চলতি আমন মৌসুমে আড়তদার-মিলাররা ‘কারসাজি করে’ চালের দাম বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তবে কৃষিখাত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষি ও পণ্যবাজারে সিন্ডিকেট ও কারসাজির কথা সবাই জানে। নতুন করে মন্ত্রীর এখানে যা বলার ছিল তা হলো, অপরাধীদের বিরুদ্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা। চালের সিন্ডিকেটে যারা আছে, তাদের বিচারের আওতায় না আনা হলে কোনো পদক্ষেপই কাজে আসবে না।
২৭ ডিসেম্বর ২০২০, গতকাল রবিবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রী বলেন, দেশের মিলার, আড়তদার, জোতদার, যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, তারাই চালের দাম বাড়ায়। এবারও তারা সেই কাজ করছে। তারা এখনো ধান কিনছে। আর ধান ও চালের দাম দুটোই বাড়িয়ে দিয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, ঘাটতি পূরণে সরকার ৫-৬ লাখ টন চাল আমদানির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি গুদামে চালের মজুদ কমেছে। গত বছর প্রায় ১৩ লাখ টন খাদ্য ছিল। এ বছর সেটা নেমেছে ৭ লাখ টনে।
এখন আমনের ভরা মৌসুম চললেও ধান ও চাল দুটোরই দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর ইরি বা স্বর্ণার মতো মোটা চালের দাম ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। মাঝারি মানের চাল পাইজাম বা লতার দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে চাল আমদানির সুযোগ তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করা যাবে। বেসরকারি খাতকেও সেই সুযোগ দেওয়া হবে। বেসরকারি খাত ও সরকার ৫-৬ লাখ টন চাল আনতে পারবে। ৬ লাখ টনের এলসি দেওয়ার পর আর এলসির সুযোগ দেওয়া হবে না। তবে ভারতের বাজারেও এর মধ্যে চালের দাম বেড়েছে।
চাল আমদানিতে শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার কথা গতকাল জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। এর সঙ্গে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ‘সর্বাত্মক উদ্যোগ’ গ্রহণ করেছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, অতটা চালের ঘাটতি আমাদের নেই। কিন্তু এই সুযোগে মিলাররা নানা রকম কারসাজি করে চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। চাল আমদানিতে আমার মনে হয় না খুব অসুবিধা হবে। কারসাজি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কৃষিমন্ত্রী আরো জানান, ইতিমধ্যে চাল আসা শুরু হয়েছে। ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারিভাবে চুক্তি হয়েছে। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম থেকেও চাল আনার চেষ্টা করা হবে। চালের ঘাটতি পূরণে সব মিলিয়ে সরকারের পূর্ণ উদ্যোগ ও প্রস্তুতি রয়েছে। সরকারের ওএমএস কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। দেশের বাইরে থেকে আসতে শুরু করায় চাল নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় মধ্যে চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন কৃষিমন্ত্রী।
এবার আমন উৎপাদন কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বন্যায় ১ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এ হিসাবে ১৫-২০ লাখ টন ধান কম হয়েছে। এসব কারণে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ঘাটতি মেটাতে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো চাষ করা হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান হবে। এটা মোটা চাল হলেও এর জন্য প্রণোদনা ও বীজ দেওয়া হয়েছে। বোরোতে আমরা ভালো করব যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়।
তবে কৃষিমন্ত্রী নানা নিদানের কথা বললেও সিডিকেটে জড়িতদের বিচার ও শাস্তির মুখোমুখি করতে বাধা কোথায়, সে বিষয়ে কিছু বলেননি। ক্ষেতমজুর ও কৃষক আন্দোলনের নেতারা বরাবরই দাবি করে আসছেন, সিন্ডিকেটে জড়িতদের বিচারে মুখোমুখি করা না গেলে কৃষির বিকাশ নিশ্চিত করা যাবে না, প্রতিষ্ঠা করা যাবে না কৃষকের অধিকারও। কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব ছিল এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অবস্থান নেয়া। শুধু কারসাজির অভিযোগ তোলা নয়, বরং মন্ত্রীর কাজ হলো এই কারসাজিতে লিপ্ত অপরাধীদের শাস্তি দেয়া।
গোপালগঞ্জ জেলায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পূর্তকাজের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসডাব্লিউ/ডিআর/আরা/১৩৪০
আপনার মতামত জানানঃ