বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বৈদেশিক সরবরাহকারীদের বকেয়া পাওনা ৫০০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। বিপিসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই বৈশ্বিক সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধে হোঁচট খেল সংস্থাটি।
ডলার-সঙ্কট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ইন্টাররেট সংযোগ বন্ধ থাকা এবং আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট অচলাবস্থায় সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। এখনই এর প্রভাব দেখা না গেলেও দ্রুত পাওনা পরিশোধ করতে না পারলে দেশের জ্বালানিতেলের সাপ্লাই চেইন বিঘি্নত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সূত্র।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ৫৯ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানিতেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ৩০ লাখ ৮০ মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানিতেল জি-টু-জি চুক্তির আওতায় এবং ২৮ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানিতেল উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা হবে।
এর বাইরে ১৪ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানিতেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিপিসি। পরিশোধিত জ্বালানিতেলের মধ্যে ডিজেল, মোগ্যাস, জেট এ-১, ফার্নেস অয়েল এবং মেরিন ফুয়েল অন্যতম।
এর মধ্যে জি-টু-জির (সরকারের সাথে সরকারের চুক্তি) আওতায় আমদানি হয় অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেক আমদানি হয় আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে। বর্তমানে পেটকো ট্রেডিং লাবুয়ান কোম্পানি লিমিটেড (পিটিএলসিএল)-মালয়েশিয়া, পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড- চায়না, এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (ইএনওসি)-ইউএই, ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড -চায়না, পিটি ভূমি ছিয়াক পোছাকো (বিএসপি) ইন্দোনেশিয়া, পিটিটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেড, থাইল্যান্ড, নুমালিগার রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল)-ইন্ডিয়া; ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড সিঙ্গাপুর, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল) ইন্ডিয়ার মাধ্যমে জি-টু-জি’র আওতায় পরিশোধিত জ্বালানিতেল আমদানি হয়ে থাকে।
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, প্রতি মাসে প্রতিটি জাহাজে প্রায় ৩০ হাজার (কম/বেশি ১০%) মেট্রিক টন জ্বালানিতেল বোঝাই ১৫/১৬টি জাহাজযোগে পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করা হয়। প্রতিটি জাহাজে করে আসা পরিশোধিত জ্বালানিতেলের মূল্য প্রায় ২৫/২৬ মিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে প্রতি মাসে দেশে জ্বালানিতেল আমদানি হয় ৩৭৫-৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের। এ ছাড়া প্রতি মাসে একলাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত (ক্রুড) জ্বালানিতেল আমদানি হয় উল্লেখ করে সূত্র জানায়, সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি (সৌদি আরামকো) থেকে অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড অয়েল (এএলসি) এবং আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডনক) থেকে মারবান ক্রুড অয়েল আমদানি করা হয়।
সূত্র জানায়, দেশে এখন পর্যন্ত জ্বালানি আমদানি, মজুদ, পরিবহন ঠিক থাকলেও বিদেশী সরবরাহকারীদের পাওনা মূল্য পরিশোধ করা যায়নি। এতদিন বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া ২০০ মিলিয়ন ডলারে সীমাবদ্ধ থাকলেও এই কয়দিনে তা ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে বিপিসি’র চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিতে সেলফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও অপর প্রান্ত থেকে সাড়া মেলেনি।
আপনার মতামত জানানঃ