যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি আরো কমেছে। যদিও একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি বাজার এই দেশটি। মূলত করোনার ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের আমদানি কমে গেছে ব্যাপক হারে। তবে প্রায় সব দেশের রফতানি কমলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ একটু বেশিই পিছিয়ে পড়েছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভিয়েতনাম থেকে বাংলাদেশ পেছনেই রয়েছে। উন্নতির হার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার মতো দেশের উন্নতির হার অনেক বেশি ভালো।
যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (ওটেক্সা) এর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে পোশাক আমদানি কমেছে ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০১৯ সালের প্রথম ১০ মাসে দেশটি ৭ হাজার ২৪৯ কোটি ডলারের পোশাক কিনলেও এবার তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৯৫ কোটি ডলারে। মূলত করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় সার্বিকভাবে চাহিদা কমায় দেশটির পোশাক আমদানি এত বেশি হারে কমেছে।
করোনার প্রভাবে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ওটেক্সটার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশটিতে শীর্ষ ১০ রফতানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো করেছে প্রতিযোগী কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান। এর মধ্যে ভিয়েতনামের রফতানি কমেছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানের ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তবে অন্য সব দেশের রফতানি কমলেও উল্টো বেড়েছে কম্বোডিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে অন্য দেশগুলোর রফতানি কমার হার বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে চীন থেকে, প্রায় ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। যদিও চীন থেকে পোশাক আমদানি কমার পেছনে করোনার পাশাপাশি বাণিজ্যযুদ্ধও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তৈরি পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইউরোপের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সাধারণ মানের এবং কম দামের পোশাক বেশি রফতানি হয়ে আসছিল। করোনায় মানুষের আয় কমে যাওয়া এবং উচ্চমূল্যের পোশাকের ব্যবহার কম হওয়ায় সাধারণ মানের পোশাকের চাহিদা খুব কমেনি। এ কারণে সেখানে তুলনামূলক ভালো করেছে। তবে বিভিন্ন সুবিধার কারণে প্রতিযোগী দেশগুলো আরও ভালো করছে।
তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনা ছাড়াও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সেখান থেকে পোশাক কম নেওয়ার সুযোগ কিছুটা বাংলাদেশ পেয়েছে। তবে এই সুবিধার বেশিভাগই গিয়েছে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার পকেটে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান এবং মিয়ানমারও পেয়েছে। এসব দেশের নিজস্ব গভীর সমুদ্রবন্দর থাকায় তারা লিড টাইমে (ক্রয়াদেশ নেওয়ার পর পণ্য জাহাজীকরণ পর্যন্ত সময়) আমাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ পোশাক রফতানিকারক দেশের তালিকায় (পরিমাণে) এখনো শীর্ষে চীন। এরপর রয়েছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া। আলোচ্য ১০ দেশের মধ্যে ৯টিরই রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমে গেছে।
চীনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি আয় হারিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, ভারতের ২৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, মেক্সিকোর ৩২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, হন্ডুরাসের ৩৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও কোরিয়ার ২৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
ওটেক্সার হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমেছে ৫৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের আলোচ্য সময়ে দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল ৫০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের, যা চলতি বছরের একই সময়ে নেমেছে ৪৪৯ কোটি ৫৭ লাখ ডলারে।
এদিকে করোনার প্রথম ধাক্কার পর গত জুলাই থেকে দেশটিতে পোশাক আমদানি বাড়তে থাকলেও দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে পোশাক রফতানিতে। এর ফলে ফের দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমে যাবে বলে রফতানিকারকরা মনে করছেন। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াও প্রলম্বিত হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশের ওভেন গার্মেন্টস খাতের রফতানি আয় কমেছে। আমেরিকার বাজারে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির কারণে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় খাতটির রফতানি আয় কমেছে ৩৯ কোটি ডলার বা ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে নিটওয়্যারে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি পাট ও পাটজাত পণ্য এবং হোম টেক্সটাইলের উল্লম্ফন সার্বিকভাবে রফতানি আয়ে সামান্য হলেও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশের রফতানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে।
এসডাব্লিউ/ডিআর/আরা/১২০০
আপনার মতামত জানানঃ