সোলার প্ল্যান্ট কেন্দ্র চালু করেছে। বলা যায়, এ ক্ষেত্রে দুটি দেশ মোটামুটি সফলতা অর্জন করতে সক্ষমও হয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সোলার প্ল্যান্ট রয়েছে মরক্কোতে। তারা মরুভূমির বুকে বিশাল সোলার প্ল্যান্ট বসাতে সক্ষম হয়েছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে বিদ্যুৎ রপ্তানির পরিকল্পনা করছে মরক্কো।
আমরাও ইচ্ছা করলেই সোলার প্ল্যান্টের মতো অন্যান্য শক্তিগুলোকেও কাজে লাগাতে পারি। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা বায়ুপ্রবাহকে প্রাধান্য দিতে পারি। বিশ্বের কয়েকটি উন্নত রাষ্ট্রেও বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। যেমন-অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও ভারত বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী উন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশই এ পলিসি গ্রহণ করেছে এবং তা জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। কারণ, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এ ধরনের নিখাদ প্রযুক্তি দ্বিতীয়টি আর নেইও।
অপর দিকে, বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র বিশ্বের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেই ক্ষেত্র আছেও প্রচুর। যেহেতু বিশ্বের প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার মজুত ফুরিয়ে আসছে, তাতে করে দেশগুলো বায়ুশক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে পারে। এর ফলে পরিবেশ দূষণ থেকে যেমন রেহাই পাবে বিশ্ববাসী, তেমনি নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় দিকও আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭২৪ কিলোমিটার, যেখানে অনবরত বায়ুপ্রবাহ থাকে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ প্রবাহকে কাজে লাগাতে পারলে ২০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বায়ুপ্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো হচ্ছে-হাতিয়া, সন্দ্বীপ, মহেশখালী ও কতুবদিয়া। এ ছাড়া পদ্মা-মেঘনা-যুমনার চরে বায়ুকল স্থাপন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগে বায়ুপ্রবাহের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে হবে। অন্তত মাস তিনেকের বায়ুপ্রবাহের গতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, টারবাইন বসানোর উপযোগী কিনা। সরকার বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে অনেক আগেই। ইতোমধ্যে কক্সবাজার, ইনানি ও চাঁদপুরের কচুয়াতে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শুধু বায়ুপ্রবাহ নয়, সমুদ্রঢেউ, সমুদ্রের তাপ ও জোয়ার-ভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার সম্ভব। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জলপ্রবাহকে (কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ) কাজে লাগিয়েছেও। কাজে লাগিয়েছে বায়োগ্যাসকেও। এটিও বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। গ্রামাঞ্চলে এ গ্যাসের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। রান্নাবান্না এবং বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে ময়লা-আবর্জনা রিসাইকেল করে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন মিথেন গ্যাস উৎপন্ন না হয়, তাহলে আবার হিতে বিপরীত ঘটবে।
আরেকটি শক্তি পাওয়া যাচ্ছে জৈব জ্বালানি থেকে। সেটাকে পরিবেশবিদরা নিরুৎসাহিত করছেন বিভিন্ন কারণেই। এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে, দরিদ্র দেশের মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে জৈব জ্বালানি। জৈব জ্বালানি সম্পর্কে বলতে গেলে বিষয়টির সামান্য ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছি আমরা। জৈব জ্বালানি সম্পর্কে সর্বসাধারণের তেমন একটা ধারণা নেই। জৈব জ্বালানি বা ‘বায়োফুয়েল’ হচ্ছে এক ধরনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকটি চিন্তা করেই জৈব জ্বালানি সম্প্রসারণের সুপারিশ করেছিলেন একসময় পরিবেশবিদরা। সেই পরামর্শ থেকে পরবর্তীকালে সরে এসেছেন তারা।
জৈব জ্বালানি হলো ইথানল ও ডিজেলের সমন্বয়ে তৈরি নতুন ধরনের জ্বালানি, যার উপাদান চাল, ডাল, গম, ভুট্টা ও তেলবীজজাতীয় খাদ্যশস্য। এসব খাদ্যশস্যকে বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে জৈব জ্বালানি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর ভালো-মন্দ দুটিই বিদ্যমান রয়েছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় পরিলক্ষিত হচ্ছে জৈব জ্বালানির ব্যবহার হিতের চেয়ে ক্ষতিই বেশি বয়ে আনছে। এটি বর্তমানে শুধু উন্নত বিশ্বেই ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের অনুসরণ করেছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। তারা তাদের দেশে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ পামবীজ দিয়ে জৈব জ্বালানি প্রস্তুত করছে। যেহেতু আমাদের সে সামর্থ্য নেই, সে ক্ষেত্রে আমাদের জন্য বায়ুবিদ্যুৎ এবং সোলার প্ল্যান্টের ওপর প্রাধান্য দিতে হবে, তাতে জ্বালানি তেলের ওপর চাপ কমে যাবে, কমে আসবে লোডশেডিংয়ের মাত্রাও। এতে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি পরিবেশও দূষণমুক্ত থাকবে।
এসডব্লিউএসএস/২১১৫
আপনার মতামত জানানঃ