গর্ভধারণ হবে। বেড়ে উঠবে শিশু। কিন্তু মায়ের পেটে নয়। একটি স্বয়ংক্রিয় আধুনিক গবেষণাগারে বেড়ে উঠবে শিশু। এখানেই শেষ নয়, সেই শিশুর চোখের মণি কেমন হবে? বুদ্ধাঙ্ক কেমন হবে? সব কিছুই হবে পিতা-মাতার ইচ্ছেমতো। কারণ সেভাবেই তৈরি করা যাবে সদ্যোজাতকে।
সম্প্রতি ৮.৩৯ মিনিটের এক অ্যানিমেশন ভিডিওতে এমন দাবিই করলেন বার্লিনভিত্তিক ইয়েমেনের বিজ্ঞানী ও কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্র নির্মাতা মলিকিউলার বায়োটেকনোলজিস্ট হাশেম আল-ঘাইলি। ইকোনমিক টাইমস, জিও টিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা।
ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, বিশাল এক গবেষণাগার। তাতে পাশাপাশি বসানো রয়েছে হাজার হাজার কাচের গোলকের মতো কিছু যন্ত্র। আর তারই ভেতরে তৈরি হচ্ছে মানবশিশু। বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম প্রজনন কারখানা। হাসেম তার কল্পনাপ্রসূত এই গবেষণাগারটির নাম রেখেছেন এক্টোলাইফ।
এই গবেষণাগারে থাকবে মোট ৭৫টি কক্ষ। প্রতিটি কক্ষে থাকবে ৪০০টি কৃত্রিম গর্ভ বা বেবি পড বা গ্রোথ পড। অর্থাৎ সব মিলিয়ে গবেষণাগারে একই সঙ্গে ৩০ হাজার শিশুর জন্ম দেওয়া সম্ভব হবে। ৭৫টির বেশি ল্যাবরেটরিতে চার শতাধিক কৃত্রিম গর্ভ বা বেবি পড বা গ্রোথ পড থাকবে। গোল গোল কাচের বাক্সের মতো যন্ত্রই হলো সেই গর্ভ যেখানে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হবে। বাক্সগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
অপ্রচলিত শক্তি বা সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি থেকে তৈরি বিদ্যুতে পাওয়ার সাপ্লাই হবে বাক্সে। কাজেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যে কাচের গোলকের মতো জিনিস ভিডিওতে দেখা গেছে, সেগুলোই হলো কৃত্রিম গর্ভ বা গ্রোথ পড। এই কৃত্রিম গর্ভের ভেতর আইভিএফ পদ্ধতিতে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে তৈরি করা হবে ভ্রূণ। সেই ভ্রূণ বড় হয়ে উঠবে এরই ভেতরে। জন্মের আগ পর্যন্ত শিশুর রক্তচাপ থেকে হৃদস্পন্দন, সবই মাপা যাবে এই যন্ত্রে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে ৩ লক্ষ মহিলা গর্ভাবস্থায় কোনও না কোনও স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য প্রাণ হারান। বর্তমানে এমন অনেক নারী ও পুরুষ রয়েছেন যাঁরা চেয়েও সন্তানের জন্ম দিতে পারেন না। এর নেপথ্যে থাকতে পারে কোনও শারীরিক সমস্যা বা অন্য কোনও কারণ।
তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে এক্টোলাইফ বলে একটি সংস্থা। সন্তানহীন মানুষকে সন্তান দিতে বিশ্বের প্রথম ‘সন্তানের কারখানা’ তৈরি করতে চলেছে তারা। এই কারখানায় থাকবে একাধিক কৃত্রিম গর্ভ। সেখান থেকে প্রতি বছরে ৩০ হাজার সন্তানের জন্ম দেওয়া যাবে।
এক্টোলাইফের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কারখানায় তৈরি সন্তানরা দেখতে কেমন হবে বা তাদের বুদ্ধি কতটা থাকবে, সবই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন মা-বাবারা। চমকপ্রদ কথা জানিয়েছেন তাঁরা। কৃত্রিম ভাবে তৈরি বাচ্চাদের জিনে বদল আনা যাবে।এর মাধ্যমে তার চুল ও চোখের রং, উচ্চতা, গায়ের রং ও বুদ্ধিতে বদল আনা যাবে।
৩০০টিরও বেশি ধরনের জিনের বিকল্প দেওয়া হবে বাবা মায়েদের। এক্টোলাইফের বিজ্ঞানী হাসিম আল ঘায়েলি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম ভ্রুণ কেন্দ্রটিকে দেখানো হয়েছে সেখানে। এছাড়াও কৃত্রিম ভাবে একটি সন্তানের জন্মও দেখানোভয়েছে।
জানা গিয়েছে, কৃত্রিম গর্ভের সঙ্গে আসল গর্ভের কোনও পার্থক্যই নেই। এমন প্রযুক্তি এলে স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই সংস্থা জানিয়েছে, এটি আসল মায়ের গর্ভের মতোই নিরাপদ।
জন্মের প্রক্রিয়ার সময়ে সন্তানের খাওয়ার অভ্যেস ও রোগের খেয়াল রাখা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থা। গ্রোথ পডে বাচ্চাদের হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার এবং অক্সিজেনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রতিটি পড একটি পর্দার সাথে সংযুক্ত থাকে যেখানে যেকোনো পিতামাতা তাদের সন্তানের বিকাশ সরাসরি দেখতে পারবেন।
এই মুহূর্তে বিশ্বের অনেক দেশেই জনসংখ্যা হ্রাসের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই কৃত্রিম গর্ভের মাধ্যমে সেই সমস্ত দেশের জনসংখ্যা জনিত সমস্যার সমাধান করতে চাইছে এক্টোলাইফ। তাদের প্রকাশিত ভিডিওতে তারা জানিয়েছে, এই কারখানা পুরোপুরি ভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি চালিত হবে। এক একটি গবেষণাগারে বিপুল সংখ্যক গ্রোথ পড থাকবে। সেখানে জন্ম নেবে সন্তানরা।
এসডব্লিউএসএস/১৫৩০
আপনার মতামত জানানঃ