রেজিস্ট্রি অফিসের সহায়তায় হোমল্যান্ড রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ফ্ল্যাট ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফ্ল্যাটের কাগজপত্র ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ নেন হোমল্যান্ড রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এবং একই ফ্ল্যাট বিক্রি করে ক্রেতাদের কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে দলিল করে দেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই দলিল পেলেন কোথায়? ক্রেতাদের অভিযোগ, ফ্ল্যাট ও জমির মূল কাগজপত্র ব্যাংকে জমা রেখে ক্রেতাদের ভুয়া দলিল দিয়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি। ভুয়া দলিল করতে সহায়তা করেছেন রেজিস্ট্রি অফিস।
জানা যায়, হোমল্যান্ড রিয়েল এস্টেট লিমিটেড-এর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ক্রেতারা রাজধানীর রামপুরা থানার বনশ্রী সোসাইটির ৩২টি বাড়ির ৭৬টি ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ করেন। কোম্পানিটি ফ্ল্যাটগুলো ক্রেতাদের রেজিস্ট্রি করেও দেন। ক্রেতারাও যার যার ফ্ল্যাট বুঝে নিয়ে উঠে পড়েন এবং বসবাস করতে থাকেন। আর তখনি তাদের দরোজায় কড়া নাড়ে ব্যাংক নোটিশ। যেখানে বলা হয়েছে ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে তারা গৃহঋণ নিয়েছেন। অথচ ফ্ল্যাট ক্রেতারা ফ্ল্যাটের দলিল দিয়ে ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেননি। নোটিশে জানানো হয়, যিনি ঋণ নিয়েছেন তিনি টাকা পরিশোধ করছেন না অর্থাৎ ঋণখেলাপি। ব্যাংক বাড়িতে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয় এবং অর্থঋণ আদালতে মামলাও করে। পরে আদালত ফ্ল্যাটগুলো নিলামে বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করার রায় দিয়ে দেন।
ক্রেতাদের দাবি, ফ্ল্যাটের ভুয়া রেজিস্ট্রেশন দেখিয়ে তাদের কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হোমল্যান্ড রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। আবার ব্যাংক থেকে লোনও নিয়েছে। জীবনের যাবতীয় সঞ্চয় বিনিয়োগ করে এসব মানুষ এখন মারাত্মক বিপাকে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেও পাচ্ছেন না প্রতিকার।
ফ্ল্যাট ক্রেতা একজন বলেন, “ফ্ল্যাটের মূল দলিল ব্যাংকে জমা দিয়েই ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। এরপর রেজিস্ট্রি অফিস ‘ম্যানেজ’ করে আমাদের ফ্ল্যাটের নিবন্ধন করিয়েছেন। আইনত রেজিস্ট্রি অফিস তা করতে পারে না।”
আরেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, ‘একই ফ্ল্যাটের দুই সেট কাগজপত্র করে ব্যাংক ও আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ফ্ল্যাট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি। এর সঙ্গে রেজিস্ট্রি অফিসও জড়িত থাকতে পারে। তা না হলে কীভাবে আমাদের দলিল দিলো? হয়তো আমাদের ভুয়া রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে। নয়তো ব্যাংকে জাল কাগজ দিয়েছে।’
হোমল্যান্ড রিয়েল এস্টেট লিমিটেড মালিক নুরুল কবীর নিজেও বনশ্রী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক। তার কম্পানি এই সোসাইটিতে অনেক ভবন নির্মাণ করেছে। সবকটিতেই ফ্ল্যাট বিক্রির ক্ষেত্রে এমন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফ্ল্যাট বিক্রি করে ক্রেতাদের কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে দলিল করে দিয়েছে। আবার সেই ফ্ল্যাটের কাগজপত্র বন্ধক রেখে ব্যাংকঋণ নিয়েছে। যা দেশের প্রচলিত আইনে অবৈধ। তারা মনে করেন, রেজিস্ট্রি অফিসের সহায়তায় কম্পানিটির এতো বড় জালিয়াতি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় প্রমাণ করছে দেশে কতটা অরাজকতা চলছে। আর এই জালিয়াতিতে রেজিস্ট্রি অফিসের কারা কারা জড়িত ছিলো এই বিষয়েও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কম্পানিটির জালিয়াতির বিষয়টি অমিমাংশিত রেখে ফ্ল্যাট নিলামে উঠানোর প্রক্রিয়াতে ক্রেতাদের আরো ভোগান্তি বাড়বে। তারা মনে করেন, জালিয়াতির ব্যাপারটা সুরাহা করে ব্যাংকের ঋণখেলাপি মামলার রায় দেওয়া হলে এতে সৃষ্ট সমস্যার অনেকটাই সমাধান চলে আসতে পারে। একই সাথে হোমল্যান্ড রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এবং রেজিস্ট্রি অফিসকে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান তারা।
এসডাব্লিউ/বিটি/কেএইচ/১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ